ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

পেকুয়ার অবৈধ ১৪টি স’মিল গিলে খাচ্ছে সরকারী বনাঞ্চল! নিরব প্রশাসন, বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বিভিনস্থানে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অবৈধ স’মিল। এর মধ্যে বিশেষ করে পেকুয়া বাজারে গড়ে উঠা অবৈধ ৩টি সমিলই বনাঞ্চলের গাছ গিলে খাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগের ছাড়পত্র ও বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ১৪টিরও বেশি স’মিল। কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও নজরদারী না থাকায় উপজেলার যত্রতত্র গড়ে উঠেছে এ সব স’মিল। ফলে পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকিতে পড়ছে। সেসাথে উজার হচ্ছে পরিবেশবান্ধব সরকারী বনাঞ্চলের গাছপালা।

জানা যায়, স’মিল স্থাপনের জন্য বন বিভাগের লাইসেন্স প্রাপ্তির পর নিতে হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। কিন্তু পেকুয়ার প্রায় ১৪টি স’মিলের একটিও পরিবেশ ও বনবিভাগের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। এভাবে অনুমতি ছাড়া যত্রতত্র স’মিল স্থাপনের কারণে হুমকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। স’মিল লাইসেন্স বিধিমালা ২০১২-র আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা রয়েছে, করাত-কল স্থাপন বা পরিচালনার জন্য লাইসেন্স ফি বাবদ ২০০০ (দুই হাজার) টাকা “১/৪৫৩১/০০০০/২৬৮১ (বিবিধ রাজস্ব ও প্রাপ্তি)” খাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বা যে কোন সরকারি ট্রেজারীতে জমাপূর্বক উহার ট্রেজারী চালান আবেদনপত্রের সহিত সংযুক্ত না করিলে আবেদনপত্র গ্রহণযোগ্য হইবে না।

সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান ও জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থানের ২০০ মিটারের মধ্যে স’মিল স্থাপন করা যাবে না। বিধিমালায় আরো বলা আছে, এ আইন কার্যকর হওয়ার আগে কোনো নিষিদ্ধ স্থানে স’মিল স্থাপন করা হয়ে থাকলে আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। যদি তা না করা হয় তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওইসব কল বন্ধের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু আইন আছে, তা পেকুয়ায় প্রয়োগ নেই।

সরেজমিন দেখা যায়,পেকুয়া উপজেলা বৃহত্তম পেকুয়া বাজারে দীর্ঘদিন ধরে তিনটি, পেকুয়া ছড়া পাড়া বাজারে দুইটি, বাররবাকিয়া বাজার ও আশেপাশের এলাকায় ২টি, টইটং বাজারে ১টি, হাজী বাজারে ২টি, মৌলভী বাজারে ১টি, রাজাখালী আরবশাহ বাজারে ২টি, মগনামায় ১টি সমিলে অবৈধভাবে গাছ চিরাইয়ের কাজ অব্যাহত থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগ কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সমিল গুলো পরিবেশ বন বিভাগের ছাড়পত্র ও বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই অবৈধভাবে চলছে।

লাইসেন্স না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে এক স’মিল ব্যবসায়ি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, লাইসেন্সের জন্য টাকা কাগজ পত্র সবই দিয়েছি কিন্তু বন বিভাগ কর্মকর্তার উদাসীনতায় আমার ফাইলটি হারিয়ে ফেলেছে নতুন করে করতে হলে ১০ হাজার টাকা লাগবে বলে জানিয়েছেন। এমন দুর্নীতির কারণে অধিকাংশ স’মিল মালিক লাইসেন্স করতে পারছেনা তাই আজ বড় ধরনের রাজস্ব হারাচ্ছেন সরকার।

এছাড়া পেকুয়া বাজারের দুইটি স’মিলের পাশে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্টান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০০ গজ দুরের আইন থাকলেও এসব সমিল বন্ধেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা প্রশাসন। টইটং বাজাওে স্থাপিত অবৈধ সমিলের পাশেই রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্টান, রাজাখালী আরব শাহ বাজারের অবৈধ দুই সমিলের পাশেই রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্টান। পেকুয়া ছড়া পাড়া বাজার ষ্টেশনে মগনামা-বানিয়ারছাড়া সড়কের পাশেই রয়েছে অবৈধ সমিল।

অন্যদিকে, আইনের প্রয়োগ না থাকায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার আগে-পরে কল চালানো নিষেধ হলেও তা মানছেন না করাতকল মালিকরা। গভীর রাত পর্যন্ত এসব কলে কাঠ কাটা হচ্ছে। কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এসব কলে অবৈধভাবে চোরাই কাঠও কাটা হচ্ছে। এতে শব্দদূষণসহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। হুমকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপকূলীয় বন বিভাগের মগনামা বিটের কর্মকর্তা মো: নিজাম উদ্দিন জানান, তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। তিনি জানান, যাদের লাইসেন্স নেই বা ট্রেড লাইসেন্সকে যারা স’মিলের লাইসেন্স মনে করছেন, তাদের বোঝানো হচ্ছে। পেকুয়ার সবকটি সমিল অবৈধভাবে চলছে বলে তিনি জানান।

চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কোনোভাবেই স’মিল চালানোর নিয়ম নেই। এমনকি তাদের ছাড়পত্র ব্যতিরেকে এসব কলে বিদ্যুত সংযোগও অবৈধ বলে গণ্য হবে। তবে এ নিয়ম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। শিগরিরই অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ ও মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে তিনি জানান।

পাঠকের মতামত: