ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করলেন শিলখালী ইউপির চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া :: পেকুয়ায় এবার প্রকল্পের টাকা গায়েব করলেন শিলখালী ইউপির চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা নুরুল হোছাইন। বিচারিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে গ্রাম আদালতে এজলাস নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে সরকারী অর্থ আত্মসাত করেছেন শিলখালী ইউপির চেয়ারম্যান। এতে করে স্থানীয়দের মাঝে বিরুপ প্রভাব পড়তে দেখা গেছে।

এ দিকে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের ইউনিয়ন পরিষদ শাখা-২ প্রেরিত অর্থ লোপাট করেছেন খোদ ইউপি চেয়ারম্যান। এ খবর চাউর হলে শিলখালী ইউনিয়নে তোপের মুখে পড়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। জনরোষ এড়াতে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল হোছাইন গা ঢাকা দিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছে।

প্রাপ্ত সুত্র জানায়, শিলখালী ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। গ্রাম আদালতে এজলাস স্থাপন করতে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন খাতে অর্থ বরাদ্ধ দিয়েছেন। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে প্রকল্প খাতের অনুকুলে সরকার এ সব বরাদ্ধ দেয়।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা থোক বরাদ্ধ থেকে শিলখালী ইউনিয়ন পরিষদের জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে পেকুয়া উপজেলার ২ টি ইউনিয়ন পরিষদ থোক বরাদ্ধ থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থ পেয়েছে।

সুত্র জানায়, শিলখালী ও উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের অনুকুলে গ্রাম আদালতের এজলাস স্থাপনের জন্য পৃথক এ সব বরাদ্ধ প্রাপ্ত হন। ওই অর্থ বছরে ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালত পরিচালনার সুবিধার্থে এজলাস নির্মাণের জন্য এ দুটি ইউনিয়ন পরিষদ অর্থের বরাদ্ধ নিয়েছে।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউপি-২ শাখা এর পরিপত্র থেকে জানা গেছে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচি ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা থোক বরাদ্ধ খাতে সারা দেশের ৪১৬ টি ইউনিয়ন পরিষদের জন্য প্রকল্প খাতে বরাদ্ধ দেয়া হয়। এরই মধ্যে পেকুয়া উপজেলায় দুটি ইউনিয়ন পরিষদ প্রকল্প বাস্তবায়ন খাতে বরাদ্ধ পান। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সৈয়দ মো: নুরুল বাসির এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেন।

সুত্র জানায়, উপজেলার দুটি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে শিলখালী ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতে এজলাস নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। উজানটিয়া ইউপির গ্রাম আদালতে এজলাস স্থাপন হয়েছে। এ দিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের অনুকুলে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে ওই অর্থ বছরের প্রকল্প খাতের সমুদয় অর্থ বিএনপি থেকে নির্বাচিত ওই চেয়ারম্যান আত্মসাত করেছে।

সরেজমিন পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা গেছে শিলখালী ইউপির গ্রাম আদালতে এজলাস স্থাপন নেই। প্রকল্পের টাকা ছাড়করণ করা হয়েছে ৪ বছর আগে। কিন্তু এখনো ওই ইউপিতে এজলাস স্থাপন নেই।

এ ব্যাপারে শিলখালী ইউপির সদস্য শাহাব উদ্দিন জানান, পেকুয়া উপজেলায় সব ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত পরিচালনার জন্য এজলাস রয়েছে। কিন্তু আমরা ওই সুবিধা থেকে বঞ্চিত কেন জানতে চাই। এখন জেনেছি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছে। এ সবের ফায়সালা হওয়া চাই। ইউপির সদস্য লুৎফর রহমান বলেন, সরকার টাকা ছাড় দেওয়ার পরও ৪ বছরের মধ্যে কেন কাজ বাস্তবায়ন হয়নি এ সবের তদন্ত চাই।

ইউপির সদস্য আবদু ছমদ বলেন, আমরাতো আগে কখনো শুনেনি। এখন চিঠিতে দেখছি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে এজলাসের জন্য। শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান চৌধুরী জানান, শিলখালীতে সরকারী অর্থের লোপাটের উৎসব চলছে। সরকার ও জনগনের টাকা গায়েব করে যে ভাবে অন্যায় করছে এর বিচার হতে হবে।

ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক বেলাল উদ্দিন জানান, এখানেতো এজলাস নেই। টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে এ মাত্র শুনেছি। ইউপি সদস্যদের মধ্যে অনেকে জানান, চেয়ারম্যান ৪ বছর আগে প্রকল্পের টাকা গায়েব করেছে। এখন বিপাকে পড়ার আশংকা আঁচ করতে পেরে কৌশলে কাজটি করার প্রক্রিয়া করছে। তবে আমরা এ দুর্ণীতির বিচার দাবী করছি।

ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেচী জানান, সরকারের বরাদ্ধের অর্থ শিলখালীতে সবচেয়ে লোপাট হয়েছে। ইউপির সাবেক সচিব আল আমিন বলেন, আমি কয়েক দিন আগে বদলি হয়েছি। তবে প্রকল্পের অর্থ ছাড় পেতে চেয়ারম্যান সে সময় কাগজপত্র চুড়ান্ত করছিলেন।

ইউপির চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন জানান, কিছু মেরামত করেছি। এজলাস নির্মাণ কেন হয়নি এমন প্রশ্ন করলে চেয়ারম্যান প্রশ্নটি এড়িয়ে যান এবং দ্রুত মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি পেকুয়ার প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এটি থোক বরাদ্ধের প্রকল্প। আমরা পরিকল্পনা চুড়ান্ত করি। তবে টাকা ছাড় দিতে আমাদের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন পড়েনা।

পাঠকের মতামত: