সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার ৬ মার্চ ::
কক্সবাজার সদর উপজেলার বৃহত্তর ঈদগাঁওয়ের ইউপি নির্বাচনী তপশীল ঘোষণা না করলেও আগেভাগে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে রেখেছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের শুভাকাঙ্খী ও দলীয় কর্মীরা তাদের পছন্দনীয় প্রার্থীদের পক্ষে বিরামহীন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও বিশাল এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের অলিগলিতে ছেয়ে গেছে ডিজিটাল ব্যানার ও পোস্টার। সাথে তো আছেই প্রার্থীদের গণসংযোগ আর কৌশল বিনিময়। দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় বৃহত্তর ঈদগাঁওতেও বেশ জমে উঠছে ইউপি নির্বাচনী কর্মকান্ড।
জানা যায়, সদর উপজেলার বৃহত্তর ঈদগাঁও তথা ৬ ইউনিয়ন ইসলামপুর, ইসলামাবাদ, পোকখালী, চৌফলদন্ডী, জালালাবাদ ও ঈদগাঁওয়ের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল এখন সর্বপেশার লোকজনের মাঝে ইউপি নির্বাচনী আমেজে সরগরম হয়ে উঠেছে। এমনকি গ্রামগঞ্জের চায়ের দোকান, উন্মুক্ত স্থানসহ সবখানে চলছে ইউপি নির্বাচনের হিসাব নিকাশ। পর্যটন শহর কক্সবাজারের প্রবেশদ্বার খ্যাত জেলা সদরের বহুল আলোচিত এলাকা বৃহত্তর ঈদগাঁওতে আসন্ন ইউপি নির্বাচনের হাওয়া এখন থেকে বইতে শুরু করেছে। এ নিয়ে সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী বৃহত্তর এলাকাকে নিজেদের অনুকূলে আনার লক্ষ্যে এখন থেকে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, চলতি বছরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের খবরে কিন্তু কক্সবাজার সদর উপজেলার বৃহত্তর ঈদগাঁও তথা ছয় ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সম্প্রতি তাদের এলাকায় এখন থেকে নড়েচড়ে বসছে। লক্ষ্য শুধু একটাই ইউপি নির্বাচন আসার আগেই প্রচার প্রচারণা আর পরিচিতি লাভ করা। এদিকে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে নয়া কৌশল হিসাবে বেছে নিয়েছে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। আবার এক প্রার্থী ইতিমধ্যে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে তার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে। বৃহত্তর এলাকার নানা স্থান ঘুরে বেশ ক’জনের সাথে কথা হলে এমন চিত্র ফুটে উঠে। অনেকে নির্বাচনী কৌশল হিসাবে নিজেদের লোকজন নিয়ে তাদের বেশ ভুষণ ইতিমধ্যে এলাকার সর্বপেশার মানুষদেরকে জানান দিয়েছে। এমনকি বৃহৎ এলাকার গ্রামাঞ্চলের নানা স্থানে দোকান পাটে চায়ের কাপেও নির্বাচন নিয়ে ঝড় উঠছে। তার পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিয়নে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ইতিমধ্যে তাদের ছবির পাশাপাশি দলীয় প্রধানদের ছবিযুক্ত পোস্টার দিয়ে আনাছে কানাছে ছড়িয়ে দিয়েছে যেন তাদের কাঙ্খিত প্রার্থীকে দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেয় সে আশায়। সে সাথে এলাকাতে কোন একটা রাজনৈতিক কর্মসূচী পালিত হলে সেখানে ঢাকঢোল বাজিয়ে কিংবা পোস্টার সাজিয়ে ঐ অনুষ্ঠানে মিছিল সহকারে যেতেও দেখা যায়। এভাবে চলছে এলাকায় নির্বাচনী উত্তাপ। সবমিলিয়ে দলীয় মনোনয়ন যুদ্ধে তরুণরাই এগিয়ে রয়েছে। আবার কোন প্রার্থীকে দল সাপোর্ট করছে এ নিয়েও চলছে বেশ আলাপ-আলোচনা। এছাড়াও বৃহত্তর এলাকা জুড়ে কারাই হচ্ছেন নৌকার মাঝি! এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দলীয় নেতাকর্মীসহ গ্রামগঞ্জের লোকজনের মাঝে। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে বৃহত্তর ঈদগাঁও এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের যুব ও ছাত্র নেতৃত্বদানকারীরা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে চিন্তাভাবনা করছেন। তার পাশাপাশি এলাকাজুড়ে চলছে নবীন আর প্রবীণের লড়াই। অন্যদিকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের শুভাকাঙ্খী, দলীয় কর্মী কিংবা এলাকায় এলাকায় গিয়ে নির্বাচনী মাঠ নিজেদের অনুকূলে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ লক্ষ্যে অনেক প্রার্থী প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক প্রার্থী নিরব থাকলেও সময়ে মুখ খুলতে পারেন এমন আভাস ও পাওয়া যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কয়জন বা নির্বাচন করবে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ লোকজনের মাঝে।
ইউপি নির্বাচন প্রসঙ্গে গ্রামাঞ্চলের লোকজনের মতে, যে দলের হোক না কেন- সৎ, যোগ্য, উন্নয়নমুখী, অন্যায়ের প্রতিবাদকারী ও খেটে খাওয়া মানুষের সাথে সম্পর্ক রক্ষাকারী ব্যক্তিদেরকে ইউপি প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেওয়া হোক। তবে তৃণমূল পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মীদের মতে, দলীয় প্রার্থী বাছাইকালে তৃণমূলকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রতিও জোর দাবী। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে যদি প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া যায়, তাহলে সে প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার পাশাপাশি দল অনেকটা এগিয়ে যাবে। আবার সাধারণ মানুষের মতে, দেশ এখন তারুণ্য নির্ভর। তাই ইউপি নির্বাচনেও যদি তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় তাহলে আগামীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রম আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। জালালাবাদের কলেজ শিক্ষার্থী আবদুল্লাহর মতে, তার ইউনিয়নে তরুণরাই প্রচার-প্রচারণায় অনেকটা এগিয়ে বলে জানান। অপরদিকে বেশ ক’জন সাধারণ মানুষের সাথে কথা হলে তারা এবার যদি তরুণদের দলীয় ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয় তাহলে সে প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত বলে জানান।
ঈদগাঁওয়ের চান্দেরঘোনার মাহবুবুর রহমানের মতে, অল্প সময়ে বেশ জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে তৃণমূল থেকে উঠে আসা সাবেক সফল ছাত্রনেতা রাজিবুল হক চৌধুরী রিকো। তবে বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর মতে, নির্বাচনী মনোনয়ন প্রত্যাশী দলীয় ক্ষেত্রে তরুণদেরকে যদি বিবেচনা পূর্বক প্রার্থীতা ঘোষণা করে তাহলে দল অনেকটা অগ্রসর হবে। কারণ তরুণদের মাঝে যে স্পৃহা ও উদ্যমতা তা অন্যদের ক্ষেত্রে কম। কালিরছড়া ও মাছুয়াখালীর বেশ ক’জনের মতে, তারাও উঠতি প্রজন্মের তরুণদের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। তৃণমূল থেকে উঠে আসা সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমান সময়ের যুবনেতা রাজিবুল হক চৌধুরী রিকো হাটি হাটি পা পা করে ইউনিয়নের আওতাভুক্ত প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে সাধারণ মানুষের সাথে মিশে গিয়ে দলমত নির্বিশেষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানুষের সেবা করার অঙ্গীকার নিয়ে ইউপি নির্বাচনী মাঠে নেমেছে। ইতিমধ্যে এ নেতা অপরাপর প্রার্থীদের চেয়ে প্রচার-প্রচারণা আর সবদিকদিয়ে একধাপ এগিয়ে রয়েছে বলে জানান অনেকে।
সরেজমিনে জানা যায়, ঈদগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী জমিদার পরিবারের সন্তান হুমায়ুন তাহের চৌধুরী হিমু আসন্ন ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেতে দল ও ইউনিয়নের সর্বসাধারণের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছাত্রজীবনে কক্সবাজার সরকারী কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ঈদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এবং সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে চলছেন। পারিবারিক সমাজ সেবার ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় তিনি ইউনিয়নবাসীর সেবায় নিজেকে নিয়োগ করতে দীর্ঘদিন যাবত জনগণের পাশে রয়েছেন। বিগত নির্বাচনে বিপুল ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় আগামী নির্বাচনে অন্য প্রার্থীদের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছেন। সম্প্রতি দেশজুড়ে ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের ধাপে ধাপে তপশীল ঘোষিত হলে তিনি অতীতের মত আগামী নির্বাচনেও ইউনিয়নবাসীর দুঃখ-দুর্দশা মোছন, সন্ত্রাস নির্মুল এবং দুর্ণীতিমুক্ত ঈদগাঁও প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়নে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাঁর প্রার্থী হওয়ার সংবাদে ইউনিয়নজুড়ে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। আগাম গণসংযোগের অংশ হিসাবে তিনি যখনই কোন এলাকায় যাচ্ছেন, ঐ এলাকার সর্বসাধারণ তাঁকে সাদরে গ্রহণ করছেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। দলীয়ভাবে তিনি মনোনয়ন পেলে দলমতের উর্ধ্বে উঠে নির্বাচনে বিজয়ের মালা ছিনিয়ে এনে ঐক্যবদ্ধভাবে মডেল ইউনিয়ন বিনির্মাণে কাজ করে যাবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তবে শেষ পর্যন্ত ইউপি নির্বাচনে বৃহত্তর ঈদগাঁও তথা ৬ ইউনিয়নে দলীয়ভাবে মনোনয়ন কাদের অনুকূলে যাচ্ছে সেটি এখন দেখার পালা!
পাঠকের মতামত: