ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র শক্তির মহড়া উত্তপ্ত কক্সবাজারের রাজনীতি

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজারে শুরু হয়েছে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। পাল্টাপাল্টি মিছিল সমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আগস্ট মাসের কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। দু’দলই স্মরণকালের বৃহত্তম মিছিল- সমাবেশ করে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির জানান দিয়েছেন। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি কেন্দ্র করে পেকুয়ায় ১৪৪ ধারা দিতে বাধ্য হয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উখিয়ায়ও একইদিন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল দুইদল। পরে প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে আগে-পিছে কর্মসূচি পালনের দিন ঠিক করে দেয়ায় সংঘাত এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
আগস্ট মাসকে উপলক্ষ করে আওয়ামী লীগ ১৫শে আগস্টে আলোচনা সভা, শোকর‌্যালি ও গণভোজের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচির সূচনা করে। সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে ১৭ই আগস্ট এবং ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে বড়সড় মিছিল সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ব্যরিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের উপস্থিতিতে ১৪ই আগস্ট জেলা আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান আন্দোলনের নামে বিএনপি শহরে বিশৃঙ্খলা করলে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। ১৭ই আগস্ট বড় মিছিল-সমাবেশ করে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ।
অপরদিকে জ্বালানি তেল, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ভোলা জেলায় পুলিশি হেফাজতে হত্যার প্রতিবাদে কক্সবাজার জেলা বিএনপি ২৪শে আগস্ট বিশাল জমায়েত করে সাংগঠনিক শক্তির জানান দেয়।

মিছিলটি কক্সবাজার ঈদগাহ্ ময়দান থেকে শুরু করে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। কক্সবাজার সদরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, কৃষকদল, শ্রমিকদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা ভিন্ন ভিন্ন টি-শার্ট, মাথায় ক্যাপ পরিধান করে মিছিল নিয়ে গণমিছিলে যোগদান করেন।
দীর্ঘদিন পর জেলা শহরে বিএনপি’র বিশাল মিছিল সমাবেশ ভাবিয়ে তোলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে। বিএনপি’র বড় জমায়েতকে ঘিরে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনীতির মাঠ। এরপর ২৮শে আগস্ট আরও একটি বড় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে উখিয়া উপজেলা বিএনপি। ২৯শে আগস্ট টেকনাফেও গণমিছিল করে বিএনপি। মিছিলে বিপুল লোকসমাগম হয় বলে জানা যায়। ২১শে আগস্ট পেকুয়া বাজার ও চৌমুহনীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করার ঘোষণা দেয় উপজেলা বিএনপি। একই সময়ে একই স্থানে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র পাল্টাপাল্টি মিছিল সমাবেশ আহ্বানকে কেন্দ্র করে সকল ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কক্সবাজারের পেকুয়ায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। ২৯শে আগস্ট মহেশখালীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিএনপি। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি আলমগীর ফরিদের নেতৃত্বে বড় মহেশখালী নতুন বাজার হতে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে মহেশখালী পুরাতন আদালত চত্বরে এক সমাবেশে মিলিত হয়। তবে জাতীয় শোক দিবস ও ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে স্মরণকালের বিশাল শোক র‌্যালি করেছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় বাহারছড়া মুক্তিযোদ্ধা মাঠ থেকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনানের নেতৃত্বে শোক র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিতে কক্সবাজারের সব উপজেলা, পৌরসভা, কলেজসহ সকল ইউনিট থেকে ছাত্রলীগের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক নেতাকর্মীর সমাগম হয়।
পাল্টাপাল্টি এসব মিছিল সমাবেশ, হুমকি-পাল্টা হুমকিকে কেন্দ্র করে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের রাজনীতির মাঠ। আওয়ামী লীগ চায় সরকারের ৩ মেয়াদের ধারাবাহিকতায় মাঠ ধরে রাখতে। বিএনপির চায় মাঠের দখল নিতে। পাল্টাপাল্টি শক্তিপ্রদর্শন প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ায় রাজনীতি সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।

পাঠকের মতামত: