ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পেকুয়ার চালবাজি নিয়ে এডিসিসহ ৯ জনকে ডাকা হয়েছে রোববার কমিটির সভায়

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী:: পেকুয়ার চালবাজি নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রামে বৈঠকে বসছেন আগামীকাল রোববার ১০মে সকাল ১০টায় চট্টগ্রামে স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালকের কার্যালয়ে। সেখানে একজন নতুন কর্মকর্তা সহ মোট ৯জনকে উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ৯জনের মধ্যে ৭জন গত ৪মে পেকুয়া উপজেলা পরিষদ ভবনে তদন্ত কমিটির সামনে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এ ৭জনের বক্তব্যের বিপরীতে আরো কিছু বক্তব্য থাকায় সেগুলো জেনে নেওয়া হবে। সে ৭ জনের বক্তব্যের অমিল ও স্পর্শকাতরতা থাকার করাণে জবানবন্দিদাতাদের সামনাসামনি বসিয়ে ক্রস বক্তব্যের মাধ্যমে সেগুলোর অস্পষ্টতা দূর করে প্রদত্ত জবানবন্দি সুস্পষ্ট করা হবে।

পেকুয়ার ১৫ টন চাল আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রধান, স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক (জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত সচিব) দীপক চক্রবর্তী শনিবার ৯মে একথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, রোববার ৯মে যে একজন নতুন কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটির বৈঠকে ডাকা হয়েছে, তিনি হলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার। গত ২৭মে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পেকুয়া গিয়ে ১৫ টন চাল আত্মসাত অভিযোগ তদন্ত করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন। এই তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে দায়িত্ব থেকে অপসারণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেছিলেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার’কে তাঁর তদন্ত প্রতিবেদন সহ রোববার তদন্ত কমিটির বৈঠকে হাজির হতে বলা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত সচিব দীপক চক্রবর্তী বলেন, গত ৪ মে শুধু জবানবন্দি গ্রহণ করতে করতে ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসায় কমিটি আর জবানবন্দি গুলো পর্যালোচনা করতে পারেননি।

এছাড়া, আরো যে ৮ কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিকে রোববার অনুষ্ঠিতব্য তদন্ত কমিটির বৈঠকে হাজির হতে বলা হয়েছে, তারা হলেন-পেকুয়া’র ইউএনও সাঈকা সাহাদত, পেকুয়ার বর্তমান পিআইও এবং সাবেক পিআইও, সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসার, টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের বরখাস্ত হওয়া চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, একই ইউনিয়নের সচিব, পেকুয়া ইউএনও অফিসের একজন কর্মচারী এবং পেকুয়া পিআইও অফিসের একজন কর্মচারী। টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী মামলার আসামি হওয়ার কারণে তিনি পলাতক থাকায় তাঁর জবানবন্দি কিভাবে নেবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটির প্রধান দীপক চক্রবর্তী বলেন, তাঁর নোটিশ আমরা ইউপি সচিবের মাধ্যমে তাঁর কাছে প্রেরণ করেছি। তিনি কি স্বশরীরে হাজির না হয়ে লিখিত বক্তব্য তদন্ত কমিটির কাছে বাহক মারফত প্রেরণ করতে পারবেন কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে তদন্ত কমিটির প্রধান জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত সচিব দীপক চক্রবর্তী বলেন, ‘দেখা যাক সময় আসলে ওনি কি করেন।’

স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক, (জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত সচিব) দীপক চক্রবর্তী জানান, তাদের সকলের জবানবন্দি, ক্রস জবানবন্দী গ্রহনের পর কমিটির অন্য ২ জন সদস্য কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (উপসচিব) শ্রাবস্তী রায় ও কক্সবাজার জেলা ত্রান ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল আলম সহ তাঁরা বৈঠক করবেন। তাঁরা সকল জবানবন্দি পর্যালোচনা, ফাইলপত্র সহ সব ডকুমেন্টস দেখে তদন্ত প্রতিবেদন ও করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ মালা তৈরি কাজ শুরু করবেন বলে তিনি জানান। এজন্য আগে সংগৃহীত ও পূর্বে তদন্তকালীন সময়ের প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্তও তাঁরা সাথে নিয়েছেন।

কক্সবাজারের বহুল আলোচিত পেকুয়া উপজেলার ত্রাণের ১৫ টন চাল আত্মসাতের ঘটনা তদন্তের বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিটি গঠন হওয়ার ১৫ কার্যদিবস অর্থাৎ আগামী ১৮ মে’র মধ্যেই স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে জমা দেওয়া হবে বলে জানান, তদন্ত কমিটির প্রধান দীপক চক্রবর্তী।

এর আগে গত ৪ মে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রধান, স্থানীয় সরকার বিভাগ, চট্টগ্রামের পরিচালক (জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত সচিব) দীপক চক্রবর্তী সহ কমিটির অপর ২ সদস্য পেকুয়া উপজেলা পরিষদ ভবনে এসে ১৫ টন চাল আত্মসাতের ঘটনায় বিভিন্নজনের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

প্রসঙ্গত, পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন থেকে গত ৩১ মার্চ টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর নামে বরাদ্দকৃত ১৫ টন ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগে এনে গত ২৮ অক্টোবর তাকে একমাত্র আসামি করে পেকুয়ার বর্তমান পিআইও বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পরদিন স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এক আদেশে জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।

পরে গত ৩০ এপ্রিল একই ঘটনার রেশ ধরে পেকুয়ার ইউএনও সাঈকা সাহাদাত’কে বদলী করা হয়। আবার ২৪ ঘন্টা পার না হতেই ১মে পেকুয়ার ইউএনও সাঈকা সাহাদাতকে পেকুয়া থেকে ৩০ এপ্রিলের বদলী আদেশ স্থগিত করা হয়। ১৫ টন ত্রাণের চাল আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে বর্ণিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গত ২৯ এপ্রিল গঠন করা হয়।

পাঠকের মতামত: