গত ২১ মে সংগঠিত প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত দ্বীপ কুতুবদিয়া ও দ্বীপের জনগণের দুর্দশা তুলে ধরা এবং দ্বীপকে রক্ষার নিমিত্তে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা নিয়ে কক্সবাজারস্থ কুতুবদিয়া সমিতির পক্ষে গতকাল ৩১ মে সকাল ১১টায় কক্সবাজার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ১২০-১৩০ কিঃ মিঃ বেগে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে বিরান ভূমিতে পরিণত হওয়া কুতুবদিয়া দ্বীপের ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ এবং কুতুবদিয়া দ্বীপকে রক্ষা তথা দ্বীপের দেড় লক্ষাধিক জনসাধারণকে ভবিষ্যত ক্ষয়-ক্ষতি হতে রক্ষা করার নিমিত্তে নৌ-বাহিনীর তত্ত্বাবধানে সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচি ও কাবিটা কর্মসূচির আওতায় জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী বেড়ী বাধ নির্মাণ এবং সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে স্থায়ী বেড়ী বাধ নির্মাণের সুনির্দিষ্ট দাবি নিয়ে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন কক্সবাজারস্থ কুতুবদিয়া সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সিকদার এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সমিতির সভাপতি ও জাতীয় পার্টি কুতুবদিয়া উপজেলা সভাপতি আ.ন.ম.শহীদ উদ্দিন ছোটন।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারস্থ কুতুবদিয়া সমিতির প্রধান উপদেষ্টা আবু তাহের কুতুবী, উপদেষ্টা ডাঃ ইফতিখার উদ্দিন কুতুবী, আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ (কাউন্সিলর, কক্সবাজার পৌরসভা), শামসুল আলম বাহাদুর এবং আশরাফুল আলম। তাছাড়া সমিতির সহ-সভাপতি এম. আকতার কামাল (কাউন্সিলর, কক্সবাজার পৌরসভা), যুগ্ম সম্পাদক মোঃ ইসলাম নবী, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক উমর ফারুক দিনার, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহাদাত হোছাইন মুন্না, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ কুতুবী, দপ্তর সম্পাদক আবদুল গাফ্ফার কুতুবী, কার্যকরী কমিটি সদস্য এডভোকেট শেফাউল হক, এডভোকেট ফরিদ আহমদ, হাসানুর রশীদ (ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক হিমছড়ি), আতাউর রহমান কায়সার, মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ, সরওয়ার আলম এবং বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির সিনিয়র শিক্ষক আবুল কাসেম কুতুবী।
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির নেতৃবৃন্দ দ্বীপের ক্ষয়-ক্ষতির বর্ণনা দিয়ে জানান যে, ২১শে মে ২০১৬ তারিখ কুতুবদিয়া দ্বীপের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে কুতুবদিয়া দ্বীপ আজ বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। ৪ জন নিহত সহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে, ৪১ কিঃমিঃ বেড়িবাঁধের মধ্যে ১৮ কিঃ মিঃ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত এবং ১২ কিঃমিঃ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত, ১১ হাজার বাড়ী-ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত এবং ৪ হাজার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত, মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে ৫২টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত এবং ১১৫টি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ, প্রায় ৮০ কিঃ মিঃ পাকা রাস্তা এবং ৬৫ কিঃমিঃ কাচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, মারা গেছে ও পানিতে ভেসে গেছে ২ হাজারেরও অধিক গবাদী পশু এবং প্রায় ৪০ হাজার হাস-মুরগী, নষ্ট হয়েছে প্রায় ১ হাজার মেঃ টন লবণ, ৫০০ একর জমির শস্য ক্ষেত, ছোট-বড় প্রায় শতাধিক ফিশিং নৌকা ও লবণ নৌকা, লোনা পানির নীচে তলিয়ে গেছে প্রায় ১৮০০ পুকুর এবং পুকুরে থাকা মাছ। এতে আর্থিক হিসাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত কুতুবদিয়া দ্বীপ ও দ্বীপের জনগণ।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে কুতুবদিয়া দ্বীপকে রক্ষা তথা দ্বীপের দেড় লক্ষাধিক জনসাধারণকে ভবিষ্যত ক্ষয়-ক্ষতি হতে রক্ষা করার নিমিত্তে নৌ-বাহিনীর তত্ত্বাবধানে সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচি ও কাবিটা কর্মসূচির আওতায় জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের সুনির্দিষ্ট দাবিসহ কুতুবদিয়াকে দূর্গত এলাকা ঘোষণা করে চলমান ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রাখা, রমজানের পূর্বে জরুরিভাবে ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ মেরামত ও পূন:নির্মাণের মাধ্যমে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ও রোজা রাখার পরিবেশ তৈরী করা, ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ী-ঘর নির্মাণ ও পূনঃনির্মাণে সাহায্য করা, বিভিন্ন পেশার ক্ষতিগ্রস্ত বিশেষ করে মৎস্যজীবী, লবণচাষী ও কৃষকদের তাদের পেশা অব্যাহত রাখার জন্য সহায়তা প্রদান ও বিনা সুদে ঋণ প্রদান এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট পূননির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা পূনর্গঠন করার দাবি জানানো হয়। তাছাড়া আগামী ২ জুন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক কুতুবদিয়ায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা এবং মাটির কাজের জন্য ৪ কোটি টাকার যে দরপত্র আহবান করা হয়েছে উক্ত টাকার কাজ ঠিকাদারদের মাধ্যমে না করে সেনা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে করা হলে দ্বীপবাসী অনেক বেশী উপকৃত হবে বিধায় উক্ত কাজ সেনা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে করার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পাঠকের মতামত: