ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ায় আগুনে পুঁড়ল ৭০ একর বন

পেকুয়া প্রতিনিধি ::  পেকুয়ায় আগুনে পুঁড়ল প্রায় ৭০ একর বন। আগুনের লেলিহান শিখায় চট্টগ্রাম দক্ষিন বনবিভাগের আওতাধীন বারবাকিয়া রেঞ্জের টইটং বনবিটের মালিকানাধীন পাহাড়ের বিস্তীর্ণ ভূমির বিপুল গাছ গাছালি ও বনজ সম্পদ পুঁড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে করে সরকারের কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে গেছে।

উপজেলার টইটং ইউনিয়নের পূর্ব টইটং গলাছিরা, বড়ঝিরির আরাতুল্ল্যার মুখ নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকান্ডের এ খবরে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, গত ১ সপ্তাহ আগে পাহাড়ের রিজার্ভ ভূমিতে অগ্নিকান্ডের সুত্রপাত হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বনবিভাগ চলতি অর্থবছরে প্রায় ৭০ একরেরও বেশী জায়গায় বনায়ন সৃজন করার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সারা দেশে বনবিভাগ বনায়ন সৃজনের উদ্যোগ নেন। এর ধারাবাহিকতায় টইটং বনবিটের মালিকানাধীন বনবিভাগের জমিতেও একই প্রকল্পের আওতায় বাগান সৃজন করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বিভিন্ন ফলজ ও বনজ বাগান সৃজনের জন্য বনবিভাগ ভূমির জায়গা বাছাইকরন চুড়ান্ত করে।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দীর্ঘমেয়াদী বাগান সৃজনের জন্য তারা ট্রেস ম্যাপ ও নকশাও অনুমোদন করেছে। সুত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের বাগান সৃজনের জন্য বনবিভাগ পাহাড়ে পরিচর্যা ও ভূমি উপযুক্তকরন কাজ করছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, বনবিভাগের বাগান সৃজন নিয়ে বনবিট কর্মকর্তাসহ একটি দালাল সিন্ডিকেট ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্ণীতিতে লিপ্ত হয়েছেন। বাগান রোপনের আগেই টইটং বিট কর্মকর্তা জাবেদুল আব্বাছ চৌধুরী দুর্ণীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। জায়গা বাছাইকরনে বনবিট কর্মকর্তা জাবেদুল আব্বাছ চৌধুরী হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল অর্থ। পাহাড়ের রিজার্ভ ভূমি স্থানীয় পর্যায়ে পূর্ব থেকে রক্ষনাবেক্ষন করে আসছেন বিভিন্ন ব্যক্তিগন।

পাহাড়ের রিজার্ভ ভূমিতে পার্শ্ববর্তী স্থানের ব্যক্তিপর্যায় থেকে বাগান সৃজন করেছেন। প্রায় ২০ বছর ধরে পতিত ভূমি স্থানীয়রা আবাদ করে সেখানে বিভিন্ন গাছ গাছালির আবাদ করেন। সুত্র জানায়, এ সব ব্যক্তিপর্যায়ের বাগানে হাজার হাজার বৃক্ষ পাহাড়ে সৃজিত আছে। বনবিভাগ নতুন করে বাগান সৃজনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এ সব স্থানে পূর্ব থেকে বাগান সৃজন ছিল।

স্থানীয়রা বিপুল শ্রম ও অর্থ ব্যয় করে গাছ গুলি উপযুক্ত করেছেন। মধুখালীর লম্বাঘোনা এলাকার মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, আমি ৩০ বছর আগে থেকে গভীর বনাঞ্চলে নিজ উদ্যোগে গাছ গাছালি রোপন করেছি। ১০ একর জায়গায় আমি বাগান করেছি। বর্তমানে গাছগুলি বিভিন্ন সাইজের হয়েছে। গত কিছুদিন আগে বিট কর্মকর্তা জাবেদুল আব্বাছ চৌধুরী, বনবিভাগের সোর্স অলি আহমদসহ কয়েকজন এসে বাগানে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রশ্ন করছিলাম কেন এমন করছেন। বিট কর্মকর্তা আমার কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা দাবী করেছিল। আমি তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমার বাগান আগুন দিয়ে পুঁড়িয়ে দেয়। আমি ৩ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছি। স্বপ্নের সর্বনাশ হয়েছে। বাগানে প্রায় ৫ লক্ষাধিক গাছ ছিল।

মধুখালীর মৃত নুর আহমদের ছেলে আবদু ছবুর জানান, আমি ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি বিট কর্মকর্তাকে। জঙ্গল পরিষ্কার করতে ফের দিয়েছি আরো ৩৩ হাজার টাকা। ৬৩ হাজার টাকা নিয়েও আমার বাগান পুঁড়িয়ে ফেলে। কিছু অংশে আগুন দিয়েছে। অবশিষ্ট বনভূমি কেটে সাবাড় করে। আমি ২০ বছর আগে লম্বাঘোনায় গোলপাহাড় নামক রিজার্ভ জায়গা রক্ষনাবেক্ষন করছি। তারা নতুন করে যে সব চারা রোপন করবে এ সব প্রজাতির গাছ আমি ২০ বছর আগে রোপন করেছি। আমরা বলছি আগুন দিয়ে না পুঁড়িয়ে উঠতি বাগান বনবিভাগের প্রয়োজনে ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু তারা চরমভাবে অন্যায় করেছে।

রমিজপাড়ার মোহাম্মদ হাসান জানান, অলি আহমদ বিট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে। পরে আমার বাগানে আগুন ধরিয়ে দেয়।

মধুখালীর ওমর আলীর ছেলে হানিফ জানান, আমি বড়ঝিরি পাহাড়ে এক একর বাগান করেছি। আম, লিচু, পেয়ারা, হরতকিসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ সৃজন করি। আমার বাগানও আগুন দিয়ে ধসে ফেলে।

ঢালারমুখ নামক পাহাড়ী এলাকার বাসিন্দা আজিজুর রহমান জানান, জলবায়ুু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশ বিপন্ন হয়েছে। আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে খালি জায়গায় গাছ রোপন করেছি। আমি ৫ বছর ধরে ২ একর জায়গা রক্ষনাবেক্ষন করছি। আম, লিচু, লেবু, গর্জন, আমলকি, জাম, শাল, বাটনা, একাশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির চারা রোপন করেছি। কিছু কিছু চারায় ফল এসেছে। গত ১ সপ্তাহ আগে আমার বাগানে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিট কর্মকর্তা জাবেদুল আব্বাছ চৌধুরীকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। তিনি কথা দিয়েছিলেন আমার বাগান বিনষ্ট করবে না। অলি আহমদকেও টাকা দিয়েছি। ৬ হাজার টাকার মধুও দিয়েছি। আমরা ১০/১৫ জনে টাকা দিয়েছি। লিটনের কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা নিয়েছে। প্রায় ১০০ একরেরও বেশী পাহাড়ী জায়গা লিটন ভোগ করছে। তার বাগান থেকে এক কিঞ্চিত পরিমাণ জায়গায়ও বনায়নের জন্য নেয়নি বিট কর্মকর্তা। ট্রেস ছিল অন্যদিকে। লিটন টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে আমরা গরীব মানুষের বাগানের উপর চাপিয়ে দিয়েছে।

আবদু ছবুরের স্ত্রী ছৈয়দা খাতুন জানান, আমার স্বামী গাছ কাটতে বান্দরবনের সাঙ্গুতে যায়। অগ্রিম টাকা নিয়ে বিট কর্মকর্তাকে দিয়েছে। আমি নিজেও ৫ হাজার টাকা দিয়েছি।

আবদু ছবুরের মা রুনা খাতুন জানান, আমার ছেলের কাছ থেকে টাকা নিয়েও বন কেড়ে নিয়েছে। আমি ছেলের দেওয়া টাকা ফেরত চাই। বিট কর্মকর্তার স্থানীয় সোর্স হিসেবে কাজ করে অলি আহমদ। এ দালালের কাছে মানুষ অতিষ্ট হয়েছে। প্রতিটি বাড়ি থেকে বিট কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা তুলে। বিট কর্মকর্তা পাহাড়ে আসার সময় অলি আহমদকে সাথে নিয়ে আসে।

টইটং বিট কর্মকর্তা জাবেদুল আব্বাছ চৌধুরী জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাগান হচ্ছে। সরকারী জায়গায় বাগান করছি আমরা। গাছ রোপন করব। পরিচর্যা স্থানীয়রা করবে। কারো কাছ থেকে টাকা নিই নাই। আগে যে নিয়মে বাগান ছিল এখন তা পরিবর্তন হয়েছে। কেউ ভোগ করে থাকলে জায়গা তার নিয়ন্ত্রনে থাকবে।

পাঠকের মতামত: