কক্সবাজার প্রতিনিধি :: গত এক বছরে কক্সবাজার থেকে ১১ জনকে দুর্নীতির অভিযোগে আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী ৬ জন, জনপ্রতিনিধি ১ জন এবং জনসাধারণ ৪ জন। কক্সবাজারে এখন পর্যন্ত ১৬৭টি দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করা হয়েছে। দুর্নীতির দায়ে দায়ের হওয়া মামলা তদন্তাধীন আছে ৬১ টি এবং বিচারাধীন রয়েছে ৬১ টি।
মঙ্গলবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানায় দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপপরিচালক মাহবুবুল আলম।
দুদকের উপস্থাপন করা প্রবন্ধে দেখা যায়, করোনা মহামারীর মধ্যেও দুর্নীতি থেমে ছিল না। কক্সবাজারের সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে দুদকে অভিযোগ গেছে ২২৩ টি। আর আগে ২০১৯ সালে গিয়েছিল ২২২ টি এবং ২০১৮ সালে গিয়েছিল ২৪৬ টি অভিযোগ।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. মাহমুদ হাসান। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ।
সভায় বক্তারা বলেন, কক্সবাজারে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে। এরমধ্যে মেগাপ্রকল্পও আছে অনেকগুলো। এসব প্রকল্পের উপরই নির্ভর করছে আগামীর স্বনির্ভর, উন্নত বাংলাদেশ। তাই এসব প্রকল্প থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে। দুর্নীতি লেগে থাকলে প্রকল্পগুলোর কোন সুফল আসবে না। তাই প্রকল্পগুলো স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দুর্নীতিমুক্তভাবে বাস্তবায়নের জন্য কক্সবাজারে একটি স্থায়ী দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যালয় করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, কক্সবাজারে একটি স্থায়ী কার্যালয় করার প্রস্তাবটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে। তবে যতই কার্যালয় করা হোক না কেন, নিজে যদি না পাল্টান তাহলে কার্যালয় দিয়ে কিছু হবে না।
তিনি বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তাধীন সময়ে তদন্তের স্বার্থে যেকাউকে দুদক গ্রেপ্তার করতে পারে। আইনে দুদককে সেই ক্ষমতা দেওয়া আছে। তবে আমি আশা করবো আমাদের নাগালে আসার আগেই যেন আপনারা ভালো হয়ে যান।
দুদক সচিব বলেন, আমাদের হাতে ধরা পড়লে মৃত্যু ছাড়া কোন পথ নেই। বেইজ্জতি হতে হতে শেষ পর্যন্ত ইজ্জততো থাকেই না, লজ্জা শরমে অসুস্থ হয়ে মারা যাবেন। কারো প্যারালাইজড হয়, কেউ স্ট্রোক করে, কেউ কেউ হার্ড এটাক্ট করে।
তিনি বলেন, দুর্নীতি একটি রোগ। পরের অর্থ খাওয়া, সম্পদ তৈরী করে পাহাড় করা, ভবিষ্যতের সংরক্ষণ করা এই মানসিকতা দেখে আপনারা বিশ্বাস করেন না এটি একটি রোগ। এই রোগ থেকে বের হতে না পারলে কোনভাবে আগানো যাবে না।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী হিল্লোল বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব আবু জাফর রাশেদ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল প্রমুখ।
পাঠকের মতামত: