এম.এ আজিজ রাসেল ::
কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দিদের সাথে সাক্ষাতে ঘুষ, জামিননামা আটকে ঘুষ, সিট বাণিজ্য, পুলিশকে অবহিত না করেই জামিনপ্রাপ্ত দাগি আসামীদের ছেড়ে দেয়া, সুস্থ থাকা সত্ত্বেও ইয়াবা মামলায় আটক ব্যক্তিদের অসূস্থ উল্লেখ করে সনদ দেয়াসহ কারা কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে রোববার কক্সবাজার আসছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত টিম।
কক্সবাজার জেলা কারাগারের অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ এবং এক ব্যক্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া অভিযোগ তদন্ত শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দির সাক্ষাৎ প্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ, জামিননামা আটকে ঘুষ, সিট বাণিজ্য, পুলিশকে অবহিত না করেই জামিনপ্রাপ্ত দাগি আসামীদের ছেড়ে দেয়া, সুস্থ থাকা সত্ত্বেও ইয়াবা মামলায় আটক ব্যক্তিদের অসূস্থ উল্লেখ সনদ দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি করে যাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। আর এসব অভিযোগ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করেন এক ভূক্তভোগী। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের নিদের্শে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। তদন্তের অংশ হিসেবে তিনি আজ রোববার কক্সবাজার আসছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেলার শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে কারাগারে একটি নিজস্ব বলয় তৈরী করা হয়েছে। বিশ্বস্ত কয়েকজন কারারক্ষীর মাধ্যমে শাহাদাত কারাগারে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ভূক্তভোগীরা জানান, কারাগারে দায়িত্বরত কারারক্ষীরা একেকজন বন্দির সাথে দেখা করতে দাবী করেন দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ। সর্বনি¤œ ১২০০ টাকা থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিলেই ‘অফিস কল’ হিসেবে বন্দিকে বিশেষ ব্যবস্থায় সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়া হয়। আর যারা সাধারণ সাক্ষাৎ কক্ষে সাক্ষাৎ করতে আসেন সেই সব সাক্ষাৎ প্রার্থীদের ঘুষ দিতে হয় সর্বনি¤œ ৩০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। অন্যথায় সারাদিন বসে থেকে বন্দির সাক্ষাৎ না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন স্বজনরা। এ অবস্থায় প্রতিদিন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা শতাধিক সাক্ষাৎপ্রার্থী বন্দির সাক্ষাৎ না পেয়েই ফিরে যেতে বাধ্য হন।
কারাগার সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, কারাগারে গড়ে দৈনিক ৫০ থেকে ৭০টি পর্যন্ত ‘অফিস কল’ হয়। অফিস কলে বন্দির সাথে সাক্ষাতে নেয়া হয় সর্বনি¤œ ১২০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। সেই হিসেবে গড়ে প্রতি দিন অফিস কলেই উপরি আসে লাখ টাকা পর্যন্ত। আর কারাগারের সাক্ষাৎ কক্ষে আগে ৫ টাকার টিকেটে সাক্ষাতের নিয়ম ছিল। এখন ফ্রি সাক্ষাতের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ফ্রি বলা হলেও সেখানে দিতে হয় সর্বনি¤œ ৩০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ। অর্থাৎ যার কাছ থেকে যা পাওয়া যায় তাই হাতিয়ে নেয়া হয়। এভাবে সাক্ষাৎ প্রার্থী দরিদ্র লোকজনের কাছ থেকেই প্রতি মাসে গড়ে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে ১০ লাখ টাকার মতো।
সূত্র আরও জানায়- ‘অফিস কল’ নামে টাকা আদায়ের নেতৃত্ব দেন খোদ কারাগারের জেলার শাহাদাত হোসেন। কারা ফটকের বাইরে টাকা আদায় করেন জেলার শাহাদাতের বিশ্বস্ত কারারক্ষী আসলাম। কারারক্ষী আসলাম ‘সিভিল পোশাকে’ সাক্ষাৎপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা আদায় এবং বিনিময়ে সাক্ষাতের টোকেন দেয়ার কাজ করেন। আসলামের টোকেন হাতে পেলেই কারা ফটকে থাকা কারারক্ষীরা বন্দিকে ডেকে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেন।
এছাড়া জামিননামা আটকে রেখেও ঘুষ আদায় করে সিন্ডিকেটটি। জামিননামা আসেনি, জামিননামায় ভুল রয়েছে, জামিনের বিষয় পুলিশকে জানালে কারাফটকে আবারও আটক করা হবে ইত্যাদি কথা বলে টাকা আদায় করা হয়।
মোহাম্মদ আলম নামের এক ব্যক্তি জানান, জামিননামা আটকে দাবী করা ঘুষের টাকা না দেয়ায় ৮ ঘন্টা আটকে রাখা হয় কারাগারে। পরে এক সংবাদকর্মীর মাধ্যমে তিন হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পান ওই বন্দি। শুধু এসব নয়, কারাগারের অভ্যন্তরে সিট বাণিজ্য, সূস্থ ব্যক্তিকে অসূস্থ বলে সনদ দেয়া, আসামিকে জামিনে বের করে আনার চুক্তি করা, দূর্ধর্ষ বন্দিদের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত না করেই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বের করে দেয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে কারাগারের জেলার শাহাদাত হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। এতে ওনার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
পাঠকের মতামত: