ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ার মগনামায় উচ্ছেদ হওয়া ৭৭টি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে

স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কাকপাড়া ও জালিয়াপাড়া থেকে বলপূর্বক ৭৭টি বসতি উচ্ছেদের অভিযোগ ওঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিমের বিরুদ্ধে। পৈত্রিক বসতবাড়ি হারিয়ে বর্তমানে এসব পরিবারের প্রায় ৪ শতাধিক মানুষ চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মগনামা ইউনিয়নের দক্ষিণ পশ্চিম অংশে কাঁকপাড়া এলাকায় ১৯৫১ সালে মনুষ্য বসতির উদ্যোগ নেন তৎকালীন জমিদার আবদুল আজিজ চৌধুরী। সেখানে ১৯৫৪ সালে ৩ একর ৪২ শতক জমি নিয়ে বসতভিটে স্থাপন করেন তার পুত্র জিল্লুল করিম চৌধুরী। সে সময় মগনামার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন কাঁকপাড়া গিয়ে বসতি স্থাপন শুরু করেন। ১৯৬০ ও ১৯৯১ সালে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা পরবর্তী ঝুঁকি অনুধাবন করে সাইক্লোন শেল্টারের জন্য এক একর জমি দান করেন জিল্লুল করিম চৌধুরী। সে জমিতে একটি সাইক্লোন শেল্টার ও বিদ্যালয়ের স্থাপনের জন্য এক কানি জমি দান করেন তিনি। ১৯৯৬ সালে সে জমিতে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। যা পরে সরকারীকরণ করা হয়। দীর্ঘ ৫০ বছরের অধিক সময় ধরে এ পাড়ায় বসবাস করে আসছিল অর্ধশত পরিবার। পরবর্তী সময়ে কাঁকপাড়ার পাশে গড়ে ওঠে জালিয়াপাড়া নামের আরেকটি পাড়া। মাস খানেক আগে জোরপূর্বক ভাবে এ দুইটি গ্রামের বসতি গুলো উচ্ছেদ করে দেন মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম।
কাঁকপাড়ার বাসিন্দা নাজির হোসেন প্রকাশ নন্না মিয়া বলেন, শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে কাঁকপাড়া ও জালিয়াপাড়াকে মগনামার মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়ার মিশনে নামে। সর্বপ্রথম নিধনে নামেন কাঁকপাড়া গ্রামের স্থপতি জিল্লুল করিম চৌধুরী পরিবারের সদস্যদের। ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল রাতে কক্সবাজারের একটি হোটেল থেকে ডিবি পুলিশের মাধ্যমে আটক করানো হয় জিল্লুল করিম চৌধুরীর পুত্র ও মগনামার সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুছ চৌধুরীকে। পরে তাকে কারাগারে পাঠায় ডিবি পুলিশ। ইউনুছ চেয়ারম্যান কারাগারে থাকাকালীন সময়ে ১০৭ একরের চিংড়ি ঘেরটি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দখল করে নেয় চেয়ারম্যান ওয়াসিম। এবিষয়ে ইউনুছের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বাদী হয়ে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। এতে ওয়াসিম চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করা হয়। এ মামলায় চেয়ারম্যান ওয়াসিমসহ অপর আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই।
তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় প্রায় ৯মাস কারাভোগের পর মুক্তি পেলে ২০১৮সালের ১২জানুয়ারি মগনামা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ইউনুছ চেয়ারম্যানকে গণসংবর্ধনা দেয় মগনামার সর্বস্তরের জনগণ। গণসংবর্ধনায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতারা আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের নিধন না করার জন্য ওয়াসিম চেয়ারম্যানকে হুশিয়ারি দেন। ১৩ জানুয়ারি বাড়ী থেকে তুলে এনে ইউনুছ চেয়ারম্যানকে হত্যাচেষ্টা চালায় ওয়াসিম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। একইদিন তৎকালীন কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এর পরদিন থেকে নিরাপত্তার জন্য ইউনুছ চেয়ারম্যানের কাঁকপাড়ার বাড়ীতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ পাহারা থাকা মাঝেও রাতে ইউনুছ চেয়ারম্যানের বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এসব ঘটনায় পেকুয়া থানায় দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। ওয়াসিমকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন পিবিআই। মগনামা ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুছ চৌধুরী বলেন, পৈত্রিক বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দিয়েছে বিএনপি নেতা ওয়াসিম চেয়ারম্যান। চারতলা ফাউন্ডেশনের একতলা দালান বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, আমি ২০০২ সালে শতকরা ৬১ভাগ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে নয় বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করি। সে সময় আমি বৃহত্তর মগনামা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছিলাম, ১৯৯৮ সালে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, এরপর পেকুয়া সাংগঠনিক থানা যুবলীগের প্রথম কমিটির ১নং যুগ্ম আহবায়ক হই। এছাড়াও ২০০৩ সালে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রথম পূর্ণাঙ্গ কমিটির ২নং যুগ্ম সম্পাদক, সর্বশেষ ২০১৪ সালের উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে সদস্য নির্বাচিত হই। কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে বিএনপি থেকে নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধির হাতে আমি চরম নির্যাতিত। ওয়াসিম চেয়ারম্যান ডিবি পুলিশের মাধ্যমে আমাকে অস্ত্র ইয়াবা দিয়ে ফাঁসায়, পরে সন্ত্রাসী বাহিনী সাথে নিয়ে আমার চিংড়ি ঘের জবরদখল সে, কারামুক্তি পেলে আমাকে হত্যাচেষ্ঠা চালায় সে। কাকপাড়া এলাকার বাসিন্দা, মৃত মাহমুদুল করিমের ছেলে কামাল হোসেন ও বাদশা মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ মানিক বলেন, বংশ পরম্পরায় আমরা কাকপাড়ায় বসবাস করে আসছি। সম্প্রতি চেয়ারম্যান ওয়াসিমের অনুগত সন্ত্রাসীরা ৭৭টি পরিবারকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে দিয়েছে। প্রাণের ভয়ে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। তারা উচ্ছেদ হয়ে বেড়িবাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে চরম মানবেতর দিনযাপন করছে।
মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম বলেন, কাঁকপাড়া ও জালিয়াপাড়ার বাসিন্দাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়ে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। কারও উপর জোরজবরদস্তি করা হয়নি।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈকা সাহাদাত বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ কাউকে বসতি থেকে উচ্ছেদের এখতিয়ার রাখে না। মগনামা ইউনিয়নের কাঁকপাড়া ও জালিয়াপাড়ার বাসিন্দাদের উচ্ছেদের বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।

পাঠকের মতামত: