নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া ::
পেকুয়ায় ২ নারীসহ তিন জন রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করা হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টইটং ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী এদেরকে আটক করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে এসেছেন। মঙ্গলবার ১২ সেপ্টেম্বর ইউনিয়নের বটতলী খুইন্নাভিটা নামক এলাকা থেকে আটক করা হয়। আটককৃতরা মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক। তারা তিনজনই একই পরিবারের সদস্য। এ দিকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়েছে। মঙ্গলবার টইটং ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রান্তে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য এ মাইকিং করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী তার ইউনিয়নে যাতে করে এ পরিস্থিতিতে কোন রোহিঙ্গা আশ্রয় নিতে না পারেন সে বিষয়ে জনগনকে সজাগ থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন মাইকিং এর মাধ্যমে। প্রচার মাইকিং এ বলা হয়েছে মায়ানমারের শরণার্থী রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। তাদেরকে পুনর্বাসনের বিষয়টি সরকার নির্ধারণ করছেন। শরনার্থী শিবিরের বাইরে কোন রোহিঙ্গাকে দেশের মুল ভূখন্ডে স্থান দেয়ার প্রশ্নই আসে না। সম্প্রতি মায়ানমারের হত্যাযজ্ঞে রোহিঙ্গারা অধিকহারে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ার কৌশল করছে। টইটং পাহাড় ও সমতল বেষ্টিত এলাকা। পাহাড়ের এ সব স্থানে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে পড়তে পারে। তারা মায়ানমারের নাগরিক। কোন অবস্থায় এ টইটং ইউনিয়নে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটাতে দেওয়া যাবে না। যারা তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেবে তারা দেশের স্বার্থের পরিপস্থী হিসেবে বিবেচিত হবে। কোন অবস্থাতেই রোহিঙ্গা প্রশ্রয়দাতাদের ছাড় দেওয়া হবে না। মঙ্গলবার বিকেলে দুই নারীসহ তিন জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। আটকৃতরা হলেন: মায়ানমারের লেমশি বদলাপা[ড়া ফকিরাবাজার এলাকার মৃত সোলতান আহমদের পুত্র মৌলভী আবদুল হাকিম(৪০), তার শাশুড়ী আবদুল জলিলের স্ত্রী সাজেদা বেগম(৫০), সাজেদা বেগমের অবিবাহিত মেয়ে নুর করিমা(১৬)। আটককৃত রোহিঙ্গারা জানায়, তারা আগস্টের শেষের দিকে মায়ানমার থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। কুতুপালং শরনার্থী শিবিরে তারা আশ্রয় নিয়েছেন। বিয়ের প্রলোভন দিয়ে নুরুল আলম প্রকাশ ভেড়া মলয় নামের একজন মৌলভী তাদেরকে টইটং এ নিয়ে এসেছেন। সাজেদা বেগমের মেয়ে নুর করিমাকে বিয়ে করার কথা ছিল। মেয়েকে জামাই দিতে মা সাজেদা বেগম ও ভগ্নিপতি মৌলভী আবদুল হালিম টইটং এ আসেন। বিয়ের জন্য জামাকাপড় ক্রয় করা হয়েছে। মেয়ে কুমারী তবে বরের বয়স ৫০ এর উর্ধে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে জানাজানি হয়। তারা এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে অবগত করে। চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী জানায়, এদেরকে আটক করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। আরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা টইটং এ আশ্রয় নেওয়ার খবর পেয়েছি। বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে তাদেরকেও আটক করা হবে। সবাইকে এক যোগে শরণার্থী ক্যাম্পে প্রেরণ করা হবে। মাইকিং করেছি কোন অবস্থায় রোহিঙ্গাদের আমাদের টইটং এ প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। যারা আশ্রয় প্রশ্রয় দেবে তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বর্তমানে যাদেরকে আটক করা হয়েছে এদেরকে যারা নিয়ে এসেছে ক্যাম্পে প্রেরনের যে অর্থ ব্যয় হবে এর ব্যয়ভার বহন করবে তারা।
শিলখালীর পাহাড়ে মায়ানমারের পরিবার :
এ দিকে মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা পেকুয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে। শিলখালীর কাচারীমোড়া পাহাড়ে বসবাস করছে মায়ানমারের পরিবার। লম্বামোড়া নামক স্থানে রোহিঙ্গা একটি পরিবার বসতি স্থাপন করেছে। তারা ২/৩ মাস আগে থেকে শিলখালীতে এসে স্বপরিবারে অবস্থান নিয়েছে। জায়গা ক্রয় করেছে স্থানীয় পাহাড় দখলদারদের কাছ থেকে। নন জুড়িশিয়াল ষ্ট্যাম্প মুলে প্রায় ৬ শতক পাহাড়ি জায়গা ক্রয় করে বার্মাইয়া এ পরিবারটি। তারা রোহিঙ্গা নাগরিক। তবে পরিচয় দিচ্ছেন টেকনাফের বাসিন্দা বলে। মনোয়ারা বেগম নামের এক মহিলা ওই জায়গায় বসতি স্থাপন করছেন। তার স্বামী ওমর ফারুক মালয়েশিয়ায় থাকেন। মনোয়ারা ও তার অপর বোন ডালিয়া কাচারীমোড়ার ষ্টেশনের পূর্ব পাশের্^ লম্বামোড়ায় এসে জায়গা ক্রয় করে ঘর নির্মাণ করে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। দুইবোনের স্বামী মালয়েশিয়া প্রবাসী। তবে সাগরপথে দুইবোনের জামাই মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেন। স্বামী মালয়েশিয়ায় থাকা অবস্থায় দুইবোন পেকুয়াতে জায়গা ক্রয় করেছেন। ডালিয়া কক্সবাজারের লিংকরোডে পৃথক জায়গা ক্রয় করেছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানায়, কসাইপাড়ার জুবাইদা নামের এক মহিলা মায়ানমারের নাগরিকের সাথে বিবাহ হয়। জুবাইদার স্বামী রোহিঙ্গা নাগরিক মনোয়ারার ভাই। এ সুবাধে তারা পেকুয়াতে ঢুকে পড়ে। স্থানীয়রা আরো জানায়, বিএনপি ও জামায়াতের কিছু প্রভাবশালীদের সাথে রোহিঙ্গা ওই মহিলার সম্পর্ক রয়েছে। এদের ছত্রছায়ায় রোহিঙ্গা এ পরিবারটি কাচারীমোড়ায় বসবাস করছে। জয়নাল আবেদীন নামের স্থানীয় এক যুবক তাদের নেপথ্যে সহায়তা করছে। স্থানীয়রা জানায় শিলখালীর আরো বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গা ঢুকে পড়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা নুরুল হোছাইনের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা আশ্রয় ও পুর্নবাসন করার অভিযোগ উঠেছে। পেকুয়ার বিভিন্ন প্রান্তে রোহিঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের বকশিয়াঘোনা, রাইবাপেরপাড়া, মিয়ারপাড়া, সদর ইউনিয়নের চৈড়ভাঙ্গা এলাকায় বেশ কিছু পরিবারে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে বলে স্থানীয়রা গোপন সুত্রে নিশ্চিত করেছে।
পাঠকের মতামত: