ঢাকা,শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পুলিশে নিয়োগ পাওয়া মানে রাতারাতি মহারতি বনে যাওয়া নয় : এসপি মাসুদ

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::  বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ পাওয়া মানে রাতারাতি ভিআইপি কিংবা রতি-মহারতি বনে যাওয়া নয়। পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ পেয়ে অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়ে জীবন যাত্রার মানকে উঁচুস্থরে নিয়ে যাওয়ার মানসিকতাকে পরিহার করতে হবে। সততা, নৈতিকতা, দেশপ্রেম, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবিক গুনাবলী দিয়ে পেশাদারিত্বের সাথে টিআরসিদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সময় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সর্বপ্রথম পুলিশের উপর বর্বরোচিত হামলা করেছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম প্রহরে পুলিশ বাহিনী সে হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য শহীদ হয়েছিল, পুলিশ বাহিনীর অসংখ্য গর্বিত সদস্য। আবার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতা ও পরিবারের সদস্যদের উপর যখন মর্মান্তিক হামলা হয়েছিল তখনো সেখানে দায়িত্বপালনরত বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তুলে তারা শহীদ হয়েছেন। এখন চলছে সেই শোকাবহ বেদনাদায়ক আগষ্ট মাস। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ও আগষ্টের বেদনাবিধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে দেশ ও জাতির সুরক্ষায় নিজেদেরকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে দেশ গড়ায় ঝাপিয়ে পড়ে হবে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী এখন আর মান্দাত আমলের পুলিশ বাহিনী নেই। পুলিশ বাহিনীকে আগে ন্যূনতম বেতন ও সামান্য রেশন সুবিধা দেয়া হতো। ফলে পুলিশের সদস্যের সংসারে সবসময় টানাপোড়ন লেগে থাকতো। এখন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে বর্তমান সরকার আধুনিকায়ন করেছে। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাহিনীতে পরিণত হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। বেতন-ভাতা-সম্মানী, অবকাঠামোগত সুবিধা, যানবাহন সুবিধা সহ আরো অনেক সুবিধাদি বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এখন জাতিসংঘের বিভিন্ন মিশনে অংশ নিচ্ছে। গৌরবময় কর্মকান্ডে পুলিশ বাহিনীর অংশীদারিত্ব এখন বেশ লক্ষনীয়। তাই পুলিশ বাহিনীতে সৎ, দায়িত্বশীল ও নীতিবান সদস্যের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে পুলিশের ভাবমূর্তির ক্রামাগত উন্নয়ন হতে যাচ্ছে। সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত টিআরসি নিয়োগের বিষয়ে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. ইকবাল হাসান মাহমুদ বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) কে অভিনন্দন পত্র দিয়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর নতুন-পুরাতন সকল সদস্যের জন্য নিঃসন্দেহে এটা একটা সুখের খবর ও গর্বের বিষয়।

গত ২ জুলাই কক্সবাজার জেলা পুলিশের উদ্যোগে নতুন রিক্রুট করা ৩৮৬ জন ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) ও তাদের অবিভাবকদেরকে কক্সবাজার পুলিশ লাইনে প্রদত্ত সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম একথা বলেন।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকালে পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠানে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, এভাবে দুর্নীতি মুক্ত টিআরসি নিয়োগ দেয়া আমার পক্ষে কখনো সম্ভব হতোনা যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, আইজিপি ডক্টর মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) ও চট্টগ্রাম রেন্ঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার) পিপিএম এর যথার্থ নির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা না পেতাম। তিনি কক্সবাজার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, সুযোগ্য আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী (বিপিএম) ও চট্টগ্রাম রেন্ঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার) পিপিএম এর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। একইভাবে কক্সবাজার জেলা পুলিশের সকল সদস্য টিআরসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেছে বলেই কোন দালাল, ঘুষ, দুর্নীতি ছাড়া স্বচ্ছতা রক্ষা করে টিআরসি নিয়োগ দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে বলে এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

তিনি টিআরসি নিয়োগ প্রাপ্তদের উদ্দ্যেশে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অবিচার, অন্যায়, জুলুম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নতুন সমাজ বির্নিমানে শপথ নিতে আহাবান জানান। তিনি বলেন, দুর্নীতি করে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পেলে, সে নিয়োগে কাজ করার আন্তরিকতা থাকেনা, দেশের প্রতি মমত্ববোধ থাকেনা, বাহিনীর সুনামের প্রতি লক্ষ্য থাকেনা। এখন শুধুমাত্র ১০৩ টাকায় টিআরসি নিয়োগ পাওয়ায় তাদের সততা ও সাহসিকতা থাকবে বেশী। তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিধি বেড়ে গেছে অনেক।অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আদিবুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) নিহাদ আদনান তাইয়ান, সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) বাবুল বনিক, সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজী মতিউল হক, কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক ও দৈনিক কালেরকন্ঠের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের চৌধুরী, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার পিপিএম বক্তব্য রাখেন। সম্বর্ধিত সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত টিআরসি’দের পক্ষে কুতুবদিয়ার তারেক আজিজ, উর্মি দে, রূপসী দেবী তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে এবং নিয়োগপ্রাপ্ত টিআরসি’র মা’দের পক্ষে অনুভূতি প্রকাশ করেন, রেহানা বেগম ও পলি বড়ুয়া বক্তৃতা করেন। সম্বর্ধনা সভায় নিয়োগপ্রাপ্ত সকল টিআরসি কে ফুল দিয়ে সম্বর্ধনা জানানো হয়। শুধুমাত্র ১০৩ টাকায় টিআরসি নিয়োগ পাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সাবেক গার্মেন্টসকর্মী কুতুবদিয়াউপজেলার তারেক আজিজ আবেগে কেঁদে দিয়ে বলেন, “আমি গার্মেন্টসে নামমাত্র বেতনে কাজ করতাম। সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত কাজ করে যা পেতাম তানিয়ে আমার সংসার চলতোনা। শুধুমাত্র ১০৩ টাকা ব্যয় করে এখন পুলিশে চাকুরী পাওয়ায়, আমার পরিবারে ব্যাপক আশার সন্ঞ্চার হয়েছে। আমি এজন্য প্রধানমন্ত্রী, আইজিপি ও কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মহোদয়কে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।” আনন্দ ও আর আবেগের কান্নায় আমি আর কথা পারছিনা বলে তারেক আজিজ তার কথা শেষ করেন। টিআরসি নিয়োগ পাওয়া রূপসী দেবী তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন-“এটা আমার জন্য মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। সৃষ্টকর্তা যে, আমাদের মতো গরীব পরিবারের মেয়েকে বিনা খরছে পুলিশ বাহিনীর চাকুরীর ব্যবস্থা করেছেন এটা আমার জন্য বিশাল এক পাওনা। এ প্রাপ্তিতে আমার পুরো পরিবার কক্সবাজারের এসপি স্যার সহ পুলিশ বাহিনীর প্রতি সারাজীবন কৃতার্থ থাকবো। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে রেহেনা বেগম নামক একজন অভিবাবক বলেন, আমার সন্তান পুলিশ বাহিনীর সদস্য হিসাবে নিয়োগ পাবে, সেটা আমার কল্পনারও বাহিরে ছিলো। কিন্তু টিআরসি হিসাবে আমার সন্তান নিয়োগ পাওয়ায় আমি ও আমার পরিবার দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছি। পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে আমাদের খুব ইতিবাচক ধারণা জম্মেছে। তারমতে, সাধারন মানুষের কাছে পুলিশ সম্পর্কে ধারণা ক্রমাগত পাল্টাতে শুরু করেছে। যা দেশ ও নতুন প্রজন্মের জন্য একটা আশার বিষয়। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যদ্বয় ও অন্যান্যরা তাদের বক্তব্যে বলেন, সারা বাংলাদেশে এবারের টিআরসি নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা ও এ বিষয়ে কঠোর মনোভাবের কারণে তা সম্ভব হয়েছে। যা কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ বাস্তবায়ন করেছে। এজন্য বক্তরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম এর কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। পুরো সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানটি সততা, নৈতিকতা ও আন্তরিকতার মোহে আবদ্ধ ছিল।

পাঠকের মতামত: