কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই কক্সবাজার শহরের অলিগলিতে ৫ শতাধিক দোকানে অবৈধভাবে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। এসব দোকানে নেই কোনো বিস্ফোরক লাইসেন্স, নেই কোনো ডিলারের অনুমতি। সর্বপূরি সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন দোকানে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি চলছে বছরের পর বছর ধরে। এসব নিয়ন্ত্রনেও কেউ নেই কক্সবাজারে। তবে শহরে ৭০ থেকে ৮০ টি মতো বৈধ গ্যাসের দোকান রয়েছে বলে জানা গেছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন বলেন- আমি নতুন যোগদান করেছি। অবৈধভাবে গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান গড়ে উঠার বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। তবে দ্রুত সময় অবৈধ দোকানে অভিযান চালানো হবে। তাছাড়া অনুমতি ছাড়া যেখানে সেখানে গ্যাস সিলিন্ডার রাখার খুবই বিপদজনক। তাছাড়া সরকারি রাজস্বও ফাঁকি দেয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে- কক্সবাজার শহর ও ঝিলংজার লিংক রোড পর্যন্ত প্রায় ৭০ থেকে ৮০ টি বৈধ গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান রয়েছে। এছাড়া অবৈধ দোকান রয়েছে ৫ শতাধিক মতো।
অবৈধ দোকানের মধ্যে রয়েছে- শহরের নুনিয়াছড়া তিন রাস্তার মাথায় আবু ষ্টোর, রহিয়ান ট্রেডার্স, ফিসারী ঘাট এলাকায় এ.নি ফুডস, একই এলাকায় হালিমা ট্রেডার্স, ফাইস্টার পাম্পের সামনে ফিরোজ-ভুট্টোর ঘাট, ৬নং রোডে আঁখি এন্টারপ্রাইজ, গাড়ির মাঠ এলাকার সাহাব উদ্দিন ষ্টোর ও ঝাউতলা হোটেলের পাশে গাংচিল।
এছাড়া বাহারছড়া, সমিতিপাড়া, কলাতলী, গোলদিঘীর পাড়, ঘোনার পাড়া, বৈদ্যঘোনা, বিডিআর ক্যাম্প, তারাবনিয়ারছড়া, রুমালিয়ারছড়া, পাহাড়তলী, লাইট হাউস, বাস টার্মিনাল, লারপাড়া, লিংকরোড, সাহিত্যিকা পল্লি ও খুরুস্কুল রাস্তার মাথাসহ শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে ৫ শতাধিক অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান রয়েছে।
জানা গেছে- শহরের এলপি, টোটাল ও বসুন্ধারা গ্যাস সিলিন্ডারের চাহিদা রয়েছে। ডিলাররা এসব গ্যাস নিজেদের দোকানে এনে মজুদ করে। এরপর অবৈধভাবে গড়ে উঠা দোকানে অধিক লাভে বিক্রি করে।
একটি সূত্রে জানা গেছে- অবৈধ দোকানে প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রিতে ১শ’ টাকা পর্যন্ত সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়। এমন ১২শ’ গ্যাস সিলিন্ডারে মাসে ১২ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়। শহরে গড়ে উঠা প্রায় ৫ শতাধিক দোকানে মাসে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এবিষয়ে ৬নং রোডে আঁখি এন্টারপ্রাইজে দায়িত্ব থাকা সুজিত মল্লিক বলেন- আমি ডিলারের কাছ থেকে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে দোকানে বিক্রি করি। লাইসেন্স আছে কিনা আমি জানিনা। আমার বড় ভাইয়ের দোকান ছিল। ওনি মারা গেছে অনেক আগে। এখন দোকানে আমি বসি। গ্যাস বিক্রির নিয়ম তিনি জানেন না বলে জানান।
গাড়ির মাঠ এলাকার সাহাব উদ্দিন ষ্টোরে লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে চাইলে ফরহাদ নামে একব্যক্তি বলেন- এবিষয়ে আমি জানিনা। সাহাব উদ্দিন আমার বাবা। আমার বড় ভাই ওমর ফারুক এসব বিষয়ে জানবে।
কক্সবাজার এল.পি.গ্যাস পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল সাহেদ চৌধুরী বলেন, একটি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান খুলতে হলে অনেক প্রতিষ্ঠানের অনুমতি লাগে। কিন্তু বর্তমানে একটি অনুমতি না নিয়েই যে কেউ গ্যাসের দোকান খুলে বসে গেছে। পানের দোকান, মুদির দোকান, মাংসের দোকান, লাকড়ির দোকান, ইজিলোডের দোকানে এখন ৫ থেকে ১০ টি গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে যেকেউ ব্যবসা করছে। তারা অবৈধভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে। তাদের কিছু বলাও যাচ্ছে না। আর বন্ধ করাও যাচ্ছে না। স্থানীয় লোকজন অবৈধভাবে কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে দোকানে বসলেও কিছু করা যাচ্ছে না। কারণ তারা স্থানীয়। এবিষয়ে আগে অনেক বার প্রশাসনকে বলাও হয়েছে। কিন্তু মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি জরিমানা আদায় করে থাকে। তারপর আবার অবৈধ ব্যবসা চালু হয়। এসব অবৈধ দোকান গুলো বিশাল একটি রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে সরকারকে।
কক্সবাজার এল.পি.গ্যাস পরিবেশক সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক বলেন- ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালের দিকে শহরে প্রায় ৬০ থেকে ৬৩টি মতো বৈধ গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান ছিল। বর্তমান প্রায় ৮০টি মতো থাকতে পারে। কিন্তু অবৈধ দোকান শত শত। যেখানে সেখানে এখন গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান।
তিনি বলেন, ঢাকা চট্টগ্রাম ১২ থেকে ১৩ টি গ্যাস সিলিন্ডারের কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পাটির প্রতিটি উপজেলা বা জেলা শহরে বৈধ এজেন্সী রয়েছে। এসব বৈধ এজেন্সীর লোকজন বিভিন্ন দোকানে ও অলিগলিতে নিজের সুবিধার্থে অবৈধভাবে গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ দিচ্ছে।
এবিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট (এনডিসি) একেএম লুৎফর রহমান আযাদ বলেন, যদি কেউ অনুমতি ছাড়া গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান দেয়; তাহলে অভিযান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনকি কোনো ডিলার যদি অনুমোদহীন দোকানে সিলিন্ডার বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাঠকের মতামত: