মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : গত ২৪ মার্চ থেকে সোমবার ১৫মে পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় মোট ১৫২জন করোনা ভাইরাস জীবাণু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস রোগী সনাক্ত করা হয় ৮মার্চ। কক্সবাজারে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত করা হয় ২৪মার্চ। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে ১৫মে শুক্রবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক ২১জন করোনা ভাইরাস রোগী সনাক্ত করা। যে ২১ জনের মধ্যে ১৮ জন কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা এবং ৩ জন রোগী রোহিঙ্গা শরনার্থী।
কক্সবাজার জেলার ৮ টি উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলায় ক্রমান্বয়ে করোনা রোগী সনাক্ত করা হয়। কিন্তু হজরত কুতুব আওলিয়া (রহ.) ও হজরত মালেক শাহ (রহ.) এর স্মৃতি বিজড়িত দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় দেশে করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার দীর্ঘ ৬৬ দিন পর ১৫মে শুক্রবারই প্রথম একজন করোনা ভাইরাস রোগী সনাক্ত করা হয়। এরআগে গত ১৪মে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে ১জন এবং আজ ১৫মে ৩জন রোহিঙ্গা শরনার্থীর দেহে করোনা ভাইরাস সনাক্ত করা হয়। রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প ও কুতুবদিয়া উপজেলায় করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে কক্সবাজার জেলার ৮টি উপজেলা এবং রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে ভয়াবহ করোনা ভাইরাস সর্বত্র ব্যাপকভাবে সংক্রামিত হলো।
প্রায় প্রত্যেকদিন কক্সবাজার জেলায় করোনা রোগী সনাক্ত করা হচ্ছে। যা চরম আতংকের বিষয়। ১৫মে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে ১৮৪ জনের স্যাম্পল টেস্টের মধ্যে ২১ জনের রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ পাওয়া যায়। রামু’র ২জন আগের রোগীর ফলোআপ রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ পাওয়া যায়। বাকী ১৬১ জনের রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ পাওয়া যায়। ‘পজেটিভ’ রিপোর্ট পাওয়া ২১জন রোগীর মধ্যে ৩জন রোগী রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের। বাকী ১৮ জনই কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা।
একই দিন কক্সবাজার জেলায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দেড়শো পার হয়ে ১৫২ জনে পৌঁছে গেছে। থামানো যাচ্ছেনা করোনা রোগী সনাক্তের সংখ্যা। অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ছে সামগ্রিক অবস্থা। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন, স্বাস্থ্য বিভাগ, মাঠ প্রশাসন সহ সকলে। জেলায় লকডাউন (Lockdown) কাগজে কলমে থাকলে মাঠে কোন কার্যকর নেই। কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমও অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে।
শুক্রবার ১৫মে ‘পজেটিভ’ রিপোর্ট পাওয়া ২১জন করোনা রোগীর মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ১ জন, করোনার হটস্পট হিসাবে পরিচিত চকরিয়া উপজেলায় ১৫জন, পেকুয়া উপজেলায় ১জন, কুতুবদিয়ায় ১জন এবং রোহিঙ্গা শরনার্থী ৩জন।
এনিয়ে কক্সবাজার জেলায় শুক্রবার ১৫মে পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হলো ১৫২ জন। এরমধ্যে, চকরিয়া উপজেলায় ৫২জন, কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৩৬জন, পেকুয়া উপজেলায় ২১জন, মহেশখালী উপজেলায় ১২জন, উখিয়া উপজেলায় ১৪জন, টেকনাফ উপজেলায় ৭জন, রামু উপজেলায় ৪জন, কুতুবদিয়া উপজেলায় ১জন এবং রোহিঙ্গা শরনার্থী ৪জন। কুতুবদিয়া উপজেলায় আজই প্রথম ১জন করোনা ভাইরাস জীবাণু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হলো।
রামু উপজেলার কাউয়ার খোপ ইউনিয়নের পূর্ব কাউয়ার খোপ গ্রামের মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এর স্ত্রী ছেনু আরা বেগম ৩০ এপ্রিল রাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এই মহিলা হচ্ছে, কক্সবাজারে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুবরণ করা রোগী। ইতিমধ্যে মোট ৩৩ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এদিকে, আক্রান্ত করোনা রোগীর তুলনায় কক্সবাজার জেলায় স্বাস্থ্য চিকিৎসা সুবিধা খুবই অপ্রতুল। রোগীর সংখ্যাও প্রতিদিন বাড়ছে আশংকাজনক হারে। এ অবস্থায় পুরো প্রশাসনকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে সার্বিক পরিস্থিতি। করোনা ভাইরাস সংক্রামণ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ায় চিন্তিত হয়ে জেলার সচেতন মহলও।
পাঠকের মতামত: