কক্সবাজার সরকারী কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্রী হাসিনা আক্তারকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
১ মার্চ শুক্রুবার বাদে জুমা কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় মানববন্ধনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এমন অভিযোগ তুলেন বক্তারা।
তারা বলেন, ঘাতকচক্র মামলাকে ‘আতœহত্যা’ প্রমাণ করতে কোটি টাকার মিশনে নেমেছে। টাকার জোরে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ঘাতকচক্রের শক্তিশালী মিশনের কাছে ঘটনার মূল রহস্য ধামাচাপা যাওয়ার আশঙ্কা করছে বক্তারা।
তারা অভিযোগ করেন, হাসিনা আকতার হত্যা মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। হত্যাকান্ডের ৭২ ঘন্টায়ও কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো হত্যার শিকার হাসিনা সম্পর্কে মিথ্যাচার ও অপবাদ দিচ্ছে আসামীরা। ‘ঘাতক’ স্বামী ইয়াছিন আরফাত নিজেকে চৌফলদন্ডী ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক দাবী করে ৩১ মার্চ প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলনও করেছে।
ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিক্ষুব্ধ জনতা বলেন, বিয়ের পর থেকে বিভিন্নভাবে ৫ লাখ টাকা দাবী করে আসছিল ইয়াছিন আরাফাত। এ নিয়ে হাসিনাকে অনেকবার শারীরিক মানসিক নির্যাতন করে স্বামী ইয়াছিন। বিয়ের এক মাসে অন্তত দশবার মারধর করেছে হাসিনাকে। পারিবারিক অর্থ দৈন্যতায় এ খবর মা-বাবাকে বলেনি হাসিনা।
এরপরও স্বামীর বর্বর নির্যাতন সহ্য করে সংসার জীবনের সুখ খোঁজে হাসিনা। কিন্তু না, পাষন্ড স্বামী থামেনি। যৌতুক দাবীতে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিল। অবশেষে যৌতুকের দাবী মেটাতে ব্যর্থ হওয়ায় ২৯ মার্চ হাসিনাকে কৌশলে হত্যা করা হয় দরিদ্র পরিবারের মেধাবী মেয়ে হাসিনাকে। শুধু তাতে শেষ নয়, ‘আতœহত্যা’ প্রচার করতে হাসিনার নিথর দেহ ঝুলিয়ে রাখা হয় একচালা ঘরের চালের সাথে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার আদর্শ মহিলা কামিল (মাস্টার্স) মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ আহমদ চৌধুরী, দৈনিক আপনকণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আলহাজ্ব রুহুল আমিন সিকদার, এডভোকেট জসিম উদ্দিন, আওয়ামী ওলামালীগের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ড. নুরুল আবছার, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম সরওয়ার চৌধুরী, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইকবার সোবহান চৌধুরী, পৌর যুবলীগ নেতা এহসানুল হক, মাওলানা আবুল কালাম, জাহাঙ্গীর আলম, মিজানুর রহমান, ছাত্রনেতা ইয়াছিন প্রমুখ।
স্বতঃস্ফূর্ত জনতার কাছে বোন হত্যার বিচার দাবী করে আবেভরা কণ্ঠে বক্তব্য দেন নিহত মেধাবী ছাত্রী হাসিনা আকতারের ভাই দেলোয়ার হোসেন।
মানববন্ধনে নাপ্পাঞ্জাপাড়া স্টুডেন্ট ফোরামসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, শ্রমিক, কর্মচারী, ছাত্রছাত্রী ও অভিবাদকবৃন্দ অংশ নিয়ে নৃশংস হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফদন্ডী মধ্যম মাইজপাড়া এলাকার মোস্তাক আহমদের ছেলে ইয়াছিন আরাফাতের সাথে হাসিনার বিয়ে হয়। ২৯ মার্চ তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় স্বামী ইয়াছিন আরাফাতকে প্রধান আসামী করে ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে নিহত হাসিনার বড়ভাই জাকির হোসেন। মামলা নং জিআর-৮৩/২০১৬। নিহত হাসিনা কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন নাপ্পাজা পাড়ার মৃত আব্দুল মোনাফের মেয়ে।
৩০ মার্চ বুধবার রাতে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলো- দেবর জাহেদুল ইসলাম, শ্বশুর মোস্তাক আহমদ, শ্বাশুড়ী হোসনে আরা বেগম ও জা রেবেকা বেগম।
পাঠকের মতামত: