অভিযোগ এনজিও’র বিরুদ্ধে
চকরিয়া নিউজ ::
উখিয়ায় বুলডোজার দিয়ে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় কর্তন চলছে। দিনরাত পাহাড় কাটছে বিভিন্ন এনজিও। প্রায় দেড়’শত ফুট উচ্চতা ও ৩’শ ফুট প্রস্থের প্রায় শতাধিক পাহাড়ে হাজারো রোহিঙ্গার তান্ডব চলছে এই পাহাড় নিধন। প্রকাশ্য দিবালোকে এই পাহাড় কাটা চললেও দেখার বা বলার কেউ নেই। আর এসব পাহাড় রক্ষায় ও বনভূমি সংরক্ষণে দায়িত্বরত বনের কর্তাব্যক্তি ও সরকারি বনকর্মীদের দেখা মেলেনি। থাইংখালীর লন্ডাখালী, মধুরছড়া, লম্বাশিয়া এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কর্তনের ফলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন।
উখিয়ার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পালংখালী ইউনিয়নের গভীর অরণ্য তাজনিমার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অদূরে লন্ডাখালী, ময়নারঘোনা ঘুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করে জানান, তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে হাজারো রোহিঙ্গা শ্রমিক ছোট বড় প্রায় অর্ধশত পাহাড় কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করছে। তারা জানান, আইওএম, রেডক্রিসেন্ট,কারিতাস,অক্সফার্ম,ওয়ার্ল্ড ভিশন, ডাব্লিউএফপি,ইউএনএইচসিআরসহ বেশ কিছু প্রভাবশালী এনজিও সংস্থার বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের উদ্দেশে এসব পাহাড় কেটে ন্যাড়া করে ফেলেছে। এছাড়াও রাজাপালং ইউনিয়নের বন্যপশু প্রাণির অভয়ারন্য মধুরছড়া,লম্বাশিয়া এলাকায় বুলডোজার দিয়ে অর্ধশত পাহাড় কাটা চলছে। এসব পাহাড় কাটা মাটি তাৎক্ষণিক ভাবে সরিয়ে ফেলার জন্য সেখানে রয়েছে ১৮/২০টি ডাম্পার গাড়ি।
সরজমিন পাহাড় কাটার ঘটনাস্থল ঘুরে সেখানে মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত রোহিঙ্গা শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা দৈনিক ৪’শ টাকা মজুরিতে পাহাড় কাটছে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ভয়ে প্রথমে এসব শ্রমিকেরা মাটি কাটা বন্ধ করলেও পরে তারা আবার পাহাড় কাটতে শুরু করেন। এসময় সেখানে উপস্থিত এনজিও সংস্থা আইওএম এর সুপারভাইজার মো.শরীফ জানান, প্রতিদিন ৩ হাজার রোহিঙ্গা শ্রমিক মাটি কাটার কাজ করে। পাহাড় কাটার অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে বলে সেখান থেকে সরে পড়েন। পরে শ্রমিকদের মাঝি শরিফুল্লাহ জানান, এখানে প্রায় অর্ধশতাধিক পাহাড় কাটার জন্য গত ১মাস আগে থেকে তারা কাজ শুরু করে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০/৩৫টি পাহাড় কাটার কাজ শেষ হয়েছে। ঘটনাস্থল লন্ডাখালী থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সড়কপথে প্রায় ৫ কিলোমিটার উত্তরে রাজাপালং ইউনিয়নের মধুরছড়া ও লম্বাশিয়া এলাকার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় অর্ধশত বুলডোজার পাহাড় কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করেছে। সেখানে স্থানীয় কয়েকজন গ্রামবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, এনজিওরা কারো বিধিনির্ষেধ মানছে না।
প্রত্যক্ষদর্শী আলী আহমদ, রমযান আলী, শামসুল আলম সহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী অভিযোগ করে জানান, এসব জমি-জমা বনভূমির হলেও তাদের ভোগদখলে ছিল যুগ যুগ ধরে। তারা জোরপূর্বক দীর্ঘদিনের ভোগ দখলীয় জায়গা গুলো বুলডোজার লাগিয়ে সমতল ভূমিতে পরিণত করছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বন পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দিপু জানান, এনজিওরা যেভাবে পাহাড় কাটছে তাতে মনে হয় বনভূমি সংরক্ষণের কেউ এখানে নেই। এসব এনজিদের অপকর্ম ঠেকাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তিনি তার ইউনিয়নের অস্তিত্ব রক্ষায় প্রধান বন সংরক্ষক প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে বিভিন্ন অভিযোগ করবেন। তাতেও যদি কাজ না হয়, তাহলে তিনি পালংখালী ইউনিয়নের মানুষকে সাথে ওই সব পাহাড় খেকো এনজিওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগীয় কর্মকর্তা আলী কবির সাথে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এনজিওদের ইচ্ছামতো পাহাড় কাটার বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে একটি লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো.আবুল কালাম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে সরকার আরো ৫৪০ একর বনভূমি বরাদ্দ দিয়েছে। তাই বর্ষার আগেই ঝুকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করতে এনজিওরা কাজ করছে। তবে ঢালাও ভাবে পাহাড় বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে সাংবাদিকদের আশ্বস্থ করেন।
পাঠকের মতামত: