ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

উখিয়ায় ২২টি করাতকলে চোরাই কাঠ চিরাই অব্যাহত

শফিক আজাদ, উখিয়া থেকে ::3463ba25-324b-4987-b35b-166648bc4361-300x260

কক্সবাজারের উখিয়ায় বে-আইনী ভাবে স্থাপিত ২২টি করাত কলে দিনরাত উপেক্ষা করে চোরাই কাঠ চিরাই বাণিজ্য চলে আসলেও দেখার কেউ নেই। এতে বন বিভাগের রক্ষিত ও সংরক্ষিত বনজ সম্পদ ইতিমধ্যে উজাড় হয়ে যাওয়ায় বনদস্যুদের কবল রেহাই পাচ্ছেনা স্থানীয় গ্রামীণ বসতভিটার ফলজ,বনজ বৃক্ষ, সড়ক ও উপ-সড়কের ছাঁয়া বৃক্ষ, ব্যক্তি মালিকানাধীন বনায়ন ও বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন সামাজিক বনায়নের কঁচি-কাঁচা গাছ-গাছালি। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হয়ে প্রাকৃতিক নানান বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে।
সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় উখিয়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা সরওয়ার আলম সামাজিক বনায়ন প্রকল্পে হাজার হাজার হেক্টর বাগানে সংঘবদ্ধ কাঠ চোর ও বনদস্যূরা হানা দিয়ে অবাধ গাছ-গাছালি লুটপাট করে স’মিলে সরবরাহ করার অভিযোগ উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, গাছ কর্তন কালে বাধা দিলে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা বনকর্মীদের উপর হামলা চালায়। ইনানী সহ ব্যবস্থাপনা বনরক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী দ্বার্থহীন কন্ঠে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যেভাবে নির্বিচারে গ্রামীন জনপদের ফলজ ও বনজ বৃক্ষ উজাড় করা হচ্ছে তাতে আগামী প্রজন্মরা দেশের সবুজ সম্পদ সম্পর্কে ধারণা থেকে বঞ্চিত হবে এবং এলাকা লোকজন দেশীয় উৎপাদিত ফল ফলাদি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি এব্যাপারে কাঠ চোরদের শক্ত হাতে দমন করতে সামাজিক ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান।
এক কালের বন সম্পদে ভরপুর এ উপজেলার ২৪ হাজার হেক্টর বনজ সম্পদ রক্ষার মহা পরিকল্পনা নিয়ে ১৯৮৭ সনে তৎকালীন সরকার লট নিলাম প্রথা বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি এ উপজেলায় স’মিলের পারমিট সরবরাহ নিষিদ্ধ করে। উচ্চ আদালতের আইনী জটিলতার সুযোগ নিয়ে উখিয়ার রতœাপালং ইউনিয়নের মাতবরপাড়ায় ১টি করাত কল নির্বিচারে বৈধ-অবৈধ কাঠ চিরাই অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি এলাকার কতিপয় রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রকাশ্যে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি সরকার ঘোষিত সংরক্ষিত বন এলাকায় সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে করাতকল স্থাপন করে চোরাই কাঠ চিরাই বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। যে কারনে বন সম্পদের উপর বিরুপ প্রভাব পড়তে থাকে। নির্বিঘেœ নিরাপদে চোরাই কাঠ মজুদ,চিরাই ও বাজারজাত অবাধ সুযোগ থাকায় সংঘবদ্ধ বনদস্যু চক্র ও কাঠ চোরের সংখ্যা আশংখাজনক ভাবে বেড়ে গেছে। ফলে বন-সম্পদ লুটপাট ও পাচার বেড়ে যায়। স্থানীয় বন বিভাগ মাঝে মধ্যে লোক দেখানো ও দায় এড়ানোর অভিযান চালিয়ে ২/৩টি করাত কলের অবকাঠামো ধ্বংস করলেও সংঘবদ্ধ করাতকল সিন্ডিকেট পুনরায় রাতারাতি স্থাপন করে কাঠ চিরাই অব্যাহত রেখেছে।
বন বিভাগের তালিকা মতে এ উপজেলায় ১৩টি অবৈধ করাত কল চালু থাকার কথা স্বীকার করলেও মুলত বিভিন্ন স্থানে ১৯টি অবৈধ করাত কল চালু রয়েছে। তৎমধ্যে পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী, পুর্ব রহমতের বিল, তাজনিমার খোলায় ৪টি, কুতুপালং ১টি, ফলিয়া পাড়া ২টি, হাজির পাড়া ২টি, টাইপালং ১টি, পিনজির কুল ১টি, হিজলিয়া ১টি, জালিয়া পালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি ১টি, কোট বাজার ১টি, মাতবর পাড়া ২টি, ও মরিচ্যা ২টি সহ মোট ১৯টি অবৈধ করাত কলে দিনরাত হাজার হাজার ঘন ফুট চিরাই কাঠ সাইজ করা হচ্ছে। উখিয়ার পার্শ্বে উত্তর ঘুমধুম আজুখাইয়া আবুল কালামের ১টি, অসীম বড়–য়ার মালিকানাধীন ৩টি করাত রয়েছে। করাত কল থেকে চিরাইকৃত এসব কাঠ স্থানীয় হাট বাজারে অবাধে বিক্রি ও বিভিন্নস্থানে চালান হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সরকারী বনাঞ্চলের কাঠ সম্পদ লুটপাট ও সাইজ করে পাচার হওয়ার ফলে সরকার বনসম্পদ খাতে কোটি টাকার রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন ভূমিদস্যু, কাঠ চোর, বনদস্যু ও অবৈধ করাতকল মালিকদের তালিকা প্রনয়ণ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।

পাঠকের মতামত: