আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার :::
সারাদেশে ডিজিটালাইজের ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু কক্সবাজারের ভূ-স্বর্গ নামে পরিচিত শহরতলীর দরিয়ানগরে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। ফলে মোবাইল-ইন্টারনেটসহ তথ্য প্রযুক্তি সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই এলাকার মানুষ। এ বিষয়ে আক্ষেপ করে এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মৌলভী আতিকুর রহমান বলেন, দেশের দুর্গম পার্বত্যাঞ্চলেও মোবাইল নেটওয়ার্ক আছে। অথচ কক্সবাজার শহরের একটি পর্যটন কেন্দ্র এবং জনবহুল এলাকা হলেও এখানে মোবাইল-ইন্টারনেট সুবিধা নেই।
দরিয়ানগর বড়ছড়া গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক বলেন, বড়ছড়া গ্রামে অফুরন্ত সৌন্দর্য রয়েছে। কিন্তু নেই শুধু তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ সুবিধা। এ কারণে ডিজিটালভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাও চালু করা যাচ্ছে না বলে জানান এলাকাবাসী।
তিনদিকে বনাঞ্চল ঘেরা পাহাড়, অন্যদিকে সমুদ্র, মাঝখানে একটি ছোট্ট নদী এঁেকবেঁকে বয়ে গেছে বঙ্গোপসাগরের দিকে। এরই মাঝে রয়েছে একটি ছোট উপত্যকা। কক্সবাজারের ভূ-স্বর্গ নামে পরিচিত এই গ্রামের নাম বড়ছড়া। এক নৈসর্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা এ গ্রামকে অনেকেই চেনে দরিয়ানগর নামে। কক্সবাজার শহরতলীর কলাতলী মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন এ গ্রামটি একটি পর্যটন কেন্দ্রও। কিন্তু গ্রামের হাজার হাজার মানুষ মোবাইল ফোন বা তথ্যপ্রযুক্তি সেবা থেকে বঞ্চিত।
স্থানীয়রা জানান, গত প্রায় দেড় দশক আগে কক্সবাজার শহরে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সুবিধা চালু হলেও এখনও বড়ছড়া বা দরিয়ানগর এলাকায় মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা হয়নি। ফলে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির আধুনিক এ সেবা থেকে বঞ্চিত এই এলাকার অধিবাসীরা। মোবাইল ফোনে কথা বলতে বা ইন্টারনেট চালাতে হলে স্থানীয়দের যেতে হয় সমুদ্র সৈকতে। কোন সময় এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে সাথে সাথে পুলিশী সাহায্যও চাইতে পারেন না তারা।
এ বিষয়ে বড়ছড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প ও সমাজ কমিটির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, নদী ও বনাঞ্চল ঘেরা বড়ছড়া গ্রামটিকে প্রকৃতির রাণী বলা হয়। অথচ মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় তথ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন এই গ্রামের বাসিন্দারা। একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির প্রকৌশলী জানান, দরিয়ানগরের মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে কলাতলীতে প্রায় সকল মোবাইল কোম্পানীর টাওয়ার আছে। অথচ দরিয়ানগরে কোন কোম্পানীর একটি রিপিটারও নেই।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান জানান, দরিয়ানগর বড়ছড়া থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার এলাকা নির্জন হওয়ায় উক্ত অঞ্চলে প্রায়শ: দুর্বৃত্তরা পর্যটকদের উপর হামলে পড়ে। কিন্তু মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্যও চাওয়া যায় না।
তিনি দরিয়ানগরে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হলে হিমছড়িসহ মেরিন ড্রাইভের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন।
স্থানীয় ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন দরিয়ানগরে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হলে এলাকাটি শিক্ষাদীক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
এলাকাবাসী জানান- মোবাইল কোম্পানীর টাওয়ার স্থাপন বিষয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটকের মহাব্যবস্থাপকসহ বেসরকারী সকল কোম্পানীর কাছে ধর্ণা দেয়া হয়েছে। সেসাথে প্রশাসনের কাছেও বারবার আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
দরিয়ানগরে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্সবাজার ক্যাম্পাসের কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতমবুদ্ধ দাশ।
তিনি বলেন- এ বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রশাসনকে বলা হয়েছে। এছাড়া মোবাইল কোম্পানিগুলো চাইলেও ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিতে টাওয়ার বসাতে পারে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, দরিয়ানগরে টাওয়ার স্থাপনের জন্য মোবাইল কোম্পানিগুলো খাস জমি বরাদ্দ চাইলে দেওয়া হবে। এছাড়া নিবনির্মিত দরিয়ানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন অথবা ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিতেও টাওয়ার স্থাপন করা যেতে পারে। এ জন্য সর্বপ্রথম মোবাইল কোম্পানিগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে।
পাঠকের মতামত: