ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

উখিয়ায় পুলিশের অভিযানে মিয়ানমারের MPT সীমসহ রোহিঙ্গা যুবক আটক

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া ::

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩২ টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা অবাধে স্বদেশী সিমকার্ড ব্যবহার করে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফে দেশটির বিভিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরের সিমকার্ড সচল থাকায় সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গা স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা খুন-নির্যাতন, মাদক সংশ্লিষ্টতা, প্রত্যাবাসনে একজনও রাজি না হওয়া এবং রোহিঙ্গাদের মহাসমাবেশের মতো নানা ঘটনায় দেশব্যাপী বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে শরণার্থী শিবির গুলোতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারী বাড়ানোর পাশাপাশি সরকার বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের থ্রি জি ও ফোর জি ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্ক সীমিত রাখার ঘোষণা দেয়।

ফলে এক মাস যাবৎ বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের দূর্বল নেটওয়ার্ক দিয়ে নিজেদের মধ্যে সক্রিয় যোগাযোগ করতে না পেরে মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক নির্ভর হয়ে পড়েছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। এতে করে স্থানীয়রা মোবাইল নেটওয়ার্ক ভোগান্তিতে পড়লেও আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে ঠিকই মিয়ানমার থেকে সিমকার্ড এনে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।

বুধবার কুতুপালং মার্কেটের সামনে থেকে মিয়ানমার থেকে আনা এমপিটি নামে মোবাইল অপারেটরের ২৩০টি সিমকার্ডসহ এক রোহিঙ্গা যুবককে আটক করেছেন উখিয়া থানার পুলিশ।

আটককৃত রোহিঙ্গা যুবক হলেন- উখিয়ায় আশ্রিত বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের ক্যাম্প-১ এর আওতাধীন ব্লক-এ৩২ এর নুরুল আলমের ছেলে মোঃ করিম (৩০)।

পুলিশ জানায়, বুধবার (০২ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল মনসুরের নির্দেশে এসআই প্রভাত কর্মকার ও এএসআই ফকরুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে ক্যাম্পে বিক্রি করতে আসা ২৩০টি মিয়ানমারের সিমসহ রোহিঙ্গা যুবক আটক করতে সক্ষম হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রমতে- মিয়ানমার থেকে সুকৌশলে রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের জন্য সিমকার্ড গুলো আনা হয়েছিল।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে দেশীয় মোবাইল সিম ব্যবহার করছে। বিটিআরসি সম্প্রতি নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণসহ নানা উদ্যোগ নেয়ায় রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সিম ব্যবহার করছে। এসব সিমের উচ্চ নেটওয়ার্ক সম্পন্ন হওয়ায় সহজে উভয় দেশের সীমান্তের অনেক ভেতরে কাজ করছে বলে জানা গেছে।

উখিয়া থানার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল মনসুর বলেন- মিয়ানমার থেকে সিমকার্ডগুলো নিয়ে আসা এক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। আটক রোহিঙ্গা যুবককে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং তার বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-(২) উখিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন- টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় শরণার্থী শিবিরগুলোতে নানা ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড রোধে বাংলাদেশ সরকার সংশ্লিষ্ট এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক থ্রি জি ও ফোর জি বন্ধ করার পাশাপাশি নেটওয়ার্ক কমিয়ে দূর্বল করে দেওয়া হয়েছে। তবে বেশ কদিন যাবত রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ সক্রিয় রাখতে মিয়ানমারের সিমকার্ড এনে এখানে ব্যবহার করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ছিল।

এদিকে গত ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসন ভেস্তে যাওয়ায় ও ২৫ আগস্ট লাখো রোহিঙ্গার মহাসমাবেশের আয়োজনের অন্যতম মাধ্যম রোহিঙ্গাদের হাতে মোবাইল ফোন। বিষয়টি পর্যালোচনা করে সরকার ক্যাম্পে নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখে। মিয়ানমারের সীমান্তে সে দেশের নেটওয়ার্ক টাওয়ার থাকায় রোহিঙ্গারা টেকনাফে অবস্থান করেও মিয়ানমারের মোবাইল সিম ব্যবহার করতে শুরু করে।

অন্যদিকে নেটওয়ার্ক কমিয়ে দেয়ায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাসহ স্থানীয়দের যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে। নেটওয়ার্ক কমিয়ে না দিয়ে রোহিঙ্গাদের হাত থেকে মোবাইল উদ্ধার করার দাবি জানান এলাকাবাসী।

কায়সার হামিদ মানিক

পাঠকের মতামত: