ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ার শিলখালীতে সড়ক থেকে শতাধিক গাছ কেটে সাবাড়, ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :;  কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের স্কুল স্টেশন এলাকা থেকে জনতা বাজার যাওয়ার পথে একটি সড়কের পাশ থেকে শতাধিক গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলেছে একটি প্রভাবশালী চক্র। ব্যক্তি মালিকানাধীন গাছ দাবি করে এসব গাছ কাটা হয়েছে। তবে গাছগুলো কাটতে বনবিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো ধরনের অনুমতি নেননি ওই প্রভাবশালী চক্র। এতে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবাদীরা।

গাছগুলোর মালিক দাবিদার ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী দাবি করেন, ১০-১২ বছর আগে গাছগুলো তার মৎস্য খামারের পুকুর পাড়ে লাগিয়েছিলেন এবং গাছগুলো থেকে ‘নিথিয়াম গ্যাস’ বের হয়ে পুকুরের মাছ আক্রান্ত হবার কারণেই মৎস্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তিনি গাছগুলো কেটেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন জানান, শিলখালী ইউনিয়নের স্কুল স্টেশনের একটু দক্ষিণ দিক থেকে হেদায়তাবাদ হতে একটি সরকারী রাস্তা পূর্ব দিকে গিয়ে শিলখালী জনতা বাজারে মিলিত হয়। সে রাস্তার পাশেই শুরুর দিকে ছিল শতাধিক বড় বড় পরিবেশবান্ধব গাছ। যেগুলো একদিক দিয়ে ছিল দৃষ্টিনন্দন অন্যদিকে পথচারীদের ছায়া এবং অক্সিজেন দিয়ে আসছিল বছরের পর বছর। কিন্তু হঠাৎ করে একদিনে একসাথে এতোগুলো গাছ কেটে ফেলায় হতবাক এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘গাছগুলোর কান্না কারো কানে যাচ্ছে না। এ গাছগুলো কাটার ফলে এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যক্তি মালিকনাধিন গাছ হলেও প্রশাসনের অনুমতি ব্যতিত এতোগুলো গাছ কাটা যায় কিনা সেটা প্রশ্ন থেকেই যায়।’

জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘গাছগুলো সরকারী সড়কের পাশে হলেও সেগুলো কাটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল। আর তাই ব্যক্তিগত গাছ কাটছেন মনে করে কেউ বাঁধা দেয়নি। আমরাও পরিবেশের ক্ষতির কথাটা সেভাবে চিন্তা করিনি।’

স্থানীয় শিলখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন বলেন, ‘গাছগুলোর মালিক নির্বাচনে আমার সঙ্গে প্রতিদ্ধন্দ্বিতা করেছিলেন। তাই আমি সে বিষয়ে মন্তব্য করতে চাইনা। তবে একসাথে এতোগুলো গাছ কাটায় পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’

পেকুয়া পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি এডভোকেট মীর মোশাররফ হোসেন টিটু বলেন, ‘শিলখালীতে রাস্তার পাশে কেটে ফেলা গাছগুলোর মালিক কে বা কারা সে তর্কে না গিয়ে আমি বলতে চাই গাছগুলো ছিল পরিবেশবান্ধব। যেগুলো পরিবেশের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। আর এ গাছগুলো কাটাতে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে বৃক্ষ নিধনকারীরা আরো উৎসাহিত হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাছের মালিক দাবিদার ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আমি ১০-১২ বছর আগে ভারত থেকে পরিবেশবান্ধব গাছগুলো এনে আমার মৎস্য প্রকল্পের পাড়ে রোপন করি। কিন্তু গাছগুলো থেকে এক প্রকার ‘নিথিয়াম গ্যাস’ নির্গত হয়ে পুকুরের মাছের ক্ষতি হচ্ছে বিধায় প্রজেক্টের সবগুলো গাছ কেটে ফেলি। আমি পুকুর পাড়ে নতুন করে নারিকেল গাছ লাগানোর চিন্তা করছি। গাছগুলো কাটাতে পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে অট্টহাসিতে তিনি বলেন, ‘এখানে পাহাড়ি কোন গাছ ছিল না কমপ্লিটলি আমার নিজের গাছ।’

পেকুয়া উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সদস্য সচিব এবং বনবিভাগের বারবাকিয়া রেঞ্জ অফিসার আবদুল গফুর মোল্লা চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘ব্যক্তি মালিকানাধীন হোক আর যাই হোক গাছ কাটার এখতিয়ার কারো নেই। যদি কেটে থাকে তাহলে এটি একটি দন্ডনীয় অপরাধ। একসাথে এতোগুলো গাছ কাটার ফলে পরিবেশের যে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিনা। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, আপনি সন্তান জন্ম দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু আপনি তাকে গলাটিপে হত্যা করতে পারেন না।’

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈকা সাহাদাত চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে প্রকৃত বিষয় জেনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমুল হুদা চকরিয়া নিউজকে জানান, ‘গাছ কাটা পরিবেশ আইনে মারাত্মক অপরাধ। দেশীয় আইনে গাছ কাটার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। তবে যে সড়কের পাশ থেকে গাছগুলো কাটা হয়েছে সে সড়কটি সরকারী কোন অধিদপ্তরের অধীনে তা দেখে তাদেরকেই আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

পাঠকের মতামত: