ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া ::
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিয়েছেন পেকুয়ার সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যানসহ তিন পদে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী প্রচারে সরব রয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম প্রায় একমাস ধরে সবকটি ইউনিয়নে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশসহ নানাভাবে মাঠে থাকলেও অন্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং পোস্টারের প্রচারে সীমাবদ্ধ। অপরদিকে দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদেও আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।
এদিকে এখনো দলীয় সিদ্ধান্ত না হওয়ায় মাঠে নেই বিএনপির সম্ভাব্য কোনো প্রার্থী। তবে দলীয় নেতাকর্মীদের ধারণা, যাঁরা চেয়ারম্যানসহ তিনপদের যোগ্য এবং জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে আগের মতো এগিয়ে রয়েছেন তাঁদেরই দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সেই হিসেবে বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ চৌধুরী রাজুই বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
সরকার দল আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হোছাইন, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এস এম গিয়াস উদ্দিন, ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেচি উল্লেখযোগ্য। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় রয়েছেন রাজাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাস্টার নূর মোহাম্মদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান ফরায়েজী ও সাবেক ছাত্রনেতা নাছির উদ্দিন বাদশা। আর নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে আলোচনা চলছে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগে সভাপতি মর্জিনা বেগম, সাধারণ সম্পাদক ছেনুয়ারা বেগম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হাসিনা বেগমকে নিয়ে।
আওয়ামী লীগ তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, তিন পদে এসব প্রার্থীকে নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে আলোচনা থাকলেও কেন্দ্র থেকে এখনো কোনো প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়নি। তবে প্রচারণা, তৃণমূলের সঙ্গে গভীর সম্পর্কসহ সবদিক দিয়ে বেশ এগিয়ে রয়েছেন পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। তাঁকে এবার দল থেকে প্রার্থী করা হলে সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ঘরে জয় পাওয়া সহজ হবে। কেননা বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পেকুয়ায় সদ্য সমাপ্ত সংসদ নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক ভোট পান আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাফর আলম।
পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কফিল উদ্দিন বাহাদুর চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগসহ সবসময় সুখে-দুঃখে পাশে থাকেন এমন প্রার্থীকে আমরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত করতে চাই। এ ক্ষেত্রে তৃণমূলে আবুল কাশেমের নাম শোনা যাচ্ছে বেশি। কেননা সদ্য সমাপ্ত সংসদ নির্বাচনে আবুল কাশেমের নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মীরা বিএনপির দুর্গ তছনছ করে দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাফর আলমের জয়ের জন্য দিনরাত কাজ করেছেন।’
পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) শাহনেওয়াজ চৌধুরী বিটু চকরিয়া নিউজকে জানান, নির্দেশনা মোতাবেক তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বসে তিনজনের প্রার্থী তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে তাঁর পক্ষে একযোগে মাঠে থেকে জয় নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে বিএনপি থেকে এখনো কোনো প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রচারণার জন্য মাঠে না নামলেও দলটির পরিচ্ছন্ন প্রার্থী হিসেবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন পর পর দুবার বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব পালন করে যাওয়া বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাফায়েত আজিজ চৌধুরী রাজু। অবশ্য বর্তমান উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহও (বর্তমানে কারাগারে) আলোচনায় রয়েছেন। এক্ষেত্রে দল যদি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে দুজনের একজনই হবেন বিএনপির প্রার্থী। অপরদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি থেকে কোনো প্রার্থী আলোচনায় না থাকলেও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা নুরুজ্জামান মঞ্জু (কারাগারে) এবং বর্তমান নারী ভাইস চেয়ারম্যান লুত্ফা হায়দার রণিই হতে পারেন বিএনপির প্রার্থী।
এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ চৌধুরী রাজু চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করবো এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। বর্তমানে আমি তিনটি গায়েবি মামলায় ফেরারি আসামি হয়ে এলাকার বাইরে রয়েছি। প্রতিনিয়ত মামলার কাগজপত্র নিয়ে বিভিন্ন আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছি। এই অবস্থায় নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় নেই। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হলে দল তথা সালাহউদ্দিন সাহেব যাঁকে মনোনয়ন দেবেন তাঁর পক্ষেই মাঠে থাকব।’
জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোছাইন চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপির শত শত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে সবাইকে এলাকা ছাড়া করেছে সরকার দল। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত এলে জেলখানায় বসেও বিএনপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’
পাঠকের মতামত: