ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ৪০ কিমি

চকরিয়া নিউজ ডেস্ক ::
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় কমেছে আরও আগেই। চার লেন চালু হওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যোগাযোগ স্বচ্ছন্দ হয়েছে। তাতে উপকৃত হয়েছেন কক্সবাজারগামী যাত্রীরাও। তবে এখন কক্সবাজার যেতে হলে চট্টগ্রাম শহরের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। আর তাতে অনেক সময় ব্যয় হয়। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চালু হলে সেই দূরত্ব এবং সময় দুটোই কমবে। টানেল চালু হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে অন্তত ৪০ কিলোমিটার (কিমি)।

সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ৪১৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৬৪ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। তাই ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ পথ।

বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মিত হলে ঢাকার যানবাহনগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট হয়ে বন্দর টোল রোডের সঙ্গে নির্মিত আউটার রিং রোড-পতেঙ্গা হয়ে কর্ণফুলী টানেল ব্যবহার করলে চট্টগ্রামের দিকে পথ কমবে প্রায় ১৫ কিলোমিটার। তা ছাড়া কর্ণফুলী টানেল হয়ে আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল ঘাট-চাতরি চৌমুহনী-বাঁশখালী-পেকুয়ার মগনামা হয়ে সরাসরি কক্সবাজার সদরে যুক্ত হলে কক্সবাজারের দিকে সড়ক কমবে আরও প্রায় ৩০ কিলোমিটার।

সেতু বিভাগ জানায়, দুই টিউব সংবলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। তিনটি সংযোগপথের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে যুক্ত থাকবে এই দুই টিউব। বিপদকালে এক টিউব থেকে অন্য টিউবে যাতায়াতের জন্য এই ক্রস প্যাসেজগুলো ব্যবহৃত হবে। কিছুদূর পরপর টানেলের দেয়ালে এই ক্রস প্যাসেজের দূরত্বের নির্দেশনা লেখা আছে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার।

টানেলটি কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে পশ্চিম প্রান্তে পতেঙ্গা নেভাল একাডেমির কাছ থেকে শুরু হয়ে পূর্ব প্রান্তে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল) এবং কর্ণফুলী সার কারখানার (কাফকো) মাঝখান দিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে পৌঁছেছে। মূল টানেলের সঙ্গে পতেঙ্গা প্রান্তে শূন্য দশমিক ৫৫০ কিমি এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারসহ মোট ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে। এ ছাড়াও আনোয়ারা প্রান্তে সংযোগ সড়কের সঙ্গে ৭২৭ মিটার উড়ালসড়ক রয়েছে।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন এবং ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন।

দেশের প্রথম এই টানেল নির্মিত হচ্ছে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায়। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন রয়েছে এই মেগা প্রকল্প। এখন চলছে টানেলের ভেতরে ফায়ার ফাইটিং, লাইটিং ও কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনার কাজ। পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে প্রকল্পের গাড়িও। নদীর তলদেশে হওয়ায় যেকোনও সময় পানি জমতে পারে, এমন আশঙ্কায় টানেলের মধ্যে বসানো হচ্ছে ৫২টি সেচ পাম্প। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

টানেলে নদীর তলদেশে স্থাপন করা দুটি টিউবের একটিতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে বিকল্প পথে গাড়ি চালানো যায়, সেটিরও কাজ চলছে। বাতি ও পাম্প স্থাপন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরির কাজও সমানতালে চলছে। এখন চলছে কর্ণফুলীর দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারা অংশে টোল প্লাজা নির্মাণের কাজ।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, টানেল চালু হলে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এক ধাপ এগিয়ে যাবে। টানেলকে ঘিরে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর এবং পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছেন। সেখানে যেমন দেশীয় বিনিয়োগ থাকবে তেমন থাকবে বিদেশি বিনিয়োগ। আর তার জন্য দরকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ আর বন্দর। এরসঙ্গে মাতারবাড়ির একটা সম্পর্ক আছে। এ ছাড়া ঢাকার সঙ্গে কক্সবাজার যাওয়ার দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমে যাচ্ছে।

‘টানেলের মোট কাজ হয়েছে ৯৪ শতাংশের বেশি। এই টানেল উদ্বোধন হলে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে ০.১৬৬ ভাগ।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি আল্লাহর রহমতে প্রধানমন্ত্রী ভালো জায়গায় নিয়ে গেছেন। কোনোভাবে এটি দমানো সম্ভব না। অনেকে উদ্বিগ্ন ছিল যে, বাংলাদেশের কী হবে? বাংলাদেশে যখন আইএমএফ এসেছে তখন তারা প্রতিটি সেক্টর পর্যালোচনা করে দেখেছে। যদি মার্কিং করা হয় তাহলে বাংলাদেশ পাবে এ প্লাস। আর এটি একদিনে পায়নি। বিভিন্ন নীতি ও উন্নয়ন থেকে হয়েছে। আর তারা এতে ইমপ্রেসড হয়েছে।’

প্রকল্প পরিচালক হারুনর রশীদ বলেন, ‘এখন প্রতিটি সিস্টেম কাজ করছে আলাদাভাবে। এরপর এগুলো আমাদের কন্ট্রোল সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত হবে। পাবলিক ব্যবহারের জন্য আমাদের সবকিছু ঠিক করতে হবে। আর সবমিলিয়ে জানুয়ারির শেষ দিকে শেষ হবে বলে আশা করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল, আর সেগুলো আমরা অতিক্রম করেছি। প্রথম টিউব ১৭ মাস লাগলেও পরেরটা ১০ মাসে সম্পন্ন হয়েছে। সুত্র: বাংলাট্রিবিউন

পাঠকের মতামত: