ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্য বন্ধে চকরিয়া কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন

এম.আর মাহমুদ ::

শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে মহৎ উদ্বেগ গ্রহণ করেছে চকরিয়ার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়। গত ৪ ও ৫ এপ্রিল ২ দিন ব্যাপী অভিভাবক, শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে মতবিনিময় সভায় অভিভাবক, শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির যৌথ সভায় বিদ্যালয়ের পড়ুয়া ১৩‘শ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মানোন্নয়নের স্বার্থে কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। এখন থেকে শিক্ষকরা শ্রেণি কক্ষেই শিক্ষার্থীদের মানসম্মত পাঠদান করার উদ্বেগ গ্রহণ করেছেন। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোযোগী করে তুলতে অভিভাবকদের সহায়তা কামনা করেছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মাস্টার সিরাজ আহমদ। সভায় অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম সাইফু, নাজেম উদ্দিন, জামাল উদ্দিন জয়নাল, কামাল হোছাইন, মাহবুবুল আলম ও ওয়াহিদুল ইসলাম। সভায় উপস্থিত অভিভাবকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, সাহারবিল আনোয়ারুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসার প্রভাষক আবদুর রহিম। তিনি শিক্ষার্থীদের মানসম্মত লেখাপড়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শিক্ষকরা আন্তরিক হলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মান পরিবর্তন হবে। এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে প্রতিষ্ঠানটি চকরিয়ায় আলোচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেছেন, অভিভাবকেরা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কঠোর না হলে শুধুমাত্র শিক্ষকদের পক্ষে লেখাপড়ার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা মানসম্মত পাঠদান করবে। অভিভাবকেরা বাড়ির লেখাপড়ার ক্ষেত্রে একটু সচেতন হলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের ভূমিকা কোন অংশেই কম নয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আলহাজ্ব মাস্টার সিরাজ আহমদ বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসম্মত লেখাপড়ায় শিক্ষকদের আন্তরিকতা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে স্কুল পরিচালনা কমিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ও মানসম্মত পাঠদানে সার্বিক সহায়তা দিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক বেতনে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিতেও কৃপণতা করবে না। এছাড়া দরিদ্র ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধরা রাখার জন্য সব ধরণের সহায়তা করার ঘোষণা দেন। তিনি অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, শিক্ষার্থী নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছে কিনা। বিদ্যালয় থেকে বাড়ি যাওয়ার পর বিদ্যালয়ে যে পাঠদান করেছে তা যথাযথভাবে পড়ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব অভিভাবকের রয়েছে। একজন অভিভাবক সচেতন হলে শিক্ষার্থী কোনদিন শিক্ষাক্ষেত্রে অমনোযোগী হতে পারে না। মতবিনিময় সভায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান মোহাম্মদুল হক অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটি আশ্বস্থ করেছেন, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি নিজস্ব ধারায় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত পাঠদানের মাধ্যমে ইতিমধ্যে উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে খ্যাতি অর্জন করেছেন। এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির সহায়তা কামনা করেছেন। মতবিনিময় সভায় তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, এ বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষক প্রাইভেট বাণিজ্যে জড়াবে না এবং কোন ধরণের কোচিং হবে না। শ্রেণিকক্ষেই যে পাঠদান হবে তা-ই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শ্রেণিকক্ষেই আদায় করে নেয়া হবে। এলাকা শিক্ষা সচেতন অভিভাবক মহলের অর্ভিমত, এ ধরণের উদ্বেগ চকরিয়ার সবক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু করা হলে শিক্ষার্থীরা সত্যিকার অর্থে উপকৃত হবে।

লেখক: মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, সাংবাদিক ও কলাশিষ্ট

পাঠকের মতামত: