ঢাকা,শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

নৌকার সেই বিদ্রোহীরা শেষমেশ ক্ষমা পেলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক :: চলতি বছর অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে কক্সবাজার জেলায় যেসব আওয়ামীলীগ নেতা নির্বাচন করেছেন তারা শেষমেশ ক্ষমা পেলেন। নৌকার বিদ্রোহী হয়ে দাঁড়িয়ে যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শুরুতে শাস্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু সেদিকে না গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের শেষবারের মতো ক্ষমা করে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

কক্সবাজার জেলার সদর, রামু, চকরিয়া, টেকনাফ ও মহেশখালী উপজেলায় যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন ইতোমধ্যে তাদের ইমেইল ও চিঠি মারফত ক্ষমা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে। শাস্তির মুখোমুখি হয়েও শেষ পর্যন্ত ক্ষমা পাওয়া জেলার নেতারা হলেন-কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নুুরুল আবছার, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাফর আহমদ, টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আলম, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল, মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শরীফ বাদশা এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী।

২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগে ‘সাধারণ ক্ষমা’র এই ঘোষণা পেলেন নৌকার বিদ্রোহীরা এমনটাই জানিয়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন-কক্সবাজার জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় আড়াই হাজার বিদ্রোহী প্রার্থীকে ইমেইল ও চিঠি দিয়ে ক্ষমা করার কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কক্সবাজার সদর উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল আবছার নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েলের কাছে হেরে যান তৃতীয় স্থান নিয়ে। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃতীয় স্থান পান। তবে সেখানে নির্বাচিত হয়েছেন আরেক বিদ্রোহী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি নুরুল আলম। অন্যদিকে রামু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও রামু উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রিয়াজুল আলমকে হারিয়ে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল। মহেশখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ হোছাইন ইব্রাহিমকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন বড় মহেশখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শরীফ বাদশা।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী। তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করেন।

তাছাড়া পেকুয়া উপজেলায় আওয়ামীলীগের প্রার্থী আবুল কাসেমকে হারিয়ে নির্বাচিত হন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম (অবশ্যই ইতোমধ্যে একটি মামলায় তিনি চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন এবং ওই চেয়ারম্যান পদ শূণ্য ঘোষণা করা হয়েছে)।

এদিকে ক্ষমা পাওয়ার বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী বলেন-এই সংক্রান্ত একটি চিঠি আমি হাতে পেয়েছি। এটির জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কারণ তিনি তৃণমূলের ত্যাগি নেতাদের মূল্যায়ন করেছেন। ওই চিঠি ভবিষ্যতে নৌকার বিরুদ্ধে না যাওয়ার বিষয়ে সর্তক করা হয়েছে বলে জানান চেয়ারম্যান সাঈদী।

রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল এবং টেকনাফ উপজেলা যুবলীগ সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলমও এই সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছেন বলে শুক্রবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য-গত ৫ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন, বিদ্রোহীদের পক্ষ নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিদ্ধান্ত হয়, যেসব এমপি-মন্ত্রী নৌকার বিরোধিতা করেছেন বা করবেন, তাদের আগামীতে আর নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হবে না।

এরপর গত ১২ জুলাই সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।

এছাড়া নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে যেসব মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতারা কাজ করেছেন, তাদেরও কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে বিদ্রোহী সব প্রার্থীকেই কেন্দ্র থেকে কারণ দর্শাওয়ের চিঠি দেওয়া হয়।

পরে কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে বিদ্রোহী সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পাঠকের মতামত: