ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

ইয়াবা কারবারি ও জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের আরও একটি সুযোগ আসছে, চলছে আলোচনা  

এইচএম এরশাদ ॥ টেকনাফে ইয়াবা কারবারি ও মহেশখালীতে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের প্রথম দফার পর দ্বিতীয় দফায় এখনও গা ঢাকা দিয়ে থাকাদের জন্য আরেকটি সুযোগ আসছে। আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়াটি কখন এবং কোথায় তা এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। তবে আলোচনা চলছে।

মিয়ানমারে উৎপাদিত ইয়াবার গডফাদারদের অধিকাংশ কক্সবাজারের টেকনাফ উখিয়া ভিত্তিক। এছাড়া কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকা মহেশখালী-কুতুবদিয়া সংলগ্ন সাগরে জলদস্যুতার সঙ্গে জড়িতদের বেশিরভাগ মহেশখালীভিত্তিক। এ ছাড়া চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়ও রয়েছে জলদস্যুদের একটি অংশ। সাগরে দাবড়ে বেড়ায় সশস্ত্র জলদস্যুরা। আর ইয়াবা চোরাকারবারিদের কারণে বহু আগে থেকে সারাদেশ ইয়াবার রাহুগ্রাসের কবলে রয়েছে।

ইতোমধ্যে গত ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে ৬ বাহিনী প্রধানসহ ৪৩ জলদস্যু, ৯৪ অস্ত্র ও সাড়ে ৭ সহ¯্রাধিক রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করেছে। অপরদিকে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে আত্মসমর্পণ করেছে ১০২ ইয়াবা কারবারি। আত্মসমর্পণের সময় এরা জমা দিয়েছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও অস্ত্র।

ইয়াবা কারবারে ও জলদস্যুতায় জড়িতদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় যে মাধ্যমগুলো সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে এদের একটি সূত্র জানিয়েছে, আরও বিপুলসংখ্যক ইয়াবা কারবারি ও জলদস্যু আত্মসমর্পণের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। এ প্রক্রিয়ায় সরকারের উচ্চ পর্যায়গুলো ইতিবাচক মনোভাবে রয়েছে। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। চলতি সপ্তাহের যে কোন দিন এ সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ ইয়াবা চোরাকারবারি ও জলদস্যুদের জন্য দ্বিতীয় দফায় আত্মসমর্পণের সুযোগ।

ইয়াবা চোরাকারবারিদের চিত্রে দেখা যায়, গত বছরের ৪ মে থেকে ইয়াবাসহ মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর টেকনাফে পৃথক পৃথক বন্দুকযুদ্ধে এ পর্যন্ত ৫২ ইয়াবা কারবারি প্রাণ হারিয়েছে। এদের মধ্যে চলতি বছরের প্রথম দুমাসে প্রাণ হারিয়েছে ২২ জন। এদের কেউ পুলিশ, কেউ বিজিবি আবার কেউ কেউ অন্তর্কোন্দলে সৃষ্ট দুপক্ষের বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের তথ্য রয়েছে। উখিয়া-টেকনাফে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রণীত তালিকা অনুযায়ী যেসব ইয়াবা কারবারির নাম রয়েছে তন্মধ্যে ১০২ জন আত্মসমর্পণ করার পর তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আরও প্রায় ৫শ জনের নাম উঠে এসেছে। ফলে বর্তমানে গ্রেফতার এড়িয়ে রয়েছে ১৫৫১। বেসরকারীভাবে এ সংখ্যা আরও বেশি। প্রায়শ বন্দুকযুদ্ধে প্রাণহানির ঘটনা উপলব্ধিতে এনে ইয়াবা চোরাকারবারিদের একটি বড় অংশ নতুন করে আত্মসমর্পণের সুযোগ খুঁজছে। অনুরূপভাবে মহেশকালী-কুতুবদিয়া উপকূলে জলদস্যুতায় জড়িত আরেকটি অংশও আত্মসমর্পণ করতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এরই মধ্যে জানান দিয়েছেন, বাঁচার সুযোগ দিতেই সরকার পক্ষে আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০২ ইয়াবা কারবারির আত্মসমর্পণের পর অপর ইয়াবা গডফাদারদের এ ধরনের সুযোগ গ্রহণের জন্য উখিয়া টেকনাফের পুলিশের পক্ষে বার্তা পৌঁছানো হয়েছে। উখিয়া টেকনাফকে ইয়াবা মুক্ত করতে পুলিশের ঘোষণা অনুযায়ী ‘অল আউট’ এ্যাকশন পরিচালিত হচ্ছে। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ ও উখিয়ার ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার রবিবার জানিয়েছেন, ইয়াবা গডফাদারদের মধ্যে অজানা এক ভীতি কাজ করছে। তাই সহজে ধরা দিতে চাইছে না। কিন্তু আত্মসমর্পণ ছাড়া এদের বাঁচার কোন পথ নেই। অল আউট এ্যাকশনে এদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। এ পর্যন্ত যে ৫২ ইয়াবা কারবারি প্রাণ হারিয়েছে তাদের মধ্যে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৪০ ও নিজেদের অন্দর্কোন্দলে মারা গেছে ১২ ইয়াবা কারবারি।

পাঠকের মতামত: