ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়া উপকূলীয় কলেজের ৩শিক্ষককে পিটালো ছাত্ররা, ৯ ছাত্র বহিষ্কার, পরীক্ষা স্থগিত, থানায় মামলা

pekua-pic-riaz-06-11-2016পেকুয়া প্রতিনিধি :

কক্সবাজারের পেকুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজে ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে বেপরোয়া হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় ওই কলেজের তিন শিক্ষক গুরুতর আহত হয়েছে। আহত শিক্ষকরা হলেন, কলেজের ইংরেজী বিষয়ের প্রভাষক মো. আলম, প্রভাষক মো. বশির ও জীব বিদ্যা বিষয়ের প্রদর্শক এনামুল হক। রোববার (৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পেকুয়া জিয়া করেজে এ হামলার ঘটনাটি সংগঠিত হয়।

কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সুত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কলেজের হোস্টেল ভবনের নিচে পেকুয়া কলেজ ছাত্রদল নেতা ও কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র মো. সালাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে কলেজের ৭/৮ জন ছাত্রদল নেতাকর্মী জড়ো হয়ে কলেজের শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে। এসময় কলেজের ইংরেজী বিসয়ের প্রভাষক ছাত্রাবাস থেকে কলেজের একাডেমিক ভবনে আসার সময় ছাত্রদল নেতা সালাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে তার উপর হামলা চালানো হয়। এসময় ওই শিক্ষককে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক মো. আলম। তাকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেঠাতে শুরু করে ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে ক্যাডাররা। পরে ছাত্রদল ক্যাডাররা কলেজের একাডেমিক ভবনের ৩য় তলায় উঠে জীব বিদ্যা বিভাগের প্রদর্শক এনামুল হক আজাদের উপর ও হামলা করে ছাত্রদল ক্যাডারা। শিক্ষক এনামুল হককে লাটি দিয়ে বেদড়ক পিঠিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়। হামলাকারী কলেজ ছাত্রবাসের জানার কাছ ও ভাংচুর করেছে। এসময় কলেজের অন্যান্য শিক্ষক ও ছাত্ররা এগিয়ে আহত তিন শিক্ষককে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে পেকুয়া সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করে।

তবে পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি কামরান জাদিদ মুকুট দাবী করেছেন, পেকুয়া জিয়া কলেজে শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িত সালাহ উদ্দিন ছাত্রদলের কোন ইউনিটের নেতা বা কর্মী নয়।

তবে ছাত্রদল সভাপতি তা অস্বীকার করলেও কলেজ শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িত সালাহ উদ্দিন সরকার বিরোধী নানা আন্দোলন সংগ্রামে বেশ সরব রয়েছে এবং কলেজে ছাত্রদলের একজন দূর্ধর্ষ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত।

হামলায় গুরুতর আহত কলেজের ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক প্রভাষক মো. আলম অভিযোগ করেছেন, কলেজ ছাত্রদল নেতা সালাহ উদ্দিনের নেতৃত্বেই তাকেসহ কলেজ শিক্ষক বশির ও এনামুল হকের উপর হামলা চালিয়েছে। তিনি এ হামলাকারীদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

এদিকে হামলার ঘটনার বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ পেকুয়া থানার ওসিকে ফোনে অবহিত করে সহায়তা চান। পরে পেকুয়া থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় কলেজ ছাত্রদল নেতা সালাহ উদ্দিন, হিমেল, মিনার হোছাইন এর নেতৃত্বে ছাত্রদল ক্যাডারা পুলিশের উপর হামলা চেষ্টা করে। পরে পুলিশ ছাত্রদল ক্যাডারদের ধাওয়া করে পরিস্থিতি শান্ত করে।

অপরদিকে ঘটনার গতকাল রোববার দুপুরে কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে জরুরী সাংবাদিকদের ডেকে জরুরী প্রেস বিফ্রিং করেন। কলেজের অধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমান সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন ‘গত ৩ নভেম্বর কলেজের ২য় বর্ষের নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালে ইংরেজী ১ম পত্রের পরীক্ষায় চলাকালে নকল করার সময় শিক্ষকরা মিনার হোছাইনকে আটক করেন। পরে তাকে স্কেপেল নোটিশ দেওয়া হয়। কলেজ অধ্যক্ষ আরো বলেন, কলেজের কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী বিনা কারণে কলেজের তিন শিক্ষকের উপর ন্যাক্ষরজনক হামলা চালিয়েছে। আমরা যাদের পড়ালেখা করে মানুষের মত মানুষ করার সংগ্রাম করছি সেই ছাত্ররাই উল্টো আমাদের শিক্ষকের উপর হামলা করেছে। শিক্ষকদের উপর হামলাকারীরা ছাড় দেওয়া হবেনা। তদন্ত করে শিক্ষকদের উপর হামলাকারী ছাত্রদের চিহ্নিত করে থানায় মামলা দায়ের করা হবে। অধ্যক্ষ এ বিষয়ে বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশন করে অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করে দেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের কাছে সহায়তা কামনা করেছেন।

পেকুয়া থানার এসআই বিমল দেব নাথ জানান, কলেজে শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনার খবর পেয়ে তার নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও আহত মিক্ষকরা থানায় অভিযোগ দায়ের করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। GUPC

 

পাঠকের মতামত: