আন্তর্জাতিক ডেস্ক ::
ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর থেকেই কাশ্মীরের পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি রয়েছে এবং অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছেন ক্ষুব্ধ কাশ্মীরিরা।
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাকা গুলি ছুড়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এতে কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও শতাধিক মানুষ।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম জিও নিউজসহ বেশ কিছু গণমাধ্যমে বুধবার কাশ্মীরে হতাহতের খবর জানানো হয়। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন, পুলিশের ধাওয়া খেয়ে এক যুবক ঝেলাম নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মারা গেছেন।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর ভারতীয় সেনাবাহিনী বুলেট, টিয়ারগ্যাস এবং গোলাবারুদ নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রীনগর, পুলওয়ামা এবং বারামুলা।
পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে বিবিসি এবং রয়টার্স জানিয়েছে, কাশ্মীরিরা এখন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। নিউ ইয়র্কের প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে কাশ্মীরকে বর্তমানে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রায় সাত দশক ধরে বিশেষ মর্যাদা পেয়ে আসছিল কাশ্মীর। কিন্তু হঠাৎ করেই গত সোমবার কাশ্মীরের ওপর থেকে বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয় ভারত। তারপর থেকেই থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেখানে।
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। সেখানকার সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ থাকায় গত কয়েকদিন ধরেই কাশ্মীরের বাইরে থাকা লোকজন তাদের পরিবারের সঙ্গে কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছে না। কাশ্মীরের ভেতরে যারা আছেন তারাও অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
কেউ দিনের বেলা গাড়ি নিয়ে বের হলে সেনারা আটকাচ্ছে। রাতের দিকে পাহারা কম থাকে। সে কারণে লোকজন রাত ১০টার পর বাইরে যাচ্ছেন। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের প্রতিবাদ হচ্ছে, লোকজন বিক্ষোভ করছে। সেনারাও পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে।
তবে শহরের হাসপাতাল সংলগ্ন ওষুধের দোকানগুলো খোলা আছে। নার্সিংহোম, হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে যাওয়ার কোন উপায় নেই। যাদের গাড়ি নেই, তাদের কেউ অসুস্থ হলে কিভাবে হাসপাতালে নেবে? কারণ অ্যাম্বুল্যান্স ডাকাতো সম্ভব হচ্ছে না কারণ সব ফোনের সংযোগই তো বন্ধ। কোথাও আগুন লাগলেও একই অবস্থা হবে। তিনদিন পর সেখানে টিভির সম্প্রচার চালু হয়েছে।
টানা তিনদিন ধরে কাশ্মীরে সবকিছু বন্ধ। বাজার খোলা নেই, এটিএম বুথও বন্ধ। কেউ চাইলেও ঘর থেকে বের হতে পারছে না, কারো সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছে না। কার্যত বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এই ভূস্বর্গ।এভাবে সব কিছু বন্ধ থাকলে দরিদ্র লোকজন তীব্র খাদ্য সংকটে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনের এমন পরিস্থিতির কারণে খাবার এবং অর্থ সংকটের মধ্যে পড়েছেন কাশ্মীরের মানুষ। অনেকের ঘরেই খাবার মজুদ নেই। আবার যাদের ব্যাংকে টাকা আছে তারাও এটিএম বুথগুলো বন্ধ থাকার কারণে টাকা তুলতে পারছেন না।
চলমান অস্থিরতার মধ্যেই রোববার রাতে ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করা হয়। এর ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই তাদের দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকেই একের পর এক নেতা, উপদেষ্টা, রাজনীতিবিদকে গ্রেফতার করা হয়।
পাঠকের মতামত: