কালের কণ্ঠ ::
কক্সবাজারসহ পার্বত্য এলাকার মাদকের রুট নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা জোরদার করতে শিগগিরই র্যাবের ১৫তম ব্যাটালিয়ন চালু করা হচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন ব্যাটালিয়নটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে। আগামী সপ্তাহে লোকবল নিয়োগের কাজ শুরু হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অন্যান্য ব্যাটালিয়নের মতোই সব কাজ করলেও নতুন ব্যাটালিয়ন ইয়াবা প্রতিরোধ নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করবে। ইয়াবার প্রবেশদ্বারখ্যাত কক্সবাবাজের টেকনাফসহ সীমান্ত এলাকায় বিশেষ অভিযান চালাবে র্যাব-১৫। কক্সবাজারের আটটি উপজেলা এবং বান্দরবানের সাতটি উপজেলা হবে এ ব্যাটালিয়নের কাজের আওতা। ব্যাটালিয়নটি পাহাড়ি এবং সমুদ্র উপকূলের নিরাপত্তা নিয়েও বিশেষভাবে কাজ করবে।
জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘র্যাব-১৫ অন্য ব্যাটালিয়নগুলোর মতোই ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করবে। মাদকবিরোধী অভিযান র্যাবের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার কার্যক্রমের একটি। ফলে সেখানে একটি গুরুত্ব পাবে। এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেছে। আগামী সপ্তাহেই আমরা লোকবল দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করছি। কাজও শুরু হয়ে যাবে।’ তিনি জানান, র্যাব-১৫ কক্সবাজারের আটটি উপজেলার পাশাপাশি বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় কাজ করবে।
গত বছরের ৪ মে থেকে দেশে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করে র্যাব। ১৪ মে এক সংবাদ সম্মেলনে মাদকের শিকড় উপড়ে ফেলার কথা বলেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। এ সময় তিনি আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগের ঘোষণাও দেন। গত বছরের ১৮ মে থেকে পুলিশও বিশেষ অভিযান জোরদার করে। এরপর মে থেকে মাদকবিরোধী অভিযানে তিন শতাধিক মাদক কারবারি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। এ সময় প্রায় দেড় এক লাখ মাদক কারবারি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জালে ধরা পড়ে। টানা অভিযানের ফলে মাদক চোরাচালান ও বিক্রি অনেকটাই কমে যায়।
এক হিসাবে দেখা গেছে, গত বছরের প্রথম ১১ মাসে পুলিশ ৯৩ হাজার ৭৪৭, র্যাব পাঁচ হাজার ৩৬৯, ডিএনসি (মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর) ছয় হাজার ২৯০ এবং বিজিবি এক হাজার ২৯১টি মাদকের মামলা করেছে। একই সময়ে পুলিশ এক লাখ ২২ হাজার ৪৮২, র্যাব ৯ হাজার ৭৩৩, ডিএনসি ছয় হাজার ৬৪৮ এবং বিজিবি এক হাজার ৪১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। ১১ মাসে সারা দেশ থেকে তিন কোটি ৪৯ লাখ এক হাজার ৪৩৫ পিস ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। অভিযানে মাদক কারবারিরা গা ঢাকা দিলেও কারবার চলছে। বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফসহ বিভিন্ন রুটের কারবারিরা কৌশল পাল্টে ইয়াবা পাচার করে চলেছে।
সূত্র জানায়, কক্সবাজারের টেকনাফসহ মিয়ানমার সীমান্তের পুরো এলাকা সুরক্ষিত করতে র্যাবের নতুন ব্যাটালিয়নটি গঠনের প্রস্তাব দেন র্যাবের মহাপরিচালক। এর আগে ক্যাম্প তৈরি করে কক্সবাজারে অভিযান চালায় র্যাব। তবে দীর্ঘমেয়াদি অভিযান ও মাদকবিরোধী টহল জোরদার করতে একটি ব্যাটালিয়ন থাকলে ভালো হয় বলে দাবি করা হয়। সরকারের দায়িত্বশীলরা যুক্তিসংগত এই দাবি মেনে নিয়েছেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে র্যাবের নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের কার্যক্রম শুরু করে র্যাব। এ ব্যাটালিয়ন থেকে ইয়াবার প্রবেশদ্বার টেকনাফ ও উখিয়ায় ব্যাবপকভাবে নজরদারি করা সম্ভব হবে বলে জানায় সূত্র। আগামী সপ্তাহ থেকে লোকবল নিয়োগ ও অফিস গোছানোর পর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা।
এদিকে স্থানীয় সূত্র জানায়, র্যাবের ব্যাটালিয়ন ও বিশেষ অভিযান জোরদারের খবরে ইয়াবা কারবারিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েক দিন ধরে ইয়াবার ডিলাররা বিভিন্ন মাধ্যমে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিচ্ছে। ইয়াবা কারবারে মদদ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি গত শুক্রবার ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ করতে বলেন। এরপর স্থানীয় প্রশাসন গোপন তালিকা করছে বলেও গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় নাম আছে এমন কয়েকজন ব্যক্তিকে টেকনাফে প্রকাশ্যে ঘুরতেও দেখা যাচ্ছে। এর আগে সুন্দরবনে সমাজ-সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছিল। র্যাব সহায়তা দিয়ে তাদের নতুন জীবিকার মাধ্যমে পুনর্বাসিত করেছে। তবে ইয়াবা কারবার করে কোটিপতি বনে যাওয়া কারবারিরা কিভাবে সে ধরনের আত্মসমর্পণ করবে—এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর মধ্যে। এর মাধ্যমে প্রশাসনের সঙ্গে প্রতারণা করে ইয়াবা কারবারিদের এলাকায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে সন্দেহ করছে অনেকে। তবে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ইয়াবা কারবারি ও কারবারের ওপর অব্যাহতভাবে নজরদারি চালাবেন তাঁরা। শীর্ষ কারবারি যারা তারা আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারে। তবে জনসমক্ষে আত্মসমর্পণের সুযোগ তাদের থাকবে না বলে মনে করছেন র্যাব কর্মকর্তারা। আত্মসমর্পণের নামে এলাকায় ফেরানো হলেও রক্ষা পাবে না কারবারিরা। কারণ তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে।
পাঠকের মতামত: