মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
এটা কাল্পনিক গল্প নয়, দৃশ্যমান বাস্তবতা। ইয়াবানগরী টেকনাফের চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত একজন ইয়াবাডনের কাছে একজন কর্মচারী ক্ষুদ্র একটা চাকরি করতেন। ছাপোষা এ কর্মচারী তার মনিব ইয়াবাডনের কাছে ধীরে ধীরে বিশ্বস্থ হয়ে উঠেন। একপর্যায়ে এ বিশ্বস্থ কর্মচারী নিজেও মরননেশা ইয়াবাবাজীতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে। সেই ক্ষুদ্র কর্মচারী মাঝেমধ্যে টেকনাফ এসে একটু রং তামাশা ও রিলাক্সের জন্য টেকনাফে তার নিজ গ্রামেই নির্মাণ করেন সুরম্য ও আলিশান অবকাশ যাপন কেন্দ্র। যে অবকাশ যাপন কেন্দ্র নির্মাণের ডিজাইন, স্থাপত্য, নির্মাণ শৈলী, ফিটিংস, আসবাবপত্র সহ সবকিছু দেখলে মনে হবে, এটা যেন অত্যাধুনিক কোন দেশের রাজকীয় বাংলো। রাষ্ট্রের ভিভিআইপিদের জন্য তৈরী করা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ এর আওতায় ইয়াবাবাজদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার জেলা পুলিশের চলমান সাড়াশি অভিযানে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, এক সময়ের এই ক্ষুদ্র (!) শিষ্যের এখন চট্টগ্রাম শহরেও ৫/৬ টি রাজপ্রসাদ সমতুল্য বিশাল অট্টালিকা থাকার খোঁজ পাওয়া গেছে। যা রীতিমতো সেই আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপের কল্প কাহিনীকেও হার মানিয়েছে। চিহ্নিত ইয়াবাজদের গড়ে তোলা অবৈধ সম্পদের পাহাড়ের খবর নিতে গিয়ে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সংস্থা গুলোর খোদ দায়িত্বশীল অনুসন্ধানী কর্মকর্তারাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। অনুসন্ধানে ইয়াবাবাজদের গড়ে তোলা অবৈধ সম্পদের যে খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ বললে কম হবে, বরং ‘আঙ্গুল ফুলে বট গাছ হয়ে গেছে’ বললে কিছুটা সংঙ্গতিপূর্ণ হবে বলে অনুসন্ধানী কর্মকর্তারা মন্তব্য করেছেন। একজন চাপোষা কর্মচারী শিষ্যের সম্পদের ঐষর্য্য এমন হলে সেই কর্মচারীর মুনিব ইয়াবাডনের সম্পদের পরিমাণ কিহতে পারে তা অনেকটা কল্পনার বাইরে বলা যায়। সেই চিহ্নিত ইয়াবাডন মুনিব আইনের চোখকে ফাঁকি দেয়ার জন্য ইয়াবা কারবার পরিবর্তন করে এখন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সেজেছেন। এই ইয়াবাডন মুনিব-শিষ্যের গড়ে তোলা অবৈধ সম্পদ নিয়ে কক্সবাজারের স্বনামধন্য পুলিশ সুপার ও ইয়াবাবাজদের মূর্তিমান আতংক এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম তাঁর নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে ৪ জুন রাত তিনটার দিকে ৮ টি স্থির চিত্রসহ একটি সুন্দর স্টাটাস দিয়েছেন। এবার এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম-এর স্টাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
“এটা টেকনাফের একজন ইয়াবা ব্যবসায়ীর গ্রামের বাড়ির অবকাশ যাপন কেন্দ্র। বানিজ্যিক নগরীতে নামিদামি এলাকায় আরো কয়েকটি সুউচ্চ বহুতল ভবন রয়েছে মর্মে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রচলিত আছে যে, একসময় একজন বড় গুরুর অধীনে ছোট্ট চাকরি করতেন। মনিবের সাথে আলাদিনের চেরাগ নামক ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেন। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যবসা পরিবর্তন করে এখন হয়েছেন সমাজের চোখে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। এই যদি হয় চাকরের সম্পদের নমুনা তাহলে গুরুর সম্পদ পরিবর্তনের পরিমানটা হিসাব করুন!!!!”
এবিষয়ে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম সিবিএন-কে বলেন, যাদের সম্পদ ইয়াবাকারবার করে আঙ্গুল ফুলে বট গাছ হয়েছিল, তাদের অচিরেই আঙ্গুল শুকিয়ে থুথপিক বানানো হবে। শুধু হাজী, কাজীর, রাঘববোয়ালেরা নয় ইয়াবাকারবারের সাথে ন্যূনতম যারা জড়িত আছে, তাদের কাউকেই রেহায় দেয়া হবেনা। যারা ইয়াবাকারবারের আড়ালে বিশিষ্টজন সেজে মুখোশ পরে রয়েছেন তাদের মুখোশ অচিরেই উম্মোচন করা হবে। আইনের জালে তাদের পড়তেই হবে ইনশাল্লাহ। মাদকবিরোধী এ অভিযানকে ক্রমান্বয়ে আরো তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে। ইয়াবাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযানের আরো কঠোর ভয়াবহতার ধারণাও তারা করতে পারবেনা। এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন আরো বলেন-সর্বনাশা ইয়াবার নিষ্ঠুর আগ্রাসন শতভাগ নির্মুল নাকরা পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন-কোটিপতি হওয়া ভ্যান চালক টেকনাফের নাজিরপাড়ার নজুমিয়ার পুত্র এজাহার মিয়া ও তার পরিবার এক জুনে রাতে রাজপ্রাসাদের মতো বাড়িতে বসবাস করছিলো। আদালতের নির্দেশে তাদের দুটি আলিশান দালান ও ৬ টি তফশীলের মূল্যবান জমি প্রায় ৩০ কোটি টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে জব্দ করা হয়েছে। অর্থাৎ এক জুন রাত্রে যারা কোটিপতি ছিল তারা দুই জুন সকালে ভিক্ষুক হয়ে গেছে। এ বাস্তব ঘটনা থেকে সবার শিক্ষা নেয়া উচিত। ইয়াবাকারবার করে অর্জিত অবৈধ সম্পদ তাদের সন্তান নাতি-পুতিও ভোগ করতে পারবেনা এবং ইয়াবাকারবারীও নিজেদের মধ্যে দলাদলিতে নিঃশেষ হয়ে হয়ে যাবে।
পাঠকের মতামত: