ঢাকা,শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে তিনজনের নাম জমে উঠেছে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবার দেশব্যাপী আলোচনায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ইতিমধ্যে নির্বানের তফসিলও  ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক এ ইঙ্গিতের পর সারাদেশের মতো কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় পরিলক্ষিত হচ্ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আমেজ। তৃনমুল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে তাদের সিদ্বান্ত মতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধি তিনজনের নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ বরাবরে পাঠিয়েছে উপজেলা আওয়ামীলীগ।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম বিপুল ভোটে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি উপজেলা চেয়াম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় শূন্য হয়ে যায় উপজেলা চেয়ারম্যানের পদটি। আগামী নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে জিতে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদে আসীন হতে প্রস্তুতি নিয়েছেন জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রথম সারির একাধিক নেতা। মনোনয়ন পেতে দলীয় হাইকমান্ডে দৌড়ঝাপও শুরু করেছেন তারা। নিজের পক্ষে সমর্থন আদায় ও দোয়া চেয়ে মাঠে তাঁরা ভোটারদের মন জয়ের চেষ্ঠা করছেন। প্রতিদিনই নেতাকর্মীদের নিয়ে গনসংযোগ ও কুশল বিনিময় করছেন সম্ভাব্য এসব প্রার্থীরা।
এবারের চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগে নতুন মুখের ছড়াছড়ি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে অন্তত দশজন প্রার্থীর নাম। তবে শেষ পর্যন্ত তৃণমুলের সিদ্বান্তে তিনজন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারী চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ, মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানা আওয়ামীলীগ ও পৌরসভা আওয়ামীলীগের তৃণমুলের নেতাকর্মীদের নিয়ে এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাংসদ জাফর আলম। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও। সভায় ৮জন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী উপস্থিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনজনের নাম জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাছে পাঠানোর সিদ্বান্ত হয়। চুড়ান্ত  তালিকায় চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শ্রমিক নেতা ফজলুল করিম সাঈদীর নাম পাঠানো হয় জেলা ও দলীয় হাইকমান্ডের কাছে।
এ তালিকায় প্রথমস্থানে থাকা চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন চৌধূরী ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন থেকে পরপর তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নিয়ে গঠিত চকরিয়া উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এছাড়াও গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, আহবায়ক পূনরায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘ ২৫বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে হেভিয়েট প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন তিনি। গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী তৃণমুল নেতাকর্মীর কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি নাম। বিএনপি-জোট সরকারে আমলে মামলা হামলা ও নির্যাতনের শিকার হন তিনি। ওই সময় তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি।
দলীয় হাই কমান্ডের কাছে পাঠানো তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চকরিয়া উপজেলার ৭নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পরে সকল সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে তিনি জেলা পরিষদের এক নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। তিনি পৌরসভার কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র ছিলেন। ২০১৬ সালে চকরিয়া পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন জাহেদুল ইসলাম লিটু।
তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী দুইবার চকরিয়া পৌরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। ২০১৬ সালে পৌরসভার মেয়র পদে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তিনি। কিন্তু ওইসময় চকরিয়া উপজেলা ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতাদের অনুরোধে দল মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলমগীর চৌধুরীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান ফজলুল করিম সাঈদী।  তৃনমুলে তার যেমন জনপ্রিয়তা আছে, তেমনি আওয়ামীলীগের সকলস্তরের নেতাকর্মীদের কাছে তিনি আস্থাভাজন একজন ত্যাগি নেতা নেতা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। সাঈদীর বাড়ি চকরিয়া পেৌর সদরের ২নং ওয়ার্ডের জনতা মার্কেট এলাকায় হওয়ার সুবাধে আ.লীগের দু:সময়ে তৃণমুলের সাহসী নেতা-কর্মীদের নিয়ে সব সময় রাজপথেই আনন্দোলনের সাথী ছিলেন। দু:সময়ের সাঈদীর ছিলেন পেৌর সদরের সাধারণ নেতা-কর্মীদের একমাত্র কান্ডারী। তাই চকরিয়া উপজেলার চেয়ারম্যানের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ পথটি তিনিই পাওয়ার উপযুক্ত বলে দলীয় নেতা-কর্মীরা দাবী করেছেন।
জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক সকলেই এবার রাজনীতির মাঠের পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়েছেন। তাঁরা দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একাদশ নির্বাচনে চকরিয়া-পেকুয়া আসনে নৌকার বিজয় ঘরে তুলতে আওয়ামীলীগের প্রার্থী জাফর আলমের পক্ষে দিনরাত কাজ করেছেন। নেতাকর্মীদের একাট্টতায় স্বাধীনতার ৪৫বছর পর এ আসনে বিজয়ের মুখ দেখেছে আওয়ামীলীগ। দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিজয় যে নিশ্চিত তা প্রমাণ করেছেন নেতাকর্মীরা।তিনিই সবসময় রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন।
এছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, মাতামুহুরী সাংগঠনিক থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাহারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সাংস্কৃতিক কর্মী আমিনুর রশিদ দুলাল ও আওয়ামীলীগ নেতা সেলিম উল্লাহ।
তৃনমুল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের দাবি, এবারের উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুঃসময়ে আওয়ামীলীগের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন,রাজপথে আন্দোলন  সংগ্রামে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন, জনগনের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে এ ধরণের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হোক। যারা দলের এবং বিভিন্নভাবে দায়িত্ব থেকে সুফল পেয়েছেন তাদের বদলে যারা দীর্ঘদিন ধরে দলের কাছে বঞ্চিত হয়েছেন তাদেরকে মুল্যায়ন করা হোক।

পাঠকের মতামত: