ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ার ৫১১২ একর চিংড়ি জমি লাঠিয়াল বাহিনীর দখলে, ১০ হাজার ভূমিহীন পরিবারের বসবাস খোলা আকাঁশের নীচে

জাকের উল্লাহ চকোরী, নিজস্ব প্রতিবেদক ::
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার চিংড়িজোন খ্যাত রামপুর মৌজার ৫১১২ একর চিংড়ি জমি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে দীর্ঘদিন ধরে জবর দখল করে রেখেছে একদল লাঠিয়াল বাহিনী। এ সমিতির আওতাভুক্ত রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতি লিমিটেড(রেজিষ্ট্রেট নং ২৩৯৯/৭২(চট্ট)’র ১০ হাজার ভুমিহীন পরিবার ৫০ বছর ধরে আইনী লড়াই করেও জমি তাদের অনুকুলে বুঝে না পাওয়া এখন তারা নিঃশ্ব হয়ে অনেক ভূমিহীন পরিবার মানবেতর ভাবে খোলা আকাঁশের নীচে বসবাস করছে। এ ব্যাপারে সমিতির সভাপতি আবু জাফর প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগও পাঠিয়েছেন।
ভুমিহীনদের লিখিত অভিযোগে দাবী করা হয়েছে, জবর দখলকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কক্সবাজার জেলা ও চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনকে উচ্চতর আদালতের নির্দেশ অনুয়ায়ী ভূমিহীনদের মাঝে তাদের প্রাপ্য জমি দখল বুঝিয়ে দেয়ার জন্য বারংবার নির্দেশ দেয়ার পরও তা কার্যকর হচ্ছেনা ।আজ  ১০অক্টোবর সমিতির সভাপতি আবু জাফর স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এক লিখিত অভিযোগে এ তথ্য জানিয়েছেন।

ভূমিহীন পরিবারদের পক্ষ থেকে সভাপতি আবু জাফর আরো জানান, তাদের পক্ষে সর্বশেষ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং ১০৯৬২/১২, ৬০৪৭/১৮ এবং কনট্রেম্প পিটিশন নাম্বার ২৬১/১৭ এর আদেশ বাস্তবায়নের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়। পরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (রাজস্ব শাখা) থেকে স্বারক নং ০৫.২০.২২০০.১২৮.২৭.০০৬.২০১৯ তারিখ ০২-০৯-২০১৯ মূলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ১৫ দিনের মধ্যে মহামান্য হাইকোটের আদেশ বাস্তবায়ন এবং নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিবেদন প্রদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, চকরিয়ার রামপুর মৌজার আর.এস ১০৮৩,১০৮৪, ১০৮৬, ১১১০, ১১১১, ১১১২ অধিনে সর্বমোট ৫১১২ একর চিংড়ি জমি ১০ হাজার ভুমিহীন সদস্যদের নামে সি.এস ও এম.আর.আর খতিয়ান রেকর্ড ভুক্ত রয়েছে। পরবর্তীতে ১৯০৩ সালে চকরিয়া সুন্দরবন করার উদ্দেশ্যে বিনা নোটিশে অধিগ্রহণ করে বন বিভাগের নিকট এ জমিসহ অন্যান্য জমি হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু বন বিভাগ চকরিয়া সুন্দরবন করতে ব্যর্থ হয়ে পরবর্তীতে ওই জমি গুলো মৎস্য বিভাগকে উন্নত মৎস্য খামার করার লক্ষ্যে ৫ বছর চুক্তি ভিত্তিতে হস্তান্তর করেন। কিন্তু মৎস্য বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মৎস্য খামার না করে বিভিন্ন ধনীদের নামে দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তিতে মৎস্যঘের ইজারা দেয়। যা সরকারের সংবিধান বিধি মোতাবেক অপরাধ যোগ্য। পরবর্তীতে ভুমিহীনদের পক্ষ থেকে নিন্ম আদালত থেকে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোট বিভাগ পর্যন্ত সর্বআদালতে তাদের পক্ষে রায় হয়। ৫০ বছর ধরে আইনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে গিয়ে ভুমিহীনরা এখন নিঃশ্ব হয়ে পড়েছে। অনেক ভুমিহীন পরিবার খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কিন্তু ভুমিহীনদের পক্ষে একের পর এক রায় হলেও লাঠিয়াল বাহিনীর জবর দখল থেকে ভুমিহীনরা তাদের জমি এখনো পুনরুদ্ধার হয়নি।
ভূমিহীন পরিবারদের পক্ষ থেকে অভিযোগে বলা হয়েছে, এসব জমি গুলো বিভিন্ন প্রতিষ্টানসহ ৪৬৮ জন ভূমিদস্যূদের দখলে রয়েছে। তৎমধ্যে ড. ইউনুসের প্রতিষ্টিত গ্রামীণ ব্যাংকের নামে রয়েছে প্রায় ৩৮০ একর, জনৈক বাহার উদ্দিনের নামে ৯০ একর, সাহারবিলের এক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের নামে রয়েছে ২২০ একর, দলিল মিয়ার নামে প্রায় ৫২০ একর, ছলিম উল্লাহ’র নামে প্রায় ২০০একরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন ব্যক্তিরা মৎস্য বিভাগের সাথে অবৈধ যোগ সাজস করে সম্পূর্ন অবৈধ ভাবে এসব জমি ভোগদখলে রেখেছে। এ অভিযোগ রামপুর সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতি লিমিটেড’র সভ্যদের। এ ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পাঠকের মতামত: