সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার প্রতিনিধি, কক্সবাজার সদর উপজেলার শিল্প নগরী ইসলামপুর সড়কে খোলা লবণ পরিবহণ নিষিদ্ধ হলেও প্রশাসনেকে ম্যানেজ করেই চলছে লবণ পরিবহন। খোলা লবণ পরিবহনের কারণে সড়কে লবণ পানি পড়ে তার সাথে ধূলো জমে তৈরি হয়েছে কাদা। এর ফলে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে উঠেছে। সকাল বিকালের হালকা কুয়াশায় সড়ক হয়ে উঠেছে মৃত্যুর ফাঁদ। পিচ্ছিল আস্তরণের কারণে সড়কে চলাচলরত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যত্রতত্র দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। বাড়ছে দূর্ঘটনা ও পঙুত্বের সংখ্যা। লবণ পানির কারণে সড়কের আয়ু কমে যাচ্ছে।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ট্রাকে দুই স্তর পলিথিন দিয়ে লবণ পরিবহনের নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে একাধিকবার চিঠি দেয়া হলেও এখনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার কোটি কোটি টাকায় রাস্তা তৈরি করছে আর লবণ পানিতে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, লবণবাহী ট্রাক থেকে পানি পড়ে পিচ্ছিল হয়ে পড়ে সড়ক। শুকনো মওসুম শুরুর পর লবণ পানিতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে নাপিতখালী বটতল থেকে ইসলামপুর বাজার পেরিয়ে দক্ষিণ খাঁনঘোনা পোকখালী গোমাতলী সড়ক পর্যন্ত। কোনো সুরক্ষা ছাড়াই উপকূলীয় এলাকা থেকে ট্রাকে করে সড়ক দিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে লবণ। এ সময় ট্রাক থেকে লবণ পানি পড়ে পিচ্ছিল হয়ে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে এসব সড়ক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদরের উপকুল থেকে ট্রাকে বেশির ভাগ লবণ আসে ইসলামপুরের লবণ মিলগুলোতে। এসব লবণ যায় চট্রগ্রামের পটিয়া, বোয়ালখালী, মাঝিরঘাট,ঢাকাসহ কয়েকটি কারখানায়।
সূত্রে জানা গেছে , প্রতিবছর লবণ উত্তোলনের মওসুমে এই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সড়কপথে লবণ পরিবহনে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং নীতিমালা ভঙ্গ করলে আইনী ব্যবস্থার বিষয়ে উল্লেখ না থাকায় সড়ক পথে খোলা লবণ পরিবহন বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রশাসনের সব সংস্থাই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে লবণ পানি আর ধূলোয় তৈরি হওয়া আস্তরণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন। তবে ঢাকা- চট্টগ্রামের বাইরে থেকে আসা পরিবহন চালকরা অজ্ঞতার কারণে সবচে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হন। লবণ পরিবহনের কারণে বিকাল থেকে ভোর পর্যন্ত এসব সড়ক সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। গত এক মাসে ইসলামপুর সড়কে অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সবচে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ইসলামপুর ঘাট, বাজার ও নাপিতখালীতে। তাতে আহতের সংখ্যাও অনেক বেশি।
সরেজমিন দেখা যায়, দিনের বেলায় সামান্য পরিমাণ লবণবাহী ট্রাক চলাচল করলেও সন্ধ্যার পর সারি সারি লবণের ট্রাক চলাচল করে এ সড়কে। এ সময় লবণ পানি আর কুয়াশায় সড়কে লবণ আর ধূলোয় জমাট বাধাঁ আস্তরণ তেলতেলে হয়ে উঠে। এ সময় কোন যানবাহন প্রয়োজনের সময় ব্রেক কষলেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। সন্ধ্যার পর পর থেকে ভোর পর্যন্ত লবণ গাড়ির আধিপত্য তার সাথে স্থানে স্থানে ট্রান্সপোর্টের বাণিজ্যের বিষয়টিও চোখে পড়ে।
ইসলামপুরের লবণ ব্যবসায়ী মো: নাছির জানান, খোলা ট্রাকে করে লবণ পরিবহন কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না। কারন এসব মালামাল পটিয়া, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম নগরী ও ঢাকা পর্যন্ত চলে পুলিশকে ম্যানেজ করে। এ কারণে এলাকার লবণ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। তিনি জানান সকল ব্যবসায়ী একযোগে ভেজা ও পলিথিন বিহীন লবণ গ্রহণ না করলে এবং প্রশাসন এসব গাড়ি ও সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। তিনি আরো জানান সদরের উপকুল থেকে ভেজা লবণ পরিবহন করা হয়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ঝুঁকিপর্ণ হওয়ার জন্য দায়ী লবণবাহী ট্রাক। ট্রাকের বিরুদ্ধে কিছুটা ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি চলমান রয়েছে।
খোলা লবণ পরিবহন বন্ধে সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় লবণ পরিবহনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ইনচার্য পরিদর্শক মিনহাজ মাহমুদ ভুইয়া। তিনি বলেন ঈদগাঁও-চৌফলদন্ডী সড়ক, গোমাতলী-ইসলামপুর সড়ক, কালির ছড়া থেকে নাপিতখালী পর্যন্ত মহাসড়কের অবস্থা খুবই বিপজ্জনক। শুস্ক মওসুমে এ অবস্থা খুবই মারাত্মক রুপ নেয় স্বীকার করে তিনি বলেন, খোলা ট্রাকে লবণ পরিবহন বন্ধে নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ি সে নির্দেশনা মানছেন না। এরপরও সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সাধারণ আইনে মামলা দেয়া হলেও তাতে জরিমানার পরিমাণ খুবই কম। তাই তারা এ ধরণের মামলাকে পাত্তা দিচ্ছে না। মোবাইল কোর্ট অথবা কঠোর আইন করা হলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হতে পারে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে শুধু লবণ পানির কারণে সড়ক বিপজ্জনক হওয়ায় দুর্ঘটনা বেড়েছে। এসবেরপরও খোলা ট্রাকে লবণ পরিবহন দমানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ডুলাহাজারা হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক ও ইনচার্জ আলমগীর হোসেন। এসব গাড়ির বিরুদ্ধে মোটরযান আইনে ১৩৭ ধারায় ছাড়াও বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালনার অপরাধে ১৪৩ ধারায় ব্যবস্থা নেয়া যায়। তাতেও জরিমানার পরিমাণ বেশ নয়। আর এ কারণে তাতে পাত্তা নেই লবণ পরিবহনকারীদের। এরপরও হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে খোলা এবং ওভারলোড নিয়ে লবণ পরিবহন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে দিনের বেলায় লবণ পরিবহন কিছুটা কমলেও রাতের বেলায় এসব লবণ পরিবহন করা হয়। এখন রাতেও বিশেষ অভিযান পরিচালানার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন মহাসড়কের মেধাকচ্ছপিয়া ঢালা এলাকায় গত ১সপ্তাহে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র সড়ক পিচ্ছিল হওয়ায় ছোট বড় ৫টি দুর্ঘটনা ঘটে। তাতে অনেকে প্রাণ হারিয়েছে।
শুস্ক মওসুম শুরু হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে কখন কি হয় তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি বলেন পিচ্ছিল হওয়া ছাড়াও লবণপানি পড়ে মহাসড়কের কার্পেটিং ওঠে যাচ্ছে। পানি ঢুকে সড়কের বিটুমিনাসের নিচের স্তর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে পুরো সড়কের আয়ুস্কালও কমে যাচ্ছে। প্রতি বছর প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আবেদন জানানো হলেও তারা দৃশ্যমাণ ব্যবস্থা নেয় না। তিনি উপজেলার নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এসব রোধ করার প্রস্তাব জেলা প্রশাসনের সভায় তুলে ধরা হবে বলে জানান।
পাঠকের মতামত: