শাহীন মাহমুদ রাসেল :: মহা-সড়ক তো নয় যেন মহা-যন্ত্রণা। রাস্তার কার্পেটিং উঠে গেছে অনেক আগেই। বসানো হয়েছে ইটের সিলিং। সড়কে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। কার্পেটিং না থাকায় চারিদিকে ধুলা উড়ছে। সড়কের আবস্থা বর্ণনা করা কঠিন। এক কথায় মানচিত্রের পৃষ্ঠার মতো হয়ে গেছে।
মানচিত্রে যেমন সাগর, নদী, হাওর, বাঁওড় অঙ্কিত থাকে, মহাসড়কেও তেমন আছে। এটা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লিংক রোডের দৃশ্য। যা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কার্পেটিং না থাকায় সড়কে শুধু ধুলো আর ধুলো। এ ধুলো থেকে কিছুতেই নিস্তার পাচ্ছে না যাত্রীসহ পথচারীরা। ফলে চরম অস্বস্তিতে পথ চলতে হচ্ছে। অস্বস্তিতে আছে ব্যবসায়ীরাও। ধুলোর কারণে তৈরী হয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। এতে মানুষের সর্দি, চর্মরোগ, কাশিসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বাড়ছে।
কক্সবাজারের প্রায় সব আঞ্চলিক ও মহাসড়কগুলোর একই আবস্থা। খানাখন্দে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, টেকনাফ-কক্সবাজার, শহরের সব সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় এ সড়কগুলো এখন গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী ও চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এসব সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি যাত্রী ভোগান্তি ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এতে মানুষের স্বস্তির চেয়ে দুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমানে এই ষ্টেশনটি ‘ক্যানসার আক্রান্ত ষ্টেশন’ বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় অনেকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সড়কটি পুনর্নির্মাণের আশ্বাস পেলেও খানাখন্দে কার্পেটিং না করে মাঝে মাঝে ইট আর বালি দিয়ে সংস্কারকাজ চালায় সওজ বিভাগের লোকজন। কয়েক দিন পর সেটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
কক্সবাজার শহরের সড়ক-মহাসড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়ে ইতিমধ্যে নাগরিক সভা করেছে সচেতন মহল। তারা দ্রুত বেহাল সড়ক সংস্কার করার আলটিমেটাম দেয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যোগাযোগমাধ্যম হচ্ছে লিংকরোড। টেকনাফ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার যাতায়াতকারী যাত্রীদের বেশিরভাগ এই পথেই যাতায়াত করেন। পর্যটক শহরসহ বিভিন্ন স্থানে এবং পুরো কক্সবাজার জেলার যোগাযোগের মাধ্যম হলো এই সড়ক।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন আমদানি-রফতানি কাজে ব্যবহৃত হয় শত শত ট্রাক, যাত্রী পরিবহনে আরো হাজার হাজার বাসসহ অন্যান্য পরিবহন চলাচল করে। শুধু লিংকরোড নয় জেলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রেল লাইনে চলমান কাজ আর সড়কের কার্পেটিং না থাকার কারণে এতে করে ধুলার বন্যা বইছে সড়কে। রাস্তার ধারের মার্কেট সর্বত্র ধুলোয় দূষিত। শুধু লিংকরোড নয় রামু বাইপাসসহ প্রতিটি সড়কেই উড়ছে ধুলোবালি।
স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, পর্যটক, অফিসগামী চাকরিজীবী, গাড়ির চালক, সবাই অতিষ্ঠ ধুলোবালিতে। সড়কের দু’পাশের বাসা-বাড়ি দোকানপাটে ধুলোর জোয়ার। যাত্রীবাহী বাস, অটোরিকশা, সিএনজি থেকে শুরু করে ভিআইপি যাত্রীদেরও ধুলোর বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। যানবাহনের গতির সাথে উড়ে আসা ধুলায় সয়লাব আশপাশের এলাকা। দোকানপাট, হোটেল সবকিছুতে ধুলোর আস্তর জমছে। লিংকরোডের চারিদিকে এখন ধুলোবালির রাজত্ব। উড়তে থাকা ধুলোবালিতে ঝাপসা হয়ে আসে দৃষ্টিসীমা। ধুলোবালির মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দা আর পথচারীদের।
লিংকরোডের এক হোটেল কর্মচারি রিয়াদ বলেন, যানবাহনের গতির সাথে বাতাসে উড়ে আসা ধুলায় হোটেলের টেবিল চেয়ার সাদা হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর মুছেও চেয়ার টেবিল পরিষ্কার রাখা যাচ্ছে না। কম্পিউটারের পার্টস বিক্রেতা শাহী কামরান বলেন, দোকান খুলে বসতেই চারিদিকে ধুলো। ধুলোর আস্তর জমছে দোকানে। রিকশা-ভ্যান যাত্রী ও পথচারীদের অবস্থা আরও নাজুক। কোনোভাবেই ধুলো থেকে রেহাই মিলছে না।
ডা: রমজান আলী শাহীন বলেন, ধুলো চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি করে। ধুলোবালির কারণে বায়ু দূষণ হয়। বায়ু দূষণের কারণে সব বয়সের মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও চর্মরোগ রোগ দেখা দিতে পারে। ধুলোবালি থেকে রক্ষা পেতে তিনি মাক্স ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।
পাঠকের মতামত: