ঢাকা,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

ইজারার নামে কোরবানি হাটে চাঁদাবাজি

এম. বেদারুল আলম ::  পিএমখালীর নুরুল ইসলাম খরুলিয়া কোরবানের হাটে গরু বিক্রি করতে ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন গতকাল বুধবার। একটি গরু ৮৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে রশিদ কাটতে গিয়ে পড়েন বিপাকে। বিক্রেতার ১৫০০ টাকা এবং ক্রেতার ১০০০ টাকা মোট ২৫০০ টাকার রশিদ দেন ইজারাদারের হাসিল আদায়কারি। অনেক বাক-বিতন্ডার পর ও রেহায় পায়নি উভয়ে। হাসিল না দিলে গরুর রশি ধরে রাখেন ইজারাদারের লোক।
খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গরু বিক্রেতার সাথে ইজারাদারের তুমুল ঝগড়া। ৭০ হাজার টাকায় গরু বিক্রি করে ২৫০০ টাকা হাসিল দিতে অপারগ গরু ক্রেতা বিক্রেতা। এটা দেখার কেউ কি নেই প্রশ্ন বিক্রেতার।
জেলার অন্যতম শীর্ষ কোরবানের হাট খরুলিয়া বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার পকেট কাটছে ইজারাদার সিন্ডিকেট। জেলার কোথাও কোন কোরবানের হাটে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হাসিল আদায়ের রেকর্ড শুধু এ বাজারে। ক্ষেত্র বিশেষে ৩৫০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত। অনেক বিক্রেতা এটাকে চাঁদাবাজির সাথে তুলনা করছেন। প্রশাসনের নজরদারি থাকলে কখনো এটি করা যেত না এমনটাই মনে করেন বাহারছড়া থেকে গরু কিনতে আসা আবু আহমেদ। খরুলিয়া বাজারটি ইজারা নিয়েছেন স্থানীয় চেয়ারম্যানপাড়ার হাজী বখতিয়ার আহমদের পুত্র আবদুল হান্নান শালিক ও তার সিন্ডিকেট। ১ বছরের জন্য বাজারটি ইজারা হয়েছে ২ কোটি ৪৭ হাজার টাকায়। এত টাকা  ১ বছরের মধ্যে তুলতে গিয়ে পিষে মারছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। প্রায় অর্ধশত হাসিল আদায়কারি বাজারে ঘুরে অনেকটা চাঁদাবাজির স্টাইলে হাসিল আদায় করছে বলে অভিযোগ একাদিক ক্রেতা-বিক্রেতার। পুরো বাজারটি সড়কের উপর বসার কারনে প্রতি বছরই সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। মহাসড়কের উভয়পাশে হাটের সময় যানজট তীব্র আকার ধারন করে। আটকে থাকে দুরপাল্লার বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন।
বাজারের অনিয়ম ও অতিরিক্ত ইজারা আদায়ের ব্যাপারে স্থানীয় মেম্বার মোঃ শরীফ উদ্দিন জানান, ইজারা বেশি হওয়ার কারনে হাসিল বেশি নিতে হচ্ছে। তা না হলে কিভাবে পুষাবে বলুন। তিনি বাজারটির উন্নয়নের জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। অনেকে উক্ত বাজারে মেম্বার শরীফের লগ্নি আছে এবং তিনি ইজারাদারের সিন্ডিকেটের সদস্য দাবি করে বলেন মেম্বার কখনো চাইবেনা হাসিলের টাকা কম নিক। বেশিরভাগ ক্রেতা-বিক্রেতা খরুলিয়ার কোরবানের হাটে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর জন্য সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সদর উপজেলার অপর গুরুত্বপূর্ণ হাট ঈদগাঁও বাজারটিতে এবছর ইজারা না হওয়ায় সরাসরি খাস কালেকশান করা হচ্ছে। ঈদগাও ইউনিয়নের তহশিলদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে খাস কালেকশনে। সদরের অপর কয়েকটি বাজার পিএমখালী নুর মোহাম্মদ চৌধুরীর বাজার , চেরাংঘর বাজার, খুরুস্কুল রাস্তার মাথা বাজার, তেতৈয়া বাজার, ইসলামপুর বাজারসহ কয়েকটি স্থানীয় বাজার এখনো জমে উঠেনি। কয়েকদিনের মধ্যে বিকিবিকি জমবে বলে মনে করেন স্থানীয় ইজারাদাররা।
খরুলিয়া বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় বিষয়ে সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা এইচএম মাহফুজুর রহমান বলেন- আমরা তো ইজারার সময় নির্ধারন করে দিয়েছি কত টাকা নেবে। এর বাইরে যদি বেশি নেয় তাহলে প্রমান পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া আমি এবং সদরের সহকারি কমিশনার ভূমিসহ আমরা বাজার তদারকি করতে গিয়েছিলাম। আবার ও বাজার তদারকিতে যাবেন বলে তিনি জানান। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রমান পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ও জানান তিনি।
অপরদিকে রামুর বৃহত্তম কোরবানের হাট কলঘর বাজার ও মিঠাছড়ির কাটিরমাথা বাজারে ও আদায় হচ্ছে অতিরিক্ত হাসিল। চাকমারকুল বাজারটি এ বছর ইজারা হয়েছে ২৭ লাখ ৭ হাজার ৭শ টাকায় এবং কাটিরমাথা বাজার ইজারা হয়েছে ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকায়। চাকমারকুল কলঘর বাজারে ক্রেতা বিক্রেতা থেকে ৭০ হাজার দামের গরু বিক্রি করলে হাসিল আদায় করছে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা যেটি ক্রেতা-বিক্রেতা থেকে চাঁদাবাজির শামিল। হাসিল নিয়ে ইজারাদারের লোকের সাথে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে অনাকাংখিত ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে চাকমারকুল বাজারের ইজারাদারের লোক পরিচয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক (মোবাইলনং ০১৮১২ ৮১৭২৩০) হাসিল আদায়কারি জানান, আমি এ ব্যাপারে কত টাকা নিচ্ছে বা কম বা বেশি নিচ্ছে তা বলতে পারবনা। এটি জানবে সিঙ্গার রহিম। আপনি ওনার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করেন কারণ ওনি ইজারাদার। ইজারাদার খরুলিয়ার মুন্সিরবিল এলাকার রহিম উদ্দিন প্রকাশ সিঙ্গার রহিমের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে মোবাইল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
চামকারকুল বাজার ও কাটির মাথা বাজারে অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের ব্যাপারে রামু উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা প্রনয় চাকমা বলেন- কোন অবস্থাতে ইজারাদারেরা বেশি টাকা নিতে পারবেনা। তাদের জন্য সরকারি নির্ধারিত মূল্যের বেশি নিলে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান। তিনি কোরবানের পশুর হাটে মনিটরিং জোরদার করবেন এমনটাই জানিয়েছেন।
সওয়াবের জন্য কোরবানের গরু কিনে ইজারার জন্য মন খারাপ করে বাড়ি ফিরতে নারাজ ক্রেতারা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইজারাদাররা ও পকেট কাটছে ক্রেতা-বিক্রেতার। অনেকে নিরবে সহ্য করে কোন রকমে ঝামেলা এড়াতে দাবিকৃত টাকা দিয়ে সারছে কোরবানের জন্য পশু ক্রয়। ফলে অনেকটা দায়সারাভাবে চলছে জেলার অধিকাংশ কোরবানের হাট। ক্রেতা-বিক্রেতাকে হয়রানি ও ইজারার নামে চাঁদাবাজি থেকে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে বাজার মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ধর্মপ্রাণ কোরবানিচ্ছুক মানুষ। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ জরুরি।

পাঠকের মতামত: