ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

ঈদকে সামনে রেখে বেড়েছে ইয়াবা পাচার

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::: 
ঈদকে সামনে রেখে নৌ, স্থল ও আকাশ পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে ইয়াবা পাচার। গত তিন দিনে ২টি বড় চালান বিজিবি আটক করলেও থেমে নেই ইয়াবা পাচার। স্থল পথে প্রশাসনের তল্লাসী বেড়ে গেলে পাচার হয় নৌ-পথে। এ ছাড়াও আকাশ পথেও পাচার হচ্ছে ইয়াবা।
ঈদকে সামনে রেখে মিয়ানমারের নৌ ও স্থলের ৬১২টি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক ঢুকছে বাংলাদেশে। তা এখন অপ্রতিরোধী হয়ে দাড়িয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কিছু মাদকদ্রব্য উদ্ধার করলেও আইনি দুর্বলতার কারণে মাদক সংক্রান্ত বিপুল মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে। সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করেছে। বিজিবির বরাত দিয়ে তারা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় মাদক ব্যবসার মূল হোতাদের তালিকা তৈরি করে প্রশাসনকে দেওয়া হলেও তাদের ধরতে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে পাচারকারীরা ধারা পড়লেও গডফাদাররা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
কক্সবাজারের একজন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মরণনেশা ইয়াবার মহামারী আকার নিয়েছে। দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেছে। যার অধিকাংশই যুবক ও কিশোর। আর মাদকের ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। প্রশাসন ইয়াবার আগ্রাসন রোধে কিছু দিন কঠোর হলে পর্দার আড়ালে চলে যায় ইয়াবা ব্যবসায়িরা। বর্তমানে ঈদকে সামনে নিয়ে তারা আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত দুইদিনে বিজিবি জব্দ করেছে প্রায় ৪ লাখ ইয়াবা।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় এখন মিয়ানমার সীমান্ত থেকে আসে উৎপাদিত হয়ে, সেখানে গড়ে উঠেছে কারখানা। বাংলাদেশে প্রবেশ করা ইয়াবা টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে চালান হয়। বর্তমানে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় ইয়াবা তৈরির ৩৭টি কারখানা গড়ে উঠেছে। অথচ ২০১০ সালে কারখানা ছিল মাত্র চারটি। মিয়ানমারভিত্তিক আর্ন্তজাতিক মাদক পাচারকারী সংগঠন ইউনাইটেড ওয়া স্টেইট কারখানা চারটি পরিচালনা করতো, প্রতিটি ইয়াবার কারখানায় উৎপাদিত হতো চার লাখ করে। সেই সংগঠনটির নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে তেরটি কারখানা চলছে। বাকি ২৬টি কারখানা নিয়ন্ত্রণ করে একই ধরনের আরো আটটি গ্রুপ। এ ৩৭ টি কারখানায় শুধুমাত্র বাংলাদেশকে টার্গেট করেই ইয়াবা উৎপাদিত হয়ে থাকে। এসব ইয়াবা বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসছে দশ জন এজেন্টের মাধ্যমে। এদের মধ্যে চারজনকে ইতোমধ্যে শনাক্ত করতে পেরেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এরা হলেন মিয়ানমারের মংডুর শফিউর রহমানের ছেলে মো. আলম (৩৭), আকিয়াবের ফয়েজপাড়ার কেফায়াত আলীর ছেলে মো. সৈয়দ (৩৫), মংডুর গোজাবিল এলাকার মৃত খল মোহাম্মদের ছেলে কালা শোনা (৪০) ও একই এলাকার আবদুল মোতালেবের ছেলে মোহাম্মদ নুর (৩২)।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান আকারে ছোট হওয়ায় এটি বহন করতে সমস্যা হয় না। এ ছাড়া লাভও বেশী এ দুটি কারণে ইয়াবা ব্যবসায় ঝুঁকে পড়ছে নানা শ্রেণী মানুষ।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি নাথ জানিয়েছেন, ইয়াবার আগ্রাসন রোধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না ইয়াবা পাচারকারী ও ব্যবসায়িদের। ঈদকে সামনে রেখে পুলিশ সর্তক রয়েছে।

পাঠকের মতামত: