বাঁশখালীতে পল্লী সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নামে টাকা সংগ্রহ , ৩ সদস্য আটক, ৬ লাখ টাকা উদ্ধার
বাঁশখালী প্রতিনিধি :: বাঁশখালীতে পল্লী সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নামে তিন শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কালীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এডভোকেট আ ন ম শাহাদত আলম এ চক্রের ৩ সদস্যকে জনতার সহযোগিতায় ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তারের কার্যালয়ে হাজির করলে তাদের কাছে রক্ষিত ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। কালীপুর ইউনিয়নের পালেগ্রামের মৃত কবির আহমদের পুত্র মোহাম্মদ হাসান তার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে প্রতারনা করার অভিযোগে রাতে মামলা দায়ের করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে বাঁশখালীর কালীপুরে অফিস নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে মানিকগঞ্জ, ঘিওর, বানিয়াজুরী বাজার এলাকার পল্লী সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা (গভ: রেজি নং-এস-১০৭৮৯(৭৮৬)২০১০ইং) নামে সংগঠনটি। তারা বাঁশখালীর কালীপুর, বাহারছড়া, সাধনপুর, বৈলছড়ি, কাথারিয়া ইউনিয়ন, পৌরসভার জলদীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে সদস্য সংগ্রহ করে তাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ শুরু করে। তাছাড়া ৫ হাজার টাকা জমা করলে ৫০ হাজার টাকা, ১০ হাজার টাকা জমা করলে ১ লক্ষ টাকা ঋণ দেবে এ প্রতিশ্রুতিতে ৩ শতাধিক লোকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে। তাদের মধ্যে কিছু লোককে ঋণ বই দিলেও অধিকাংশ লোককে হাতের লেখা টোকেন দেয়া হয়।
এদিকে সোমবার অনেককে ঋণের টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা টাকা না পেয়ে কালীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এডভোকেট শাহাদত আলমকে জানান। তিনি বিভিন্নস্থান থেকে এ চক্রের ৩ সদস্যকে ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তারের কার্যালয়ে হাজির করেন দুপুরে। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও বিভিন্নস্থানে খবর নিয়ে পল্লী সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নামে তালিকাভুক্ত কোন সংগঠনের অস্ত্বিত্ব পাননি। পরে আটককৃত ৩ সদস্য ফেনীর বিষ্ণুপুর এলাকার এম সাইফুর রহমানের স্ত্রী নাছিমা খান (৪৪), চট্টগ্রামের খুলশী জনতা কলোনী এলাকার আবু বক্কর ছিদ্দিকের পুত্র ফানা উল্লাহ বাহার প্রকাশ মাসুদ (৪৫) এবং ফেনীর বাহার উদ্দিন প্রকাশ আবেদকে (৪৩) জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার ৬৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আরো অনেক টাকা প্রদানকারি সদস্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে ভিড় জমায়। পরে উদ্ধারকৃত টাকা কিছু সদস্যের ঋণ বই দেখে তাদের প্রদান করা হয়।
জানা যায়, এ চক্রের ৬ জন সদস্য থাকলেও অপর ৩ জন পালিয়ে যায়। আটক তিনজন জানান, বিগত কয়েকদিনে উত্তোলনকৃত টাকা তাদের ম্যানেজারকে জমা দেয়া হয়েছে। এ ম্যানেজার চট্টগ্রাম শহরে চলে গেছেন। আটক তিনজন তাকে বার বার টেলিফোন করলেও তিনি আসেন নি। কালীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এডভোকেট শাহাদত আলম বলেন, আমার এলাকার কয়েকশ মানুষের কাছ থেকে ঋণ দেওয়ার নামে টাকা নিয়েছে তারা। অধিকাংশ লোককে কোন রশিদ দেয়নি। একটি টোকেন দিয়েছে যার সাথে তাদের নামের মিল নেই। সন্দেহ হলে তাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হলে সব ফাঁস হয়ে পড়ে।
বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকার লোকজনের কাছ থেকেও তারা টাকা নিয়েছে। চক্রের ৩ সদস্যকে আটকের খবর পেয়ে এখানে এসেছি। জানি না সাধারন জনগন তাদের টাকাগুলো পাবে কিনা।
বাঁশখালী থানার এস আই নাজমুল হক বলেন, তাদের কোন ডকুমেন্ট নেই। তরা প্রতারক। আইনগত প্রক্রিয়ায় যা হওয়ার তাই করা হবে বলে তিনি জানান ।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, পল্লী সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নামে সরকারের তালিকাতে রেজি:কৃত কোন সংগঠন পাওয়া যায়নি। তারা জনগনের কাছ থেকে অনেক টাকা আদায় করেছে। আইনের মাধ্যমে সে টাকা উদ্ধার করে যাদের টাকা তাদের ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।
পাঠকের মতামত: