বিশেষ প্রতিবেদক : শহরতলীর দরিয়ানগরে একজন বয়োবৃদ্ধ কৃষককে নির্যাতনের ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর বাঁকা পথ ধরেছেন কক্সবাজার সদরের বদলীকৃত এসিল্যান্ড নাজিমউদ্দিন। রবিবার সন্ধ্যায় আমার ওয়াল থেকে ভিডিও ছাড়ার পর দ্রুত তা ভাইরাল হয়ে পড়ে। এরপর আমার কাছে নানা অনুরোধ ও প্রস্তাব আসতে থাকে। আমি জ্বালাতন থেকে বাঁচতে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখি। রাত ৮ টার দিকে এসিল্যান্ড নাজিমউদ্দিন তার দলবল নিয়ে সরাসরি আমার বাসায় হাজির হন। তিনি বলেন, ‘ভাই আমার চাকরী থাকবে না, আমি স্ট্রোক করব, আমার স্ত্রীর দুইদিন পর বাচ্চা হবে, দয়া করে পোস্টটি মুছে ফেলুন।’ তার কথা শুনে আমার মনটা নরম হয়ে গেল। আমি তাকে বললাম, আমি নি:শর্তভাবে আল্লাহর ওয়াস্তে পোস্টটা মুছে ফেলছি, এরজন্য আমি কোন বিনিময় চাই না।’ কিন্তু পোস্টটা ডিলিট করার পর এবার নতুন আবদার তুললেন তার সাথে আসা দালালেরা; যারা আবার নিজেদের জেলা ছাত্রলীগের নেতাও পরিচয় দেয়। তারা বলেন, ‘এবার আপনি একটা স্ট্যাটাস দেন যে, ওটা ফেইক ছিল।’ এবার আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। এসে গেল উত্তেজনা। সেই উত্তেজনার মাঝেই তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললাম- আমি নিজে ভিডিওটি করেছি। শত মানুষ এটা দেখেছে। কেউ কেউ অন্ধ হতে পারে, সবাই অন্ধ নয়। সুতরাং বাড়াবাড়ির ফল ভাল হবে না। এরিমাঝে আমার বাড়ির ওঠানে অনেক মানুষ জমে গেল। এসিল্যান্ড আমাকে বললেন, ‘ডিসি স্যার আমাকে বলেছিলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্টে মামলা করতে, কিন্তু আমি চাইনি আপনার স্ত্রী-সন্তান কষ্ট পাক।’ একথা শুনে আমার মুখ থেকে মৃদু হাসি বের হল, যে প্রতিক্রিয়া আমার ইচ্ছায় হয়নি। হয়ত: মনের ভেতরের প্রতিক্রিয়া এটি! এসিল্যান্ড নাজিমকে বললাম, আপনি একজন সরকারের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা ও বিচারক। আপনি আমার বাসায় এসেছেন এবং আপনার সম্মানে আমি পোস্ট মুছে ফেলেছি। আমার ল্যাপটপে সংরক্ষিত ভিডিও এবং ছবিও মুছে ফেলেছি। তার মানে এই নয়, দুনিয়া থেকে এটা মুছে গেছে। আসলে সত্যের বিপক্ষে কখনও জয়ী হওয়া না। আমি তাকে পরামর্শ দিলাম- যতদ্দুর হয়েছে, চেপে যান। কোন বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তেতোঁ বের হয়। এক ঘন্টা ধরে আরো নানা কথাবার্তার পর রাত ৯টার দিকে তিনি বিদায় নিলেন। এরপর আমার মনে কষ্ট ভর করল। রাতে ঘুমাতে পারলাম না। গত দুইদিন ধরে পত্রিকায় নিউজও পাঠাতে পারলাম না। এরিমাঝে দিবানিশি ফোন আর ফোন এবং পোস্ট ডিলিট করার কৈফিয়ত! এমনকি সরকারি দলের অনেক জনপ্রতিনিধিও আমাকে প্রশ্ন করেছেন, এই ভিডিও থাকার পরও আমি কেন ৫/৬ মাস ধরে তাদের কষ্ট দিলাম! তখন দিলেতো বহু মানুষ তার (এসিল্যান্ড নাজিম) অত্যচার থেকে বেঁচে যেত! আরো বহু কথা। একই প্রশ্ন ফেসবুকেও কেউ কেউ তুলেছেন। উত্তর দেয়ার মত মনের অবস্থা আমার ছিল না। পাশাপাশি আমি আশা করেছিলাম যে, এসিল্যান্ড নাজিমউদ্দিন তার ভুল বুঝতে পারবেন, তিনি অনুতপ্ত হবেন এবং নিজের ভুলগুলো সংশোধন করে একজন ভালো হিসাবে জনসেবায় ব্রতী হবেন। কারণ মানুষ বিপদে পড়লে নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং নিজেকে সংশোধন করার চেষ্টা করে। কিন্তু ঘটনার পর থেকে এই পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দু:খজনকভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, এসিল্যান্ড নাজিমউদ্দিনের শুভবুদ্ধির উদয় হয়নি। তিনি বাঁকা পথ ধরেছেন। তার অপকর্মের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য তিনি কিছু লোক ভাড়া করেছেন এবং দু:খজনকভাবে এদের মধ্যে কিছু হলুদ সাংবাদিকও রয়েছে। কিন্তু ভাড়াটেরা সামান্য টাকার জন্য যে এত নির্লজ্জ হতে পারে- তা ভাবলেই সাংবাদিকতা পেশার ভবিষ্যত নিয়ে আমার মধ্যে ভয়ানক এক উৎকন্ঠা আসে। কিছু লোক এত অন্ধ কী করে হতে পারে? ওদের প্রতি আমার আসলেই করুণা হয়! অবশ্য পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামিন এর উত্তর দিয়ে দিয়েছেন- ‘আমি যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করি, আর যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করি।’ রোববার এসিল্যান্ড নাজিমউদ্দিনকে যখন বলেছিলাম ভিডিওটি আমি নিজেই করেছি এবং বহু মানুষ দেখেছে। তখন তিনি এবং তার সাথে আসা কথিত ছাত্রলীগ নেতারা কোন চ্যালেঞ্জ করেননি। বরং বললেন, যদি আপনি ভিডিওটি নিয়ে আমার সাথে দেখা করতেন! হ্যাঁ, অবশ্যই আমি এসিল্যান্ড নাজিমউদ্দিনের সাথে দেখা করতাম যদি তার অবৈধ উপার্জনের অংশীদার হওয়ার ইচ্ছা আমার থাকত। কিন্তু সেই ইচ্ছা আমার ছিল না। কারণ আমি নিশ্চিত যে, বিচার দিনের মালিক একদিন এই হিসাব আমার কাছ থেকে নেবেন। আর এই ভয়েই আমি খালপাড়ে শনের তৈরি রাজপ্রাসাদে শান্তি খুঁজি। যেখানে আমার পিত্রালয় থেকে এখনও নিয়মিত চাল-ডাল আসে। তাহলে আমি ভিডিওটা তখন ছাড়লাম না কেন? আসলে তখনকার প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার উপর আমি আস্থা হারিয়েছিলাম। আমার মনে হয়নি যে, এই ভিডিওতে তার বিরুদ্ধে কোন একশন নেয়া হবে। বরং আমিই উল্টো হয়রানির শিকার হতে পারি। তখন এরচেয়ে অনেক বেশি ভাড়াটেও তিনি পেয়ে যেতেন। আমি চেয়েছি, আরো মানুষ তাকে চিনুক-জানুক। আমি পোস্টটি মাত্র এক ঘন্টার মধ্যেই ডিলিট করে দিতে বাধ্য হলেও আমার ভিডিও ও ছবি ফেসবুক থেকে ডাউনলোড করে অনেকেই আলাদা পোস্ট দিয়েছেন এবং সে পোস্টগুলো ইতোমধ্যে কয়েক লক্ষ বার শেয়ার হয়েছে। আর তখন কি এ প্রতিক্রিয়া হত? আর এ প্রতিক্রিয়ার পরও তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা হয়, তাই দেখার বিষয়। কারণ ইতোমধ্যে এসিল্যান্ড নাজিমসহ তার ভাড়াটেরা ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। চট্টগ্রামের এক টিভি সাংবাদিক ভিডিওটির ব্যাপারে লিখেছেন যে, ঘূর্ণিঝড়ের ১০ নম্বর সতর্কতা সংকেতের সময় ওই বৃদ্ধ ঘর থেকে বের না হওয়ায় তাকে জোর করে বের করা হচ্ছে! তবে তিনি বলেননি সেটা কোন দিন বা কোন তারিখের ঘটনা? আসলে তিনি কখনও সেই তারিখটি বলতে পারবেন না। কারণ কক্সবাজারে এ বছর কখনও ১০ নং সতর্কতা সংকেত জারি হয়নি এবং গতবছরও না। এছাড়া ঘটনাস্থল দরিয়ানগর সমুদ্র সৈকতে কোন বসতবাড়িও নেই এবং সেখানে কোন লোকজন বসবাসও করে না। ব্যক্তি মালিকানাধীন ওই জমিগুলোতে শুধু কৃষিকাজ হয়। আবার ভিডিওটা ভাল করে খেয়াল করে দেখুন- কোন পাতা নড়ছে কীনা। যদিও সমুদ্রপাড়ে প্রায় সময় বহমান বাতাস থাকে। আবার কক্সবাজারের এক ভাড়াটে লিখেছেন, ওই বৃদ্ধটি একজন দখলবাজ! দখলবাজের শাস্তি এরকমই হওয়া উচিৎ! আমার ব্যাপারেও বাজে মন্তব্য করেছে কোন কোন ভাড়াটে। আমার যদি ক্ষমতা থাকত, তাহলে এসিল্যান্ড যেভাবে কৃষককে কান ও কলার ধরে টেনেছে একইভাবে আমিও তাদেরকে ধরে ঘটনাস্থলে এনে বলতাম যে, তোর বক্তব্য প্রমাণ কর। আমি জানি, তারা সেটা কখনও পারবে না এবং করতে আসবেও না। সকলের অবগতির জন্য আরো উল্লেখ করতে চাই যে, ভিডিওতে যতটুকু এসেছে, তাতেই মানুষ ভয়ানক ক্ষুব্দ হয়েছে। কিন্তু যদি আমি ঘটনার শুরু থেকে ভিডিও করতে পারতাম, তাহলে প্রতিক্রিয়া হত অনেক বেশি। ঘটনার দিন আমিসহ আরো অসংখ্য ব্যক্তি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। আমি দেখলাম, রমজান মাসের একদিন সকালবেলা। এসিল্যান্ড নাজিমউদ্দিন তার সহকারীদের নিয়ে দরিয়ানগর সমুদ্র সৈকতে নেমে জমি মাপতে শুরু করলেন। কিছু স্থানে খুঁটিও দিলেন। যেখানে বয়োবৃদ্ধ কৃষক মোহাম্মদ আলী ওরফে নফু মাঝি কৃষি কাজ করতেন। এসময় তিনি এসিল্যান্ডকে বললেন, এটা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি। খুঁটি আরো সামনে দেন। কৃষক নফু মাঝির কথা শেষ না হতেই এসিল্যান্ড অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে তার দিকে তেড়ে যান এবং থাপ্পর ও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এরপর মাটি থেকে তাকে জামা ধরে টেনে তুলে কান ও কলার ধরে টানতে টানতে তাকে মেরিন ড্রাইভে নিয়ে আসেন। কিন্তু থাপ্পর ও ধাক্কা মারা এবং টেনে তোলার ঘটনা ভিডিওতে ধারণ করা যায়নি। কারণ এই দৃশ্য সচক্ষে দেখার পরই বাকী অংশ ভিডিও করার জন্য আমি ক্যামেরা আনতে যাই। দরিয়ানগরের দোকানদারসহ অসংখ্য মানুষ এ ঘটনা দেখেছে। পরে নফু মাঝিকে ভূমি অফিসে নিয়ে যাওয়ার পর তার জমিদার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ভূমি অফিসে যান। সেখানে নিজের ভুল বুঝতে পেরে এসিল্যান্ড ভিন্ন চাল চালেন। তিনি বৃদ্ধকে ২ বছরের সাজা দেয়ার হুমকী দিয়ে একটি স্বীকারোক্তি আদায় করেন এবং স্ট্যাম্প গ্রহণ করেন। পরে তাকে ছেড়ে দেন। আমার প্রশ্ন হল, এসিল্যান্ড যদি সাধুই হবেন তাহলে কেন নফু মাঝিকে ছেড়ে দিলেন, আর কেনই বা ভিডিও ধারণ করলেন। কথিত ঘূর্ণিঝড় থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে তিনি এই ধরনের কয়জনের ভিডিও ধারণ করেছেন? কথায় আছে, ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’! ‘গাধা জল খায় ঘোলা করে খায়! এই পরিস্থিতিও হয়ত: তাই হবে।
প্রকাশ:
২০১৮-১১-১৩ ১৪:০৬:৫২
আপডেট:২০১৮-১১-১৩ ১৪:০৬:৫২
- দুর্নীতির আখড়ায় কক্সবাজার সিটি কলেজ
- চকরিয়ায় ব্যবসায়ীকে ঢেকে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা ছিনতাই
- বদরখালী সমিতির ১১টি মৎস্য প্রকল্পের নিলাম নিয়ে বিরোধ
- রামুতে আপন ভাতিজিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি
- রামুতে ল্যাপটপ পেলেন ৮০ নারী ফ্রিল্যান্সার
- চকরিয়ায় আওয়ামিললীগ ক্যাডার নজরুল সিণ্ডিকেটের দখলে ৩০ একর বনভুমি:
- চকরিয়ায় শিক্ষা ক্যাডার মনিরুল আলমকে ঘুষের বদলেগণপিটুনি
- চকরিয়ার বিষফোঁড়া সিএনজি-টমটম স্টেশন
- কুতুবদিয়ায় গর্তে ১০ লক্ষ মণ পুরাতন লবন,লোকসানের শংকা চাষীরা
- চকরিয়া আসছেন চরমোনাই পীর মুফতি রেজাউল করিম
- চকরিয়ায় দুই বেকারি-সহ ম্যানেজারদেরকে এক লাখ টাকা জরিমানা
- চকরিয়া সদরের বক্স রোড সম্প্রসারণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ
- বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে গেলেন পদত্যাগ করা বিতর্কিত অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম
- চকরয়ার ঠিকাদার মিজান গ্রেফতার, কোটি টাকার ঋণের জেল-জরিমানার দায়ে
- কক্সবাজার আবাসিক হোটেলে ৭০ ইউপি সদস্যের ‘গোপন বৈঠক’, আটক ১৯
- চকরিয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, ২টি ডাম্পার ও স্কেভেটর জব্দ
- চকরিয়ার রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় : কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
- রামুতে ট্রেনে কাটা পড়ে মোটর সাইকেল আরোহী দুই যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু
- ঈদগাঁও’র নবাগত ইউএনও বিমল চাকমা
- চকরিয়ার সাবেক এমপি জাফর আলম, সালাহউদ্দিনসহ আওয়ামী লীগের ৭৩৬ জন আসামী
- উত্তপ্ত রামু সরকারি কলেজ: অধ্যক্ষ মুজিবের অপসারনের দাবিতে কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবনে তালা
- কুতুবদিয়ায় গর্তে ১০ লক্ষ মণ পুরাতন লবন,লোকসানের শংকা চাষীরা
পাঠকের মতামত: