ঢাকা,বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

চেয়ারম্যান না নরপশু! যুবকের উপর এ কেমন বর্বরতা…

13413637_551546691720237_2417938637517656489_nমুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া-কুতুবদিয়া(কক্সবাজার) প্রতিনিধি :::

গেঞ্জি ও চেক লুঙ্গি পরিহিত লোকটি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। নাম তার মো. জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী। ক্ষমতাসীন দলের নেতা হিসেবে এলাকায় তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। গতকাল ৯ জুন সকাল ৯টা। ঘটনাস্থল টইটং ইউনিয়ন পরিষদের সামনের রাস্তায় শতাধিক লোক জটলা পাকিয়ে চেয়ারম্যানের বিভৎস্য নির্যাতনের চিত্র প্রত্যক্ষ করছেন। প্রেমিকা মুবিনা আকতারকে সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় টইটং ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন গ্রাম পুলিশ মৌলভী বাজার থেকে আটক করেন রেজাউল করিম নামের এক যুবককে। তিনি টইটং ইউনিয়নের গুদিকাটা গ্রামের মোস্তাক আহমদের পুত্র।

 এসময় খবর পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টইটং ইউনিয়নের কয়েকজন গ্রাম পুলিশ যুবক রেজাউল করিমকে হাত-পা রঁশি দিয়ে বেঁধে হাজির করেন পরিষদের সামনে। এরপর সেখানে একটি গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরে হাজির হন ইউনিয়ন পরিষদের ‘ব্যাপক’ ক্ষমতাধর চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। এসময় চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশের কাছ থেকে একটি লাটি নিয়ে বেধড়ক পেঠানো শুরু করেন যুবক রেজাউল করিমকে। শত কাকুতি মিনতি করেও রক্ষা পেলেনা অসহায় রেজাউল।

 দেখা গেছে, ওই যুবক রেজাউলকে রাস্তায় ফেলে তার শরীরের উপর চেয়ারম্যান দুই পা তুলে দিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায়। অবশ্য এর পূর্বে গ্রাম কয়েকজন গ্রাম পুলিশ ওই যুববকে ব্যাপক মারধর করে। উপস্থিত শতাধিক লোক এসময় চেয়ারম্যানের মধ্যযুগীয় ও বিভৎস্য নির্যাতনের চিত্র দেখে হতবাক হয়ে পড়েন। কিন্তু ক্ষমতাধর চেয়ার‌্যানের ভয়ে ওই যুবককে রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনি। সিনেমার স্টাইলে যুবক রেজাউল করিমকে প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। সকাল ১১টার দিকে পেকুয়া থানা পুলিশে খবর পাঠায় ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদ। পরে পুলিশ এসে ওই যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় থানায় নিয়ে যায়। থানা থেকে ওই যুবককে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হাজির করেন পেকুয়া নির্বাহী ম্যাজিষ্টেটের আদালতে। পেকুয়ার ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট মো. মারুফুর রশিদ খান ওই যুবককে ইভটিজিংয়ের অভিযোগে তিন মাসের সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেছেন।

 স্থানীয়রা জানান, যুবক রেজাউল করিমের সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল একই এলাকার ছাবের আহমদের কন্যা মুবিনা আকতারের সাথে। ঘটনার দিন ভোরে তারা দুইজননেই পালিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য বের হন। পথিমধ্যে সকাল ৮টার দিকে বারবাকিয়া ইউনিয়নের মৌলভী বাজার থেকে প্রেমিক-প্রেমিকা দুইজনকে আটক করেন টইটং ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন গ্রাম পুলিশ। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের সামনের রাস্তায় এনে চেয়ারম্যান ও গ্রাম পুলিশেরা মিলেমিশে যুবক রেজাউল করিমের উপর হায়েনার মতো নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের সময় উপস্থিত লোকজন এসময় নিজেদের চোখের পানিও সংবরণ করতে পারেনি। লোকজনের দু’চোখ বেয়ে পানিয়ে গড়িয়ে পড়লেও ক্ষমতাধর ইউপি চেয়ারম্যানের ভয়ে প্রতিবাত করতে পারেনি।

 নির্যাতনের শিকার যুবক রেজাউল করিমের বড় ভাই শহিদুল করিম অভিযোগ করেছেন, তার ভাইকে বিনা অপরাধে চেয়ারম্যান জাহেদ মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে। তার ভাইয়ের কোন অপরাধ ছিলনা। এরপরেও চেয়ারম্যান তাদের কোন কথা না শুনে তার ভাইকে অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে গুরুতর আহত করে ক্রান্ত হননি পুলিশ সোপর্দ্দ করে তার নিরাপরাধ ভাইকে তিন মাসের সাজা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় তার ভাইয়ের উপর নির্যাতনকারী চেয়ারম্যানের কঠোর শাস্তি দাবী করেছেন।

 পেকুয়ার ইউএনও মারুফুর রশিদ খান জানান, পুলিশ তার কাছে ওই যুবকে ইভটিজিংয়ের অভিযোগে নিয়ে আসলে তাকে তিন মাসের সাজা দেওয়া হয়েছে। এরপূর্বে কি ঘটেছে তার জানা নেই।

 অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে টইটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এক মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রাম পুলিশ ওই যুববকে তার কাছে নিয়ে আসলে তিনি হালকা-পাতলা উত্তম মধ্যম দিয়েছেন। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কেন ওই যুবককে নির্যাতন চালিয়েছেন এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন‘ ভাই ভূল হয়ে গেছে, এ নিয়ে কোন রিপোর্ট করবেননা। প্রয়োজনে আমার পক্ষে পত্রিকায় একটা রিপোর্ট করেন আমি কাল সকালে আপনার জন্য খরচপাতি পাঠিয়ে দেবো!

পাঠকের মতামত: