::: এম.আর মাহমুদ :::
সদ্য ঘোষিত এইচএসসি পরীক্ষার ফল বিপর্যয় নিয়ে খোদ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহল হতাশ হয়ে পড়েছে। এতদিন পাশের হার সর্বোচ্চ থাকলেও হঠাৎ করে এবারের ফল বিপর্যয় কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। চকরিয়ার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চকরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ফলাফল দেখে সমালোচনার ঝড় চলছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রুচিহীন মন্তব্য দেখে শিক্ষানুরাগী লোকজন মাথা হেড করছে। এভাবে ফল বিপর্যয়ের কারণ জানতে অভিভাবক ও সচেতন মহল নানাজনের কাছে প্রশ্ন করেও সঠিক জবাব পাচ্ছে না। এবারের ফল বিপর্যয়ের শিকার অসংখ্য পরীক্ষার্থী আগামীবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা ওইসব বিপর্যস্ত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরাই ভাল জানে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার জন্য কতটুকু প্রস্তুত ছিল লেখাপড়া করেছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব কি অভিভাবক মহলের ছিল না? যাক অপরদিকে পরীক্ষার্থীরা ফাইনাল পরীক্ষার পূর্বে টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কি ফলাফল করেছে তা কি কলেজ কর্তৃপক্ষ দেখেনি? অনেকেরই অভিমত, টেস্ট পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে ফেল করা ও টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করা অনেক শিক্ষার্থী অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ নিয়েছে। না হয় এমন বিপর্যয় হয় কিভাবে? চকরিয়া কলেজের একজন প্রবীণ শিক্ষক বলেছেন, চকরিয়ার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ও সদ্য জাতীয়করণ প্রক্রিয়াভূক্ত কলেজের এমন ফলাফল বিপর্যয় কারও কাম্য ছিল না। চকরিয়ায় ৬টি কলেজ রয়েছে। ফলাফলের ক্ষেত্রে চকরিয়া কলেজ ৫ নম্বরে রয়েছে। চকরিয়া কলেজের পাশের হার প্রায় ৩৩ শতাংশ। এবার এইচএসসি পরীক্ষায় কতজন পরীক্ষার্থী টেস্ট পরীক্ষায় কৃতকার্য ও অকৃতকার্যদের পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হয়েছে তা অনুসন্ধান করে বের করা হলে ফল বিপর্যয়ের আসল রহস্য বেরিয়ে পড়বে। এ কলেজের বেশ ক’জন শিক্ষক বলতে শোনা গেছে, এক সময় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অকাতরে পাঠদান করতেন। আর শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের শিক্ষায় দীক্ষিত হয়ে পরীক্ষায় কৃতকার্য হতেন। এখন সে অবস্থা নাই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিক্ষকরা কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্যে লিপ্ত। তবে কিছু কিছু ব্যতিক্রম নাই এমন কথা বলা যায় না। ‘তাস খেলে কত ছেলে পড়া নষ্ট করে, পরীক্ষা আসিলে পরে চোখের জল ঝরে। ‘সর্বশীর্ষ জ্ঞান দেন গুরু মহাশয়, শ্রদ্ধাবান লবে জ্ঞান অন্য কেহ নয়’। সব মহলের কাছেই একটি প্রশ্ন টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি বা অকৃতকার্য ছাত্র-ছাত্রীদের কেন ফাইনাল পরীক্ষায় ফরম পূরণের সুযোগ দেয়া হয়েছে তা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক তদন্ত করা দরকার বলে বিজ্ঞমহলের অভিমত। প্রবীণ এক শিক্ষক দুঃখ করে বলতে শোনা গেছে, এক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল কাঁচা আর লেখাপড়ায় ছিল পাকা। বর্তমানে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাকা হলেও লেখাপড়ার মান কিন্তু কাঁচা হচ্ছে। হাসপাতালে যখন রোগী মারা যায়, তখন রোগীর আত্মীয়-স্বজনেরা ডাক্তারের ঘাড়ে দোষ চাপায়। মামলাভূক্ত কোন আসামী কারাগারে যায়, তখন আইনজীবীকে দোষারূপ করে। এক্ষেত্রে ডাক্তার ও আইনজীবীদের তেমন কেন অনুশোচনা করার মত অবস্থা থাকে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন শিক্ষার্থীরা অকৃতকার্য হয়, তখন যদি শিক্ষকদের অবস্থাও একই হয় তা হলে মন্তব্য করার কিছু থাকে না। শিক্ষার্থীরা কৃতকার্য হলে শুধু শিক্ষার্থীরা লাভবান হয় না, ওই প্রতিষ্ঠানের সুনামও বৃদ্ধি পায়। যে প্রতিষ্ঠানের ফলাফল বিপর্যয় হয়, সে প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের মনে কষ্ট লাগাটা অতি স্বাভাবিক। চকরিয়া কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষকের একটি জবাব এ বিপর্যয়ের জন্য অধ্যক্ষসহ পরিচালনা কমিটির দায় এড়ায় কিভাবে? এছাড়া কলেজের শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। যোগ্য ও মেধাবীদের বাদ দিয়ে অপেক্ষায়কৃত দূর্বল ও মেধাহীন শিক্ষক অর্থপূর্ণ উদারতায় নিয়োগ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া অধ্যক্ষ কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাথে কোন ধরণের আলাপ-আলোচনা না করে একক সিদ্ধান্তে টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় সুযোগ দিয়েছেন। সুতরাং এ দায় শিক্ষকরা নেব কেন? প্রতিষ্ঠান প্রধানের একক সিদ্ধান্তে অযোগ্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে নিজে লাভবান হলেও প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে। যা পুনঃ উদ্ধার করা কলেজের জন্য বড়ই কষ্টকর হবে। অতএব সাধু সাবধান।
পাঠকের মতামত: