ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

আওয়ামী লীগের নেতারা দলীয় নির্দেশনা মানছেন না

বিশেষ সংবাদদাতা :: আগামী ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থাকার পরও দলীয় নির্দেশনা মানছেন না অনেক আওয়ামী লীগের নেতা। কঠোর নির্দেশনা এবং বহিস্কারেও তাদের থামানো যাচ্ছে না। প্রচারণা চালাচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে। প্রকাশ্যে, অপ্রকাশ্যে নৌকার বিপক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন। বিষোদগার করছেন। আবার ঘরেঘরে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন।

যে কারণে অনেক ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ভরাডুবির সম্ভাবনা দেখছে ভোটাররা।

বৃহস্পতিবার সাবরাংয়ের চান্দলী পাড়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুর হোসেনের আনারস মার্কার সভায় বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য আলহাজ্ব শফিক মিয়া। বক্তব্যকালে তিনি নৌকার প্রার্থী সোনা আলী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। দল থেকে বহিস্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থী নুর হোসেনের আনারস মার্কায় ভোট চান।

দলীয় সভানেত্রী থেকে শুরু করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সম্পাদকের কঠোর নির্দেশনাকেও পাত্তা দিচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে শফিক মিয়ার বক্তব্য শোনে সাধারণ ভোটারসহ স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

নৌকার প্রার্থী সোনা আলীর ছেলে ফাহাদ আলী অভিযোগ করেন, মাঠ পর্যায়ে তাদের অবস্থা যথেষ্ট সন্তুষজনক। কিন্তু আওয়ামী লীগ, যুব লীগ, ছাত্রলীগ নেতাদের ভূমিকা নীবর। অনেকে গোপনে বিদ্রোহী প্রার্থীর জন্য কাজ করছে।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার কাটাবনিয়া এলাকায় নির্বাচনী অফিসের সামনে ইসমাইল সিআইপিকে মারধর করে। চান্দলী পাড়া, মুন্ডারডেইল এলাকায় নৌকার মিছিলে বাধা দেয়। পরে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তারা মিছিল বের করে।

ফাহাদ আলী ফাহাদ, সাবরাং ২ নং ওয়ার্ডের আলীর ডেইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সিকদারপাড়া সাবরাং উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কেন্দ্রে বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচুর প্রভাব রয়েছে। সুষ্ঠু ভোটের জন্য তিনি প্রশাসনের কঠোর নজরদারি কামনা করেছেন।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সাবরাং নোয়াপাড়া আলহাজ্ব নবী হোসাইন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নৌকা প্রতীকের সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ করবেন; আবার নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন, ভোট চাইবেন, তা মেনে নেওয়া যায় না। দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। যারা নৌকার পক্ষে কাজ করছেন না, তাদের তালিকা তৈরী করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, নৌকার প্রার্থী সোনা আলী আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের নেতা। দলের জন্য তার অনেক ত্যাগ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনেন। তাই সোনা আলীকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। তার পক্ষেই আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে কাজ করতে হবে।

সুত্র মতে, জেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করায় টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের নুর হোসেনসহ ১১ বিদ্রোহী প্রার্থীকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়েছে।

বহিস্কৃত অন্যান্যরা হলেন- হ্নীলা ইউনিয়নের কামাল উদ্দিন আহমদ, পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বিএ. মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের মোশারফ হোসেন খোকন, মাতারবাড়ী ইউনিয়নের এনামুল হক রুহুল, মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ, মাস্টার রুহুল আমিন, আবদুস সাত্তার, হোয়ানক ইউনিয়নের মীর কাসেম চৌধুরী, ওয়াজেদ আলী মুরাদ, কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের সিরাজদৌল্লাহ।

এছাড়া দলীয় প্রার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাফর আলম (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান), মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলম জহুরকেও সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের নির্দেশনা মোতাবেক বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) তাদেরকে সাময়িক বহিস্কার করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা অওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এম.এ মনজুর।

তিনি জানান, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করায় জেলায় ১১ বিদ্রোহী প্রার্থীসহ ১৩ জনকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। চূড়ান্তভাবে তাদের কেন বহিস্কার করা হবে না তা জানতে চেয়ে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
অন্যথায় তাদেরকে চূড়ান্তভাবে বহিস্কারের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ বরাবরে সুপারিশ পাঠাবে জেলা আওয়ামী লীগ।

 

পাঠকের মতামত: