ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার কোর্ট পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না!

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

কক্সবাজার কোর্ট পুলিশের চাঁদাবাজি নতুন কোনো ঘটনা নয়। যারা কোর্ট সেলে আসামি দেখতে গিয়েছেন তারা চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন। আর যারা আসামি দেখতে যাননি তারাও জানেন আসামির স্বজন থেকে কোর্ট পুলিশ কিভাবে টাকা আদায় করেন। দিনের মতো পরিষ্কার কোর্ট সেলে আসামি দেখতে গেলে টাকা ছাড়া দেখতে দেয় হয়না। পুলিশকে টাকা দিয়ে আসামির সাথে সাক্ষাত করা নিয়মে পরিণত হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। তবে আসামীর স্বজন থেকে পুলিশ যে ঘুষ আদায় করে তার একটি অংশ ভাগ যায় বিভিন্ন জনের কাছে।

নিজেদের ঘুষের আমলনামা প্রকাশের ভয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে কিছু ধান্ধাবাজদের দৈনিক বা সপ্তাহিক টাকা দিয়ে থাকে ক্যাশিয়ার পরিচয়ে কোর্ট পুলিশের এক সদস্য। আর বাকি ঘুষের টাকা গুলো পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে স্তরে স্তরে ভাগ বসান বলে খবর ছড়িয়ে রয়েছে।

কোর্ট পুলিশ সদস্যদের প্রতিদিন প্রকাশ্যে টাকা আদায়ের বিষয়টি কোনভাবেই অবগত নন বলে সাফ জানিয়ে দেন খোদ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক কাজী দিদারুল আলম। তিনি বলেন, আসামীর স্বজন থেকে টাকা আদায়ের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাংবাদিক পরিচয়ে কেউ সুবিধা আদায়ের বিষয়টি তিনি অবগত নন বলে জানান। গত রোববারও কাশেম নামে এক পুলিশ সদস্য আসামীর স্বজন থেকে টাকা আদায়ের চিত্র চোখে পড়ে। বিষয়টি কোর্ট পরিদর্শকে অবগত করা হয়েছে। তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন।

খোঁজ নিয়ে ও একাধিক তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, আদালতে আসামিকে হাজির করার জন্য কারাগার থেকে প্রতিদিন (সরকারি বন্ধ ব্যতীত) কয়েক শত আসামি কক্সবাজার কোর্ট সেলে আনা হয়। কোর্ট সেলে আসামি রাখার সুবাদে স্বজনরা একনজর দেখতে সেখানে ভিড় করেন। কিন্তু কোর্ট সেলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জনপ্রতি আসামি দেখার জন্য একশত টাকা থেকে পাঁচশত টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকে। অনেক সময় তা হাজার ছাড়িয়ে যায়। আসামির স্বজন থেকে আদায় করা এই টাকার ভাগ যান পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে।

কোর্ট পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, স্বজনদের কাছ থেকে আদায় করা টাকার ভাগ দিতে হয় কিছু সাংবাদিকদের। প্রতিদিন পাঁচ থেকে দশজন সাংবাদিক পরিচয়ে এসে জনপ্রতি ১০০ থেকে পাঁচশত টাকা পর্যন্ত নিয়ে যান। প্রতিদিন কোনো না কোনো ব্যক্তি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কোর্ট পুলিশ থেকে টাকা নেন। একদিন পর বা সপ্তাহ পরপরেই ১০ থেকে ১৫ জন ধান্ধাবাজ সাংবাদিক পরিচয়ে টাকার ভাগ নেন বলে জানা গেছে।

সিনিয়র সাংবাদিকরা বলেন, সাংবাদিকরা ধান্ধাবাজ নয় বরং কিছু ধান্ধাবাজ সাংবাদিকতার নাম ব্যবহার করে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ এসব অপসাংবাদিকদের তাড়ানো। মূলত দুর্নীতিবাজ কিছু পুলিশ সদস্য নিজেদের চাঁদা আদায়ের তথ্য গোপন রাখতে সাংবাদিক পরিচয় পেলেই সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করে। এই সুযোগে ধান্ধাবাজরা তা লুফে নেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোর্ট পুলিশের এক সদস্য বলেন, আসামি দেখার জন্য স্বজনদের কাছ থেকে যে টাকা আদায় করা হয় এসব টাকার ভাগ দিতে হয় বিভিন্ন দপ্তরে।

কোর্ট পুলিশ থেকে উচ্চ পর্যায়ে ভাগ দিতে হয়। যা টাকা আদায় হয় সব টাকার ভাগ নিতে পারে না কোর্ট পুলিশ। আমরা টাকা আদায় করছি বলে সব দোষ আমাদের। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফ্ররাজুল হক টুটুল বলেন, টাকা আদায় করছে এমন কোনো তথ্য থাকলে দেন, আমি দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

পাঠকের মতামত: