মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, কুতুবদিয়া থেকে ফিরে :::
কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলায় সম্প্রতি জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ দ্বীপবাসীদের মাঝে বিতরনের জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দ দেওয়া ৫৪ মে. টন খাদ্য শষ্য (গম) বিতরণ না করেই প্রকল্প কর্মকর্তার সহায়তায় খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা কক্সবাজার শহরের এক ডিলারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে পুরো কুতুবদিয়াজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনা কুতুবদিয়ায় চাউর হয়ে গেলে গত এক সপ্তাহ ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে বহুল আলোচিত কুতুবদিয়া খাদ্য গুদামের ইনচার্জ পলাশ পাল। এদিকে ত্রাণের খাদ্যশষ্য লোপাটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দূর্নীতি দমন কমিশন ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে গত ৪ জুলাই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় সংবাদকর্মী মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।
জানা গেছে, গত ৩০/০৫/২০১৭ইংরেজী তারিখে ঘূর্ণিঝড়ে মোরা কুতুবদিয়া দ্বীপে ব্যাপক আঘাত হানে। এরপর সরকারের ত্রাণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে কুতুবদিয়া দ্বীপের ৭০ মে: টন খাদ্যশষ্য বরাদ্দ দেয়। ৭০ টন খাদ্য শষ্যের মধ্যে ৫৪ মে:টন খাদ্য শষ্য বিতরণ না করেই আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ৫৪ মে:টন খাদ্যশষ্যের আজগুবি মাষ্টার রোল দেখানো হয়। আর এসব খাদ্য শষ্য কক্সবাজার সদর খাদ্য গুদাম থেকে কুতুবদিয়া নেওয়ার কথা বলে কক্সবাজারেই বিক্রি করে দিয়েছেন পরিবহন ঠিকাদার সেলিম রেজা। তবে সেলিম রেজা জানান, তিনি গত ২৮ জুন এসব খাদ্য শষ্য কুতুবদিয়া খাদ্য গুদামে পৌঁছে দিয়েছেন। খাদ্য গুদামে পৌঁছে দেওয়া হলেও এসব খাদ্য শষ্য গুদামে রক্ষিত নাই বা বিতরণও করা হয়নি।
সরজেমিনেও পরিবহন ঠিকাদার সেলিম রেজার বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি। অভিযোগ উঠেছে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কুতুবদিয়ার খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা পলাশ পাল এসব খাদ্য শষ্য গুদামে বুঝে পেয়েছেন এবং ডেলিভারী দিয়েছেন মর্মে ভূঁয়া কাগজপত্রও তৈরী করেছেন। এ ঘটনায় পুরো কুতুবদিয়াজুড়ে ঘূর্ণিঝড় মোরায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মোরায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে বিতরণের জন্য জেনারেল রিলিফ (জিআর) এর আওতায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে কয়েক দফায় কুতুবদিয়া উপজেলায় ৭০ মে:টন খাদ্য শষ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যে বিতরণ না করেই ভূঁয়া মাষ্টার রোল দেখিয়ে ৫৪ মে:টর খাদ্যশষ্য আত্মসাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রিলিফের এসব খাদ্যশষ্য বিক্রির কোন নিয়ম না থাকলেওকুতুবদিয়া খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা পলাশ পাল প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সহায়তায় কক্সবাজার শহরেই বিক্রি করে দিয়ো নজিরবিহীন দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও এসব খাদ্য শষ্য কক্সবাজার সদর খাদ্য গুদাম থেকে কুতুবদিয়া খাদ্যগুদামেও নেওয়া হয়নি। গত মাসের শেষের দিকে ও চলতি মাসের শুরু কুতুবদিয়ার জন্য বরাদ্দের খাদ্য শষ্য দফায় দফায় নৌপথে কুতুবদিয়া নেওয়ার জন্য বের করা হলেও তা কক্সবাজার শহরেই বিক্রি করে দিয়েছেন পরিবহন ঠিকাদার সেলিম রেজা সিন্ডিকেট।
অপরদিকে খাদ্য শষ্য বুঝে পেয়েছেন এবং তা কুতুবদিয়ার জিআর খাতে সরবরাহ দিয়েছেন মর্মে ভূঁয়া কাগজপত্র তৈরী করেছেন কুতুবদিয়ার খাদ্য গুদাম কর্মকর্ত পলাশ পাল! পরিবহন টিকাদার সেলিম রেজা ও পলাশ পালের সিন্ডিকেট সরকারী ত্রাণের এসব খাদ্য শষ্য আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে ৫৪ মে:টন চাল কক্সবাজার সদর খাদ্য গুদাম থেকে নৌপথে কুতুবদিয়া খাদ্য গুদামে নিতে পরিবহন ব্যয় দেখিয়ে বিল তৈরী করে মোটা অংকের টাকাও মেরে দিয়েছেন উক্ত সিন্ডিকেট।
কুতুবদিয়ার একাধিক সচেতন বাসিন্দা ও কয়েকজন চাল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন‘সরকারী বরাদ্দের বিভিন্ন খাদ্য শষ্য বিক্রি হলে আমরা ন্যায্য মূল্যে ক্রয় করে কুতুবদিয়াতেই বিক্রি করি। একই ভাবে ৫৪ মে:টন জিআরের খাদ্য শষ্য বিক্রির প্রস্তাব করা হলে তা আমরা ক্রয় করব বলে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু এসব চাল কুতুবদিয়া না এনে কক্সবাজারেই কালোবাজারে কেন বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে সেটার জবাব আমরা চাই।
কুতুবদিয়ার কয়েকজন সচেতন বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কুতুবদিয়া উপজেলার জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দের খাধ্য শষ্য কুতুবদিয়ার মানুষের প্রাপ্যের অধিকার রয়েছে। কিন্তু এসব খাদ্য শষ্য কুতুবদিয়া না এনে কক্সবাজার শহরে বিক্রি করে দিয়ে দ্বীপবাসীকে বারবার বঞ্চিত করা হচ্ছে।
কুতুবদিয়া দ্বীপের একাধিক সূত্র এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে যে, ৫৪ মে:টন খাদ্য শস্য কুতুবদিয়ায় বিতরণ না করলেও বিতরণ করা হয়েছে মর্মে যাবতীয় ভূঁয়া মাষ্টার রোলের কাগজপত্র তৈরী করা হচ্ছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী জানান, কি পরিমাণ খাদ্য শষ্য বরাদ্দ করা হয়েছে সেটা আমার জানা নাই। এ বিষয়ে কুতুবদিয়ার ইউএনও ও পিআইও ভাল বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবহণ ঠিকাদার সেলিম রেজা বলেন, আমি গত ২৮ জুন ৫৪ টন খাদ্য শষ্য কুতুবদিয়া খাদ্য গুদামে পৌঁছে দিয়েছি। আমি এর বাইরে কিছুই জানিনা।
কুতুবদিয়ার খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা পলাশ পালের সাথে এ প্রতিবেদক মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ৭০ মে:টন খাদ্য শষ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এরমধ্যে ৫৪ মে:টনের মতো ডেলিভারী দেওয়া হয়েছে। ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করায় বাকী খাদ্য শষ্য এখনো নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। কুতুবদিয়ার জন্য বরাদ্দের খাদ্য শষ্য কক্সবাজার শহরে বিক্রির প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি আর কথা না বলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
কুতুবদিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ জানান, এতো বরাদ্দের বিষয়টি আমার জানা নাই। মাত্র ২০ মে:টন বরাদ্দের বিষয়ে আমি জানি এবং এসব খাদ্য শাষ্য বিতরণের মাষ্টাররোলও রয়েছে।
কুতুবদিয়ার ইউএনও সুজন চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
পাঠকের মতামত: