তিন পার্বত্য জেলা এবং কক্সবাজারে ভারত-মিয়ানমারের অরক্ষিত সীমান্তে সক্রিয় চোরাকারবারীরা। এই সীমান্ত দিয়ে অবাধে দেশে আসছে মাদক, অস্ত্রসহ আমদানিনিষিদ্ধ বিভিন্ন পণ্য। ২০১৫ সালে চোরাচালানের সময় চট্টগ্রাম দক্ষিণ-পূর্ব রিজিয়নের আওতাধীন এলাকা থেকে ১৭১ কোটি ৭৬ লাখ ৯২৫ টাকার পণ্য আটক করে বিজিবি। এরমধ্যে রয়েছে কাঠ, ফার্নিচার, যানবাহন, ইয়াবা, মদ, বিয়ার, গাঁজা, ফেনসিডিল ও বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র। সম্প্রতি চট্টগ্রামে র্যাবের উদ্ধার করা বিপুল পরিমাণ মাদক ধ্বংস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইয়াবা ও ফেনসিডিল ভয়াবহভাবে ঢুকছে বলে স্বীকার করেছেন। তিনি এও মন্তব্য করেন, ভারত-মিয়ানমারে উৎপাদিত মাদকের কুফল ভোগ করছে বাংলাদেশ। অরক্ষিত এই সীমান্ত সুরক্ষার জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) আউটপোস্ট (বিওপি) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চলছে।
বিজিবির চট্টগ্রাম দক্ষিণ-পূর্ব রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. হাবিবুল করিম জানান, ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে অরক্ষিত এলাকা আয়ত্তে আনতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অরক্ষিত সীমান্ত আয়ত্তে আনা সম্ভব হলে চোরাচালান কমে আসবে। তিনি জানান, ৬ মাসে অরক্ষিত সীমান্তে ৫৬টি বর্ডার আউটপোস্ট (বিওপি) নির্মাণ করা হয়েছে। এতে করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভারত সীমান্তে অরক্ষিত ২৮১ কিলোমিটারের মধ্যে ২৭টি বিওপি নির্মাণ করায় ১৩০ কিলোমিটার এলাকা আয়ত্তে এসেছে। একইভাবে মিয়ানমার সীমান্তে অরক্ষিত ১৯৮ কিলোমিটার এলাকায় ২৯টি বিওপি নির্মাণ করায় ১২২ কিলোমিটার এলাকা সুরক্ষিত হয়েছে। অরক্ষিত বাকি ২৩৭ কিলোমিটার এলাকা চলতি বছরের মধ্যে পুরোপুরি আয়ত্তে আনার চেষ্টা চলছে। বিজিবি সূত্র জানায়, গত এক বছরে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে আসা ১৭১ কোটি ৫৮ লাখ ৭৬ হাজার ৮২৫ টাকার চোরাচালান পণ্য আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দক্ষিণ-পূর্ব রিজিয়ন। বিজিবি দক্ষিণ-পূর্ব রিজিয়নের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল নাসির উদ্দিন একরাম বলেন, চোরাচালান বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। তারপরও নানা কৌশলে চোরাকারবারীরা অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, বিজিবির দক্ষিণ-পূর্ব রিজিয়নের আওতাধীন তিন পার্বত্য চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দারবান ও কক্সবাজারে অরক্ষিত সীমান্ত ছিল ৪৭৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়িতে ১০১ কিলোমিটার, আন্দারমানিক সীমান্তে ১৭০ কিলোমিটার, লেমুছড়ি সীমান্তে ১৪৮ কিলোমিটার এবং বঙ্গোপসাগরে আছে প্রায় ৬০ কিলোমিটার।
এসব অরক্ষিত সীমান্তে ৭১টি বিওপি নির্মাণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ২৪২ কিলোমিটারে ৫৬টি বিওপি বসানো হয়েছে। বাকি ২৩৭ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তে বিওপি বসানোর কাজ চলছে। চলতি বছরের মধ্যে বাকি অরক্ষিত এলাকায় বিওপি স্থাপন করার কাজ শেষ হবে। বিওপি স্থাপনের কাজ শেষ হলে সীমান্ত সুরক্ষিত হবে এবং চোরাচালানও কমবে। ফাইল ছবি
পাঠকের মতামত: