ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার জোনের বন রক্ষায় নেই কোন তদারকি:: ইটভাটায় পাহাড় কেটে নেওয়া হচ্ছে মাটি পুড়ছে কাঠ

মনির আহমদ, কক্সবাজার ::

বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জোনের কর্মকান্ডে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। লোক দেখানো কয়েকটি ভ্রাম্যমান অভিযান করে পরিচিত হয়ে দুর্নিতিবাজ বিদায়ী আঞ্চলিক কর্মকর্তা সরদার শরিফুল ইসলামের পথ ধরেই হাটছেন নবাগত পরিবেশ কর্তা। ফলে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে কক্সবাজার আঞ্চলিক পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রনাধীন বনাঞ্চল। সমান তালে চলছে পাহাড় কেটে নতুন নতুন ইটভাটা ও কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব। সরেজমিনে পাহাড় খেকোদের কার্যক্রম দেখে মনে হয় যেন ইটভাটার জন্য সৃজন করা হয়েছিল পাহাড় ও বন। প্রতিবছরের মত এবারো পাহাড়ের ভিতর তৈরী হয়েছে ১০ টির অধিক নতুন ইটভাটা। মৌসুমের আগেই ইটভাটার মালিকেরা লোক নিয়োগ করে বনাঞ্চল থেকে প্রকাশ্যে গাছ কেটে নিয়ে যায়। এভাবে প্রতি বছর চকরিয়া,রামু, লামা, নাইক্ষংছড়ি, শতাধিক ইটভাটায় এক হাজার কোটি টাকার কাঠ পুড়ছে। এ বছরও একই পরিমানের কাঠ পুড়েছে এসব ইটভাটায়। পরিবেশ অধিদপ্তর রয়েছে নিরব দর্শকের ভুমিকায়। যারা আছে তারাই বরং বন ধ্বংসকারীদের সহযোগিতা দিচ্ছে। এতে ইটভাটার মালিক, প্রভাবশীলী ব্যক্তি, কতিপয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তার প্রতিনিধি ও বনকর্মীরা লাভবান হলেও এতদাঞ্চলের পাহাড় ও বনাঞ্চলে চলছে ধ্বংশযজ্ঞ।

জানা যায়, চকরিয়ার হারবাংয়ে ৪টি, পাশের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ও ফাইতংয়ের ২৮টি ফাসিয়াখালীতে ৩টি নাইক্ষংছড়ি উপজেলার পাহাড়ে ৭টি, রামুর কাউয়ার খোপে ৪টি সহ ৫০ টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে পাহাড়ের ভিতর বনাঞ্চল ঘেঁষে। পাহাড়ের মাটি নির্ভর এসব ইটভাটগুলোতে প্রধানত কাঠ পুড়ে ইট তৈরী করা হয়। এসব জ্বালানি কাঠগুলোর বেশীরভাগই চকরিয়ার বনাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।

ইটভাটায় সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইটভাটার মালিকেরা ইট পুড়ানোর জন্য মৌসুম শুরুর আগেই জ্বালানি হিসাবে পাশের বনাঞ্চলের গাছ কিনে নেয়। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, কতিপয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও বনকর্মীরা যোগসাজস করে জ্বালানি হিসাবে সরকারী বনের গাছ বিক্রি করে দিয়ে থাকে। মৌসুমের সময় বা একটু আগেই ইটভাটার মালিকরা লোক দিয়ে বনাঞ্চলের গাছগুলো কেটে নিয়ে যায়। এলাকাবাসি জানায়, কেটে নেয়া বনের দৃশ্য দেখলে যে কেউ হতবাক হয়ে যাবে। ইটভাটার মালিকরা বনাঞ্চলের গাছের পাশাপাশি ঝুপজঙ্গল, লতাগুল্মসহ সব কিছু কেটে নিয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, বছরে প্রতি ইটভাটায় জ্বালানি এক হাজার কোটি টাকার কাঠ পুড়ছে। চকরিয়ার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের সাহাব উদ্দিন জানান, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের নলবিলা বিটের অধীনের কাকারা মৌজার খেদারবান এলাকায় তার দখলে ৪ একর সরকারী বনভূমি আছে। ওই বন ভূমিতে ঘন গাছ ছিল। গাছগুলো তিনি ফাইতংয়ের ফরিদ কন্ট্রাক্টরের ইটভাটাসহ বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করে দিয়েছেন। তার পাশে কাজী ফারুক নামের এক ব্যক্তি এ বছর ৫০লাখ থেকে ৬০লাখ টাকার বনের কাঠ বিক্রি করেছে। এসব কাঠগুলো লামার ফাইতংয়ের ইটভাটার মালিকেরা বন থেকে কেটে নিয়ে গেছে। এসব বনভূমি এখন ন্যাড়া হয়ে গেছে। এলাকাবাসি জানায়, আজিজ নগর ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ও চকরিয়ার বিএনপি নেতা ফরিদ কন্ট্রাক্টারের ভাই জালাল উদ্দিন লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা। সেই সুযোগে প্রভাব খাটিয়ে তিনি বনের গাছ কেটে ইটভাটায় নিয়ে গেলেও কেউ বাধা দিতে সাহস করে না। চকরিয়া ও লামার ফাইতংয়ের বেশীরভাগ ইটভাটার মালিক বিএনপি জামাত সমর্থিত হলেও তারা স্থানীয় আওয়ামীলীগ নাম ধারী কিছু ব্যক্তির ছত্র ছায়ায় থাকায় পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ডে যুক্ত হয়েও পার পেয়ে যাচ্ছে।

চকরিয়ার সামাজিক বনায়নের বেশীরভাগ গাছ জোর করে কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা অভিযোগ করার পরও গাছ লুটেরাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হচ্ছে না।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়; কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের নলবিলা বিট, রিংভং (ফাঁসিয়াখালী) বিট, ডুলাহাজরা বিট, মানিকপুর বিট, কাকারা বিট ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জের বরতইতলী, হারবাং বিটের বেশীর বনাঞ্চল উজাড় হয়ে গেছে। এসব এলাকায় সামাজিক বনায়নের গাছও রক্ষা করা যাচ্ছে না। সামাজিক বনায়নের গাছও জোর করে কেটে ইটভাটায় নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ আছে।

এ ব্যাপারে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মতিন বলেছেন; বনের গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছেন। গাছগুলো ফাইতংয়ের ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কাকারার পাহাড়ী এলাকায় একটি নতুন রাস্তা তৈরী করেছে। ওই রাস্তা দিয়েই গাছগুলো ফাইতংয়ের ইটভাটার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বন ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দেবার কথা বললে ও  দৃশ্যমান অভিযানে রয়েছেন নিরব।

পাঠকের মতামত: