আগামি ২ মাসের মধ্যে আরও ৩ হাজার জলবায়ূ উদ্বাস্তু পরিবার পাচ্ছে আশ্রয়
কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম রানওয়ে নভেম্বরেই চালু হচ্ছে কক্সবাজারে। এই রানওয়ের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অবতরণের সময় উড়োজাহাজটি একেবারে সাগর ছুঁয়ে যাবে। কারণ, ১০ হাজার ৭শ ফুট দীর্ঘ রানওয়ের মধ্যে ১৭শ ফুট তৈরি হয়েছে সমুদ্রবক্ষে। আর এই রানওয়ে দিয়েই বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী বিমানটিও কক্সবাজার বিমানবন্দরে নামার সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে কক্সবাজার বিমানবন্দর ঘিরে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ‘আঞ্চলিক হাব’ হিসেবে তৈরির জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগের পরিকল্পনাও করেছে সরকার।
সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে নামবে উড়োজাহাজ। এমন দৃশ্য যেমন উপভোগ্য ঠিক তেমনি রোমাঞ্চকর। আকাশ থেকে নামার সময় মনে হতে পারে সাগরেই নামছে উড়োজাহাজ।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে; দুই বছর আগে ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট রানওয়েকে বাড়িয়ে করা হয় ৯ হাজার ফুট। পরে সমুদ্রের বক্ষে আরো ১ হাজার ৭শ ফুট বাড়িয়ে এর দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৭শ ফুটে। বলা হচ্ছে; দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম রানওয়ে এটি। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৮৩ ভাগ কাজ শেষ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০২১ সালে কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬৭৭৫ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুট বাড়িয়ে বোয়িং ৭৭৭ বিমান নামার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে শুধুমাত্র ড্যাশ-৮ এবং এটিআর উড়োজাহাজই চলাচল করত এই বিমানবন্দর দিয়ে। ২০২১ সালের পর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক রূপ দিতে ১ হাজার ৯শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে রানওয়ে বর্ধিত করা, দৃষ্টিনন্দন একটি আন্তর্জাতিক ভবন তৈরি করা; যেখানে কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, লাউঞ্জ এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধা থাকছে। ভবন থেকে সরাসরি বিমানে ওঠানামার জন্য থাকছে একটি বোর্ডিং ব্রিজ। সবগুলোই তৈরি হয়ে চালু হবে ২০২৪ সালের জুনে। আর কক্সবাজার বিমানবন্দরে দেশের চারটি বিমান সংস্থার যাত্রীবাহী বিমান প্রতিদিনই ওঠানামা করছে।
এদিকে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রকল্প কাজের অগ্রগতি দেখতে বিমানবন্দরের বর্ধিত রানওয়েতে যান প্রধামন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। এসময় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা প্রকল্পের পুরো দিক তুলে ধরেন তার কাছে। এরপর তিনি গাড়িযোগে বিমানবন্দর সংলগ্ন সমিতিপাড়া ও নাজিরারটেক পুরো এলাকা ঘুরে দেখেন।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, বাংলাদেশের জন্য আরেকটি গর্বের প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হবার পথে চলে এসেছে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রানওয়ে হচ্ছে কক্সবাজার বিমান বন্দর। এটি চালু হবার পর যাত্রীরা আকাশ থেকে নামার সময় মনে করবেন যেন সমুদ্রের মধ্যে নেমে যাচ্ছেন। এটি চালু হলো বিশে^র যেকোন উড়োজাহাজ কক্সবাজার বিমান বন্দরে এসে নামতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র দুরদর্শী সিদ্ধান্তে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বরে এই রানওয়েটি চালু করতে পারবেন।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালানো ক্যাপ্টেনরা জানিয়েছেন, ‘সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা ও বালি বিমানবন্দরে অবতরণের সময় যাত্রীরা যে রোমাঞ্চকর অনুভূতি পান কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণের সময়ও তেমন অনুভূতি পাবেন। ফলে কক্সবাজারমুখী পর্যটকরা আকৃষ্ট হবেন অনেক বেশি।’
দেশের দীর্ঘতম রানওয়েটি নির্মাণশৈলীর কারণে এরইমধ্যে এসেছে আলোচনায়। আর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমান বন্দর হিসেবে কক্সবাজার বিমান বন্দরকে গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেবিচক চেয়ারম্যান।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, অক্টোবরে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অর্থনীতির চাপ এসেছিল ফরেন কারেন্সিতে। এলসি খুলতে পারিনি। এর জন্য কিছু আইটেম ক্রয় করে আনতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আশা করি, নভেম্বরের মধ্যে বর্ধিত রানওয়ে চালু হবে। দেশের সবচেয়ে বড় রানওয়ে সম্পন্ন বিমানবন্দরটি নির্মাণে খরচ ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য প্রস্তুত হলেও, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হতে লাগবে আরো সময়। তারপরও আশা করি, আগামী ২০২৪ সালের জুনের আগেই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু ও দিবারাত্রি ফ্লাইট ওঠানামার কার্যক্রম শুরু হবে।
এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিমান ডিকলেয়ার করা সময় সাপেক্ষের ব্যাপার। কিছু কিছু স্থাপনা সরাতে হবে। সেগুলো দখল হয়ে রয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসক, মন্ত্রণালয়, রাজনীতি ব্যক্তিবর্গের সাথে আলাপ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই কাজগুলো শেষ করা হবে।’
মো. মফিদুর রহমান আরও বলেন, শুধুমাত্র দীর্ঘতম রানওয়েই নয়; এই বিমানবন্দর ঘিরে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ‘আঞ্চলিক হাব’ হিসেবে তৈরির জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগের পরিকল্পনাও করেছে সরকার।
॥ খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প ॥
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মূখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে কক্সবাজারের খুরুশকুলের সর্ববৃহৎ জলবায়ূ উদ্বাস্তুদের জন্য হওয়া আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। যেখানে নিমার্ণাধিন ভবন পরিদর্শন, বাস্তবায়নকারি সেনা কর্মকর্তা সহ বসবাসরত উদ্বাস্তু পরিবারের সদস্যদের সাথে আলাপ করেন।
এসময় তিনি গণমাধ্যমে বলেন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবায়ূ উদ্বাস্তুদের আশ্রয় কেন্দ্র এটি। যেখানে ১৯ টি ভবনে ইতিমধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন ৪ হাজার পরিবার। এখন আরও ৬৫ টি ভবন নির্মাণ শেষ পর্যায়ে। আগামি ২ মাসের মধ্যে এখানে আরও আড়াই থেকে ৩ হাজার পরিবার আশ্রয় পাবেন।
১৯৯১ সালের প্রলয়ংনকারি ঘূর্ণিঝড়ে আশ্রয়হীন মানুষকে এক স্থানে নিয়ে এসে আশ্রয় দেয়ার একটি ইতিহাস প্রধানমন্ত্রী সৃষ্টি করেছেন মন্তব্য করে মূখ্য সচিব বলেন, এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। বিদ্যালয়ের জন্য জায়গা রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে স্কুল ও কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হবে। পরিবেশ বান্ধব এই আশ্রয় কেন্দ্রে খেলার মাঠ, মসজিদ, মন্দির সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও হবে।
খুরুশকুল আশ্রয় কেন্দ্রের পশ্চিমে নদীর কিনারে ২ টি আধুনিক জেটিও হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, এখানের মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য গ্রীন হাউজ প্রক্রিয়া আধুনিক শুটকি পল্লী, জেলেদের জন্য ব্যবস্থা একই সঙ্গে পর্যটন বিকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া মুখ্য সচিব খুরুশকুলের বায়ূ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সাইদ মাহমুদ বেলাল হায়দার, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদ, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মিজানুর রহমানসহ সরকারি দপ্তর ও প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মতামত: