ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

বেড়িবাঁধ কেটে পেকুয়ায় চেয়ারম্যানের স্লুইস গেট!

বন্যায় তলিয়ে যাবে উজানটিয়া ।। ব্যবস্থা নিতে পাউবোর সুপারিশ

মো. ছফওয়ানুল করিম, পেকুয়া ::  কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ‘টেকপাড়া বেড়িবাঁধ’। মাতামুহুরী নদীর খরস্রোতা থেকে উজানটিয়াবাসিকে সুরক্ষা দিতে পাউবোর ৬৪/২বি ফোল্ডারের প্রায় ২ কিলোমিটারের অধিক দীর্ঘ এ বেড়িবাঁধটি নির্মাণে সম্প্রতি সরকার ব্যয় করেছে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। মার্চে সারাদেশের লকডাউন শুরুর আগেই বেড়িবাঁধটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। বন্যাপ্রবণ এবং দুর্গম এলাকায় অবস্থিত এ বেড়িবাঁধটি নির্মাণে ঠিকাদারের সময় লেগেছে প্রায় ৩ বছর। কিন্তু এলাকায় করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাতের আঁধারে নবনির্মিত এই গুরুত্বপূর্ণ বেড়িবাঁধটি কেটে ব্যক্তিমালিকনাধীন মৎস্য প্রজেক্টে পানি ঢুকানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি চক্রের বিরুদ্ধে। আরো গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, সরকারি এ বেড়িবঁধি কাটায় সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরী। তার বক্তব্যেও মিলেছে এ অভিযোগের সত্যতা।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে কেটে ফেলা বেড়িবাঁধটি পরিদর্শন করে আসেন পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাঈকা শাহাদাত। দৈনিক আজাদীকে তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরে আমি বেড়িবাঁধটি পরিদর্শন করে এসেছি। এসেই উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রধান ও মৎস্য অফিসার এবং উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও তাদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সবগুলো প্রতিবেদন পেলেই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৪ সাল থেকে স্থানীয় একটি চক্র শুধুমাত্র গুটিকয়েক ব্যক্তির স্বার্থে প্রতিবছর বেড়িবাঁধ কেটে ফেলে। যারফলে পুরো বেড়িবাঁধটি হুমকির মধ্যে পড়ে যায় এবং উজানটিয়া ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। ক্ষতিগ্রস্তদের একজন স্থানীয় অধিবাসি এডভোকেট মীর মোশারফ হোসেন টিটু বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান জনৈক আখতার গং এর লোকজনের মাধ্যমে বেড়িবাঁধটি রাতের আাঁধারে কেটে ফেলছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে উজানটিয়াবাসির জন্য চরম দুর্ভোগের একটি পথ তৈরী করে হচ্ছে। এটি এখনি বন্ধ করা না হলে সরকারের দেড় কোটি টাকা খরচ করে তৈরীকৃত নতুন বেড়িবাঁধটি একবছরেই আবার পানিতে বিলিন হয়ে যাবে। স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা নেওয়াজ সিকদার, আনোয়ার হোসেনসহ আরো অনেকে বেড়িবাঁধ কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার জানামতে উজানটিয়া ইউনিয়নের চারপাশের বেড়িবাঁধে এ ধরনের ব্যক্তি মালিকনাধীন কমপক্ষে ২৫০-৩০০ স্লুইচ রয়েছে যেগুলো যার যার স্বার্থে বেড়িবাঁধ কেটেই করা হয়েছে। অনাবাদি পড়ে থাকা কয়েকশ একর জমির চাষাবাধের স্বার্থে বসানো টেকপাড়ার এই ‘পাইপ স্লুইচটি’র বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্রমূলকভাবেই অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে আমি মনে করি। এই স্লুইচ গেটটি অবৈধ হলে উজানটিয়ার সব ব্যক্তিমালিকনাধীন অবৈধ স্লুইচ গেট বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। তবে এই স্লুইচ গেটটির কারণে বেড়িবাঁধের কোন ক্ষতি হবে না এ গ্যারান্টি আমি লিখিতভাবে দিতে পারি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও বেড়িবাঁধটির তদারক কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন চকরিয়া নিউজকে জানান, সরকারি প্রকৌশলীরা সার্ভে করে স্থানীয়দের চাষাবাদের সুবিধার্থে নতুন নির্মিত বেড়িবাঁধের যেখানে যেখানে স্লুইচ গেট দেয়া প্রয়োজন সেখানে তা দেয়া হয়েছে। নব নির্মিত বেড়িবাঁধ কেটে ৬৪/২বি ফোল্ডারে বসানো আলোচিত ‘পাইপ স্লুইচটি’ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বসানো হয়েছে। যা সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যেই সুপরিশ করা হয়েছে।
একসময় পেকুয়ার এসব বেড়িবাঁধ কঙবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে থাকলেও বর্তমানে পেকুয়ার সবগুলো বেড়িবাঁধসহ চকরিয়ার কিছু অংশ বান্দরবান ডিভিশনের অধিনে চলে যায়। এ বিষয়ে জানতে বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, ব্যাপারটা আমি জানি এবং সম্প্রতি আমাদের একজন এসও সহ পেকুয়ার ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অবৈধভাবে বেড়িবাঁধ কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যেই সুপরিশমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
উজানটিয়া বেড়িবাঁধের অবস্থিত আরো ২৫০-৩০০ অবৈধ স্লুইচের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সবগুলোই আমাদের রিপোর্ট আছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে প্রতিবছর টেকপাড়ার এই অংশের বেড়িবাঁধ ভেঙে উজানটিয়া ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: