এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত রয়েছে যে, গত বারের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং চিহ্নিত ইয়াবা তথা মাদক কারবারিরা নৌকা প্রতীক পাবেনা। তারা যতই দৌড়ঝাঁপ করুক না কেন তাদের নামের তালিকা কেন্দ্রে না পাঠানোর জন্য স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কক্সবাজারে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে সরকার দলীয় নৌকার প্রার্থী হতে মাদক কারবারিরা মরিয়া হয়ে উঠেছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি কক্সবাজারে সফরকারী দলীয় হাই কমান্ডের একাধিক নেতা জেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে পৃথক মত বিনিময়কালীন একই রকমের বক্তব্য রেখেছেন। মাদক সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তির নাম যেন কেন্দ্রে না পাঠানো হয়। বিতর্কিত কোন লোক যেন দলের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না পায়। তারপরও চিহ্নিত এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারিরা টাকার বান্ডিল নিয়ে জেলার কতিপয় নেতার পিছু ছাড়ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। জেলা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা নগদ নারায়ণ গ্রহণ করে গেল বারের বিদ্রোহী প্রার্থী, সাবেক শিবির ক্যাডার-জামায়াত নেতা (নব্য আওয়ামী লীগ) ও মাদক কারবারিদের তালিকা প্রেরণ করেছেন বলে জানা গেছে। তন্মধ্যে আত্মস্বীকৃত মাদক কারবারি, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামির নামও রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে গতবারে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী নব্য আওয়ামী লীগ নেতা দাবিদার সিরাজদ্দৌল্লাহর নাম কেন্দ্রে পাঠানো তালিকায় ২ নম্বরে রয়েছে। তিনি কুতুবদিয়া থানার-৬/১৬ নম্বর মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি। উত্তর ধুরুং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর ও সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা নূরুচ্ছফা স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি মতে জানা যায়, কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমির শামসুল আলমের সহোদর সিরাজদৌল্লাহ ওই মামলায় সম্পৃক্ত এবং হামলাকারী। স্থানীয়রা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ভাংচুর মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি, ইয়াবা কারবারি, মানব পাচারকারী এবং সন্ত্রাসী হয়েও দলের মনোনয়ন নিয়ে ক্ষমতার প্রভাব দেখাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি। তাদের বিরুদ্ধে দলীয় হাই কমান্ডের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ইতিপূর্বে ইয়াবার বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান শুরু হলে চিহ্নিত মাদক কারবারিরা আত্মগোপনে চলে যায়। এখন এলাকায় ফিরে টাকার বিনিময়ে তারা নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। পাশাপাশি ইয়াবাডনরা মেম্বার প্রার্থী হয়ে জয়ী হওয়ার আশায় এখন থেকে ঘরে ঘরে টাকা বিলি শুরু করে দিয়েছে। টেকনাফে চিহ্নিত ইয়াবা কারবারিরা নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়ানোর বিষয়কে কেন্দ্র করে ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে। ইয়াবা কারবারিদের এমন গণসংযোগ ও নৌকা প্রতীক পাওয়ার আজগুবি প্রচারে আলোচনার ঝড় তুলেছে নির্বাচনী এলাকায়। এতে হতাশ হয়ে পড়ছেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কুতুবদিয়া ৬টি ও টেকনাফে ৫টি ইউনিয়নে শতাধিক চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি তৎপর হয়ে উঠেছে।
সাধারণ জনগণ জানিয়েছে, ইয়াবা কারবারিরা দলীয় প্রার্থী হোক সেটা কোনভাবেই চান না সচেতন মহল। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রথম ধাপে আগামী ১১ এপ্রিল কক্সবাজার জেলার যেসব ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেগুলো হচ্ছে- মহেশখালীর ধলঘাট, হোয়ানক, মাতারবাড়ি, কুতুবজোম, কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল, বড়ঘোপ, দক্ষিণ ধুরুং, কৈয়ারবিল, লেমশিখালী, উত্তর ধুরুং এবং টেকনাফ সদর, হ্নীলা, সাবরাং, সেন্টমার্টিন ও হোয়াইক্যং ইউনিয়ন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ১৮ মার্চ। মনোনয়নপত্র বাছাই ১৯ মার্চ এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৪ মার্চ। ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাত থেকে ফুল নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন মোট ১০২ ইয়াবা কারবারি।
পাঠকের মতামত: