অনলাইন ডেস্ক:
রাখাইন রাজ্যের চলমান জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে গতকাল সোমবার অন্তত ১১ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ক’দিন আগেই রাখাইনের সাম্প্রতিক জাতিগত নিধন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়ায়।
সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই জাতিসংঘের তরফ থেকে আরও তিন লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কার কথা জানানো হয়। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বরের ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শেষ হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও চলতি মাসের ৫ তারিখে (বুধবার) এএফপির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাখাইনে অভিযানে দ্বিগুণ শক্তি প্রয়োগ করার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা স্রোত জোরালো হয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী গতকাল বুধবার সেই স্রোতে এসে মিশেছেন আরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা।
জেনেভায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ইউএনএইচসিআর-এর মুখপাত্র অ্যাডরেইন এডওয়ার্ড বলেন, ‘আমরা আবারও রাখাইন সহিংসতার শুরুর সময়কার মতো পূর্ণ সতর্ক অবস্থায় পৌঁছে গেছি। ১১,০০০ মানুষের একদিনে পালিয়ে আসার ব্যাপারটা একটা বিশাল সংখ্যার ব্যাপার।’
ইউএনএইচসিআর-এর বলছে, সোমবার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এদের কারও কারও বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পোঁছাতে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লেগেছে। পরিবারের কেউ এসেছেন কেবল শিশুদের সঙ্গে নিয়ে। কেউ এসেছেন সর্বস্ব ফেলে রেখে। অনেক নারী এবং শিশু সাঁতার জানে না। অথচ সাঁতরে নাফ নদী পার হওয়ার আগেও তাদের কারও কারও পানিপথ অতিক্রম করতে হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সাঁতারুদের সাহায্য নিয়েই এসব পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাদের।
ইউএনএইচসিআর-এর মুখপাত্র অ্যাডরেইন এডওয়ার্ড বলেন, ‘ঘটনার ছয় সপ্তাহ পার হওয়ার পরও বিপুল সংখ্যক মানুষ পালিয়ে আসছে। পরিস্কার কথা হলো, আমাদের আরও অনেক মানুষের পালিয়ে আসার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
কথিত ক্লিয়ারেন্স অপারেশন জোরদারের পর থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। তখন থেকে পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে শুরু করে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দেয় সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে। নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। সম্প্রতি অভিযান জোরদার হওয়ার প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা স্রোত ভয়াবহ আকার নেয়।
পাঠকের মতামত: