ঢাকা,বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

অনিয়ম দূর্নীতি : সিভিল সার্জন ওএসডি

durnitiকক্সবাজার প্রতিনিধি :::

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক দপ্তর সিভিল সার্জন অফিস চরম অনিয়ম দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, স্টোর কিপারসহ কয়েকজন সিনিয়র কর্মচারী মিলে ভূয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে, এবং বদলী নিয়োগ, বিশেষ করে টেন্ডার নিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে আসছে তারা। আর এদের সরাসরি ইন্ধন যোগাচ্ছে খোদ সিভিল সার্জন। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি টেন্ডার জালিয়াতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে কক্সবাজার থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ কমর উদ্দিনকে। তাকে ওএসডি করে ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগের আদেশ ২৪ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসে এসে পৌছেছে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্টরা।
রামু স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের এক কর্মচারী ২৩ ফেব্রুয়ারি সিভিল সার্জন অফিসে আসছে তার নিজের ফাইলে সরকার কর্তৃক বর্ধিত বেতন সংযোজনের জন্য, এ জন্য ৫ হাজার টাকার অফিস খরচসহ আসতে বলেছে হিসাব রক্ষক। একই সাথে মহেশখালীর এক মহিলাকর্মী এসেছে তার বিরুদ্ধে করা স্থানীয় কিছু ব্যক্তির তদন্ত রিপোর্ট দিতে। আগেই প্রতিপক্ষ থেকে টাকা নিয়েছে অফিস এখন অফিসের লোকজন মোটা অংকের টাকা চাচ্ছে তার কাছ থেকেও। তার অভিযোগ, সে নিজে নির্দোষ হিসাবে প্রয়োজনীয় সব কাগজ পত্র দিয়ে সিভিল সার্জনের সাথে দেখা করেছে। খোদ সিভিল সার্জন তাদের কর্মচারীদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছে। তাই বাধ্য হয়ে তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে এসেছি। এ সময় আরো কয়েক জন ভুক্তভুগি বলেন সিভিল সার্জন অফিস এখন চরম অনিয়ম দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এখানে নিয়োগ এবং বদলী বাণিজ্য থেকে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়। আর সবচেয়ে বেশি নগদ টাকা আয় হয় টেন্ডার থেকে। খোদ সিভিল সার্জন অফিসের কর্মচারী বলেন সম্প্রতি এমএস আর সামগ্রী ক্রয়ের জন্য টেন্ডার নিয়ে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এই টেন্ডারটি নিয়ে কয়েক বার বাতিল আর নতুন টেন্ডার হয়েছে। আমাদের জানা মতে অফিসের হিসাব রক্ষণ ইসহাক নৌমান আর স্টোর কিপার শাহ নেওয়াজ খান, প্রধান সহকারী রফিকুল ইসলাম এবং সিভিল সার্জন মিলে তাদের পছন্দ মত ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে ব্যাপক জালিয়াতি শুরু করেছে। এর মধ্যে স্টোর কিপার নিজে বেশি ভূমিকা রাখে ৮/৯ মাস আগে খুলনা থেকে দুর্নীতির অভিযোগে শাস্তিমূলক বদলী হয়ে কক্সবাজার আসে। এর পর থেকেই এখানে সীমাহীন দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলে ।  গত ২২ ফেব্রুয়ারি টেন্ডার কমিটির সদস্য সচিব জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সুলতান আহাম্মদ সিরাজী, গাইনী কনসালটেন্ট ডাঃ খাইরুন্নেছা মুন্নি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ কবির আহাম্মদ, জেলা বাজার অনুসন্ধান কর্মকর্তা  এবং জেলা প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি উক্ত টেন্ডার বিষয়ে সভায় আসলেও নিজে মিটিং ডেকে সিভিল সার্জন ডাঃ কমর উদ্দিন অনুপস্থিত ছিলেন। এ সময় কমিটির সদস্যরা প্রয়োজনিয় কাগজপত্র চাইলে কর্মচারীরা তা সরবরাহ করতে পারে নি। আর সদস্যরা টেন্ডার পত্রে বেশ কয়েকটি খুব অসংগতি পূর্ণ শর্ত জুড়ে দিয়েছে। যাতে স্থানিয় ঠিকাদাররা অংশ নিতে না পারে। সেটা কমিটির সকল সদস্য বুঝতে পেরে টেন্ডারের কার্যক্রম স্থগিত রাখতে এক মত হন। এবং তা লিখিত দেন। তবুও সিভিল সার্জন নিজে কমিটির সব সদস্য পরিবর্তন করে, আবাসিক মেডিকেল অফিসার জেলা হাসপাতালের বদলে রামু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার, আর জুনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি চকরিয়া এবং জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী আর জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারীকে সদস্য ২৩ ফেব্রুয়ারি আবার টেন্ডার যাচাই-বাছাই কমিটি করে সভা ডেকেছে। এতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে তাদের পছন্দ মত ঠিকাদারকের কাজ দিতে তারা মরিয়া হয়ে গেছে। কারণ তাদের কাছ থেকে আগে থেকেই বিপুল টাকা নিয়েছে তারা। আলাপকালে বেশ কয়েক জন ভুক্তভূগি ঠিকাদার বলেন, প্রতিটি বিলে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে ২% স্টোর কিপারকে ২% সিভিল সার্জনকে ৫% আর ট্রেজারিকে ১% ঘুষ দিতে হয়। মূলত বর্তমান সিভিল সার্জন যোগদানের পর থেকে অফিসের দুর্নীতির পরিমান বেড়ে গেছে। সে হিসাবে বেশ কয়েকটি অভিযোগ ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গেলে তারা তদন্ত করে তার সত্যতা পাওয়ায় বর্তমান সিভিল সার্জনকে ঢাকা তে ওএসডি করা হয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারী এ সংক্রান্ত কাগজ সিভিল সার্জন অফিসে এসে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেন সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা। পরিপত্রে বলা হয়েছে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডাঃ কমর উদ্দিনকে পূর্ণ আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা করা হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব (পার-২) একে এম ফজলুল হক। এদিকে সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে চরম অনিয়ম দুর্নীতির জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ করেছে। বেশ কয়েকজন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
এ ব্যাপারে সদ্য ওএসডি হওয়া সিভিল সার্জন ডাঃ কমর উদ্দিন বলেন, আমি চিঠি পাইনি শুনেছি। তাছাড়া আমি ছুটিতে আছি। এর বেশি কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

পাঠকের মতামত: