এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: কোরবানী ঈদ শেষ হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। কিন্তু এখনো ঈদের আমেজ শেষ হয়নি কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়ার পর্যটন স্পট গুলোতে। এ অবস্থায় রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঈদের দিন বিকাল থেকে পর্যটক-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মূখরিত হয়ে উঠেছে চকরিয়া-পেকুয়ার পর্যটন স্পট গুলো। সারাবছর কাজের ভারে নুইয়ে পড়া মানুষ এক ঘেয়েমি কাটাতে ছুটে যায় দেশের উপভোগ্য স্থান গুলোতে। তন্মধ্যে কক্সবাজারের চকরিয়াস্থ ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক এবং পেকুয়ার মগনামা জেটিঘাটে দর্শনার্থীদের ভীড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশের শহুরে দর্শনার্থীরাও বৈচিত্রময় ও প্রায় বিলুপ্ত পশু-পাখি দেখতে ভিড় করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। প্রতিদিন কম করে হলেও ১০ থেকে ১৫ হাজার দর্শনার্থীর পা পড়ছে সাফারি পার্কে। আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
সরজমিনে দেখা গেছে, সাফারি পার্কে পর্যটক ও স্থানীয় দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। গরমের সাথে হাল্কা বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভ্রমণের জন্য পর্যটক ও দর্শনার্থীরা পার্কে ভিড় জমাচ্ছে। পার্কে থাকা বাঘ, সিংহ, উল্টো লেজী বানর, লাম চিতা, হনুমান, উল্লুক, কালো শিয়াল, জলহস্তী, ওয়াইল্ডবিষ্ট, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, প্যারা হরিণ, মিঠা পানির কুমির, মঁয়ূর, বনমোরগ, বন্য শুকর, তারকা কচ্ছপ, বানরসহ অসংখ্য বন্যপ্রাণী ঘুরে ফিরে দেখছিল দর্শনার্থীরা।
তবে, অধিকাংশ দর্শনার্থীরা অভিযোগ করে বলেছেন, পার্কে নতুন কোন অতিথি নাই। পাশাপাশি পার্কের ভিতরে সড়কের অবস্থাও বেহাল। পার্কের চারপাশ উপর থেকে দেখার জন্য একটি ১০ তলা বিশিষ্ট টাওয়ার থাকলেও তা বন্ধ করে রেখেছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। অনেকটা শ্রীহীন হয়ে পড়েছে পার্কটি। এব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন দর্শনার্থীরা।
জানা গেছে, পার্কে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগ ছোট বাচ্চা। এছাড়া তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীদের পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা বন্যপ্রাণী দেখার পাশাপাশি সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মনের সুখে উপভোগ করছেন নান্দনিক বৃক্ষ রাজির ফাঁকে ফাঁকে উন্মুক্ত বিচরণ করা হরিণ, খরগুস, বানর। বেশিরভাগ দর্শনার্থী ও পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় ছিল বাঘ, সিংহ এবং জলহস্তীর বেষ্টনী।
সাফারি পার্ক সূত্র জানায়, সোমবার ঈদের দিন বিকাল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পার্কে দর্শনার্থীদের ব্যাপক সমাগম হয়েছে। পার্কের প্রধান গেইটের বাইরে নির্মিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বিশাল ম্যুরাল ছাড়াও পার্কের বাইরে নব-নির্মিত লেক ও বাগান ছিল দর্শনার্থীদের কাছে বেশ আকর্ষনীয়।
ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পার্কে নতুন কোন প্রাণী না থাকলেও অন্যান্যবারের চেয়ে এবার দর্শনার্থী ছিল প্রচুর। অনেকে পায়ে হেটে আবার অনেকে পার্কের নিদিষ্ট মিনিবাসে করে ঘুরে ঘুরে দেখছেন প্রাণীদের বেষ্টনিগুলো। প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটছে পার্কে।
জানতে চাইলে টুরিষ্ট পুলিশ ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ওসি সুনিল বরণ দাশ বলেন, ঈদ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভবনা নেই।
এদিকে চকরিয়া উপজেলার বুকচিরে প্রবাহিত একসময়ের খর¯্রােতা মাতামুহুরী নদীতে নৌকা যোগে ভ্রমনও বর্তমানে পর্যটক-দর্শনার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় উঠেছে। নদীতে নৌকা যোগে ভ্রমনে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা ঝিরি নদীতে ঝর্ণা ধারার শব্দ, উৎপাদিত ফসল-বাঁশ-গাছ, বেত, মাছ, শসা, পেপে, কলা বয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য বেশ উপভোগ্য। যার পুরোটাই বহমান মাতামুহুরীকে কেন্দ্র করে। তাই এখন ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে আর্কষনীয় হয়ে উঠেছে নৌকা পথে মাতামুহুরী ভ্রমণ।
নৌকা চলার পথে মাতামুহুরী’র দুই ধারে সবুজের সমারোহ, আদিবাসী নারীদের ¯œানদৃশ্য, নদীর ধারে সারি সারি বৃক্ষের ডালে সংসার পাতা সাদা বকের ডানার ঝাপ্টানি, নদীর জলে জেলেদের মাছ ধরা, ছোট ছোট শিশুদের এলোমলো ছুটে চলা, আকা-বাঁকা নদীর দুই ধারে স্থানীয় বাঙালি নারীদের বাদাম চাষ। এসব দেখতে দেখতে সময় পোড়াবে দর্শনার্থীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন বছর আগে মাতামুহুরী নদী পথে নৌকা ভ্রমণে যাওয়া শুরু করে ভ্রমণ পিপাসুরা। এরপর থেকে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষেরা মাতামুহুরী নদী পথের এই ভ্রমণকেই আর্কষনীয় ভাবছে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে নদী পথে ভ্রমণের জন্য বের হয় বেশি মানুষ। দিন দিন যেন মাতামুহুরী নদী ভ্রমণ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
স্থানীয় নৌকার মাঝি বেলাল উদ্দিন বলেন, আগে শুধু বাঁশ, গাছ, নানা ধরনের সবজি বান্দরবানের গহীন এলাকা থেকে আনতে নৌকা ভাড়া করতো ব্যবসায়ীরা। কয়েক বছর ধরে দেখছি নৌকা নিয়ে ভ্রমণের দৃশ্য। বিশেষ করে শীত মৌসুমে ভ্রমণ পিপাসুর সংখ্যা বেশি।
তিনি বলেন, আমরা মাঝের ফাঁড়ি থেকে আলীকদম আসা-যাওয়ার জন্য ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বোট ভাড়া নিই। আর গন্তব্য যদি লামা হয় তাহলে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিয়ে থাকি।
যেতে হবে চকরিয়া পুরনো বাস স্টেশন থেকে ম্যাজিক গাড়ি (চাঁন্দেও গাড়ি) , সিএনজি চালিত টেক্সি অথবা টমটমে করে কাকারার মাঝের ফাঁড়ি স্টেশনে। সেখানে ব্রীজের নিচে বেশ কিছু ইঞ্জিন চালিত নৌকা থাকে। ওইসব নৌকা বান্দরবানের আলীকদম, লামা, পোয়ামোহুরি পর্যন্ত যায়। তবে আগে-ভাগে নৌকা ঠিক করে রাখলে ভালো। নৌকার ভাড়াটা এলাকা অনুসারে নেয়া হয়।
অপরদিকে, ঈদের আনন্দকে আরো উপভোগ্য করে তুলতে ও সাগরের খোলা হওয়া আর ঝাউবনের অপরূপ দৃশ্য দেখতে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা জেটিঘাটে ভীড় জমেছে দর্শনার্থীদের। মুলত এই জেটিঘাটটি পেকুয়া-কুতুবদিয়া মানুষের সাগর পথে পারাপারের জন্য তৈরী করা হলেও বর্তমানে এই জেটিঘাটটি ভ্রমণপিপাসুদের কাছে দর্শনীয় স্থানে রুপ নিয়েছে। আর ঈদ ও বাঙ্গালীর নানা সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে জেটিঘাটটি দর্শনার্থীদের পদচারণায় ছিল মূখর।
সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে মগনামা জেটিঘাট দর্শনার্থীতে ভরপুর হয়ে উঠেছে। কেউ ইঞ্জিন চালিত বোট নিয়ে ঘুরে দেখছেন সাগরের ঢেউ। আবার কেউ জেটিঘাটে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। ছবি ও সেলফি তোলায় ব্যস্ত রয়েছে নব-দম্পতি থেকে শুরু তরুণ-তরুনী ও যুবক-যুবতীরা।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.জাকির হোসেন ভুঁইয়া বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরে দর্শনার্থীদেও আগমন বেড়েছে। তাই দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আশা করি অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটবেনা।#
পাঠকের মতামত: